সাইফ-হৃদয়ের জোড়া ফিফটি, জয়ে শুরু বাংলাদেশের

টাইমস স্পোর্টস
4 Min Read
বাংলাদেশের জয়ের দুই নায়ক সাইফ হাসান ও তাওহিদ হৃদয়। ছবি:

জুবায়ের তানিন, দুবাই থেকে 

দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামটা একদম ঘেরা। মাথার ওপর খোলা আকাশ ছাড়া আশেপাশে খোলা জায়গা নেই। তাই দর্শকরা আওয়াজ তুললে পুরো স্টেডিয়াম চত্ত্বর একদম গমগম করে। শনিবার শ্রীলংকার বিপক্ষে সুপার ফোরের প্রথম ম্যাচে সাইফ হাসান আর তাওহিদ হৃদয়ের একেকটা শটের পর কাঁচঘেরা প্রেসবক্সে বসেও টের পাওয়া যাচ্ছিল শব্দের ডেসিবলের মাত্রা। 

গর্জন আর শব্দের ডেসিবলের পারদ উঠানামাও করছিল ম্যাচের পরিস্থিতির সাথে সাথে। শেষ ওভারে জাকের আলী বোল্ড হওয়ার পরে বলে শেখ মাহেদীও যখন ফিরলেন তখন থেকে থেকে কেবল লংকান সমর্থককদের উল্লাসই কানে আসছিল। তবে ইনিংস শেষ হওয়ার এক বল আগে যখন শর্ট থার্ডম্যানে বল ঠেলে নাসুম আহমেদ এক রানের জন্য ছুটে অন্য প্রান্তে চলে গিয়েছিলেন ততক্ষণে আবার গর্জে ওঠেন বাংলাদেশের সমর্থকেরা। সেই এক সিংগেলে জয় নিশ্চিত হলেও সাইফ আর হৃদয়ের জোড়া ফিফটিতে শ্রীলংকার দেয়া ১৬৯ রানের লক্ষ্য ১ বল হাতে রেখে ৪ উইকেটের জয়ে টপকে গেল বাংলাদেশ। সফল এই রান তাড়ায় ওপেনিং জুটি ব্যর্থ হলেও টপ ও মিডল অর্ডারের তিনটি দারুণ জুটিতে ম্যাচে ফিরেছিলেন লিটনরা। 

তবে এই ম্যাচের আগে সবচেয়ে বেশি চাপে ছিলেন যিনি, হৃদয়। এশিয়া কাপে টানা তিন ম্যাচে রান নেই তার ব্যাটে। তবে রানখরার চেয়ে বেশি সমালোচনা হচ্ছিল তার ব্যাটিং এপ্রোচ আর ইন্টেন্ট নিয়ে। বিশেষত যেভাবে ব্যাট করছিলেন আর তার শরীরী ভাষা ছিল চোখে লাগার মতো। শ্রীলংকার বিপক্ষে তার শুরুটা ছিল অমন ধীরস্থির। এর আগে ফিল্ডিংয়ে মিস করেছেন দুটো ক্যাচ। চাপের মাত্রাটা আরো বেড়ে গিয়েছিল কিনা, কে জানে। এর সাথে হৃদয়কে আরেকটু নড়বড়ে লাগছিল এক প্রান্তে সাইফ মেরে খেলছিলেন বলে। 

যদিও খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসতে সময় নেননি এই ডানহাতি ব্যাটার। শুরুটা দেখেশুনে করলেও দুনিথ ভেল্লাল্লাগেকে যেভাবে মিড উইকেট দিয়ে ছক্কাটা মেরেছেন, সেখান থেকেই শুরু হয়েছে হৃদয়ের ফিরে আসা। ১৫ তম ওভারে কামিন্দু মেন্ডিসকে মেরেছেন দুই চার ও এক ছক্কা। দুশমন্ত চামিরার স্লোয়ারে লেট কাটে আরো একটা চার মেরে নিজেকে নিয়ে গেছেন ফিফটির দুয়ারে। ১৫ ইনিংস পর টি-টোয়েন্টিতে ফিফটি পেয়েছেন। তবে চামিরার ফুলটস মিস করে এলবিডব্লিউ হওয়ার আগে ৩৭ বলে ৫৮ করেছেন এই ডানহাতি। 

এর আগে তার সাথে ৫৪ রানের জুটি গড়া সাইফ খেলেছেন তার ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস। পাওয়ারপ্লেতে ভেল্লালাগেকে স্টেপ আউট করে মারা ছক্কা, তাকেই ইনসাইড করে এক্সট্রা কভার দিয়ে উড়িয়ে মারা ছিল ৪৫ বলে ৫১ রানের ইনিংসের হাইলাইটস। হাসারাঙ্গাকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে শর্ট থার্ডম্যানে ক্যাচ দেয়ার আগে মেরেছেন চার ছক্কার সাথে দুই চার। হৃদয়ের সাথে বড় জুটি তো ছিলই, এর আগে দ্বিতীয় উইকেটে লিটনের সাথে ৫৯ রানের জুটি দলকে ফিরিয়েছে ম্যাচে। তানজিদ তামিম ফিরেছেন কোনো রান না করেই। যদিও এর প্রভাব ম্যাচে পড়তে দেয়নি সাইফ-লিটনের জুটি। 

প্রথম ইনিংসে ডেথ ওভারে তিনটি ক্যাচ ফেলেছে বাংলাদেশ,এর দুটোই হৃদয়ের হাত থেকে ফস্কেছে। অবশ্য শেষদিকে মোস্তাফিজুর রহমান আজ কাটার আর স্লোয়ায়রের কারিশমা নিয়ে না এলে শ্রীলংকার সংগ্রহ ১৮০-ও পেরিয়ে যেতে পারত অনায়াসে। বিশেষত দাসুন শানাকা যেভাবে উইকেটের চারপাশে শট খেলছিলেন, নাসুম আহমেদ-শরীফুল ইসলামরাও খুব বেশি সুবিধা করতে পারেননি আজ। যদিও মোস্তাফিজ ছিলেন নিজের চেনা ছন্দে। চার ওভার শেষ করেছেন ২০ রান দিয়ে তিন উইকেট নিয়ে, ছিল ১০টা ডট বলও।

পাওয়ারপ্লেতেও বাংলাদেশ পাত্তা পায়নি খুব একটা। পাথুম নিসাঙ্কা আর কুশাল মেন্ডিসের ওপেনিং জুটি ছিল ৪৪ রানের। অবশ্য এই রান তোলার গতিতে লাগাম টেনেছেন তাসকিন আহমেদ। তার গুড লেংথ বলে  এনে দিয়েছেন ব্রেক থ্রু। 

প্রথম চার ওভারে দাপট দেখানো ওপেনার পাথুম নিসাঙ্কা ফিরেছেন তাসকিনের বলে মিড উইকেটে সাইফ হাসানের হাতে ক্যাচ দিয়ে। এর আগে ৩ ছক্কা ও এক চারে ১৫ বলে ২৩ রান করেন এই ডানহাতি ওপেনার। এরপর দলীয় ১০০ রানের আগে প্রথম চার ব্যাটারকে হারালেও ব্যক্তিগত ৩৮ রানে জীবন পাওয়া শানাকার ব্যাটে বড় সংগ্রহের দিকে এগোয় শ্রীলংকা। ছয় ছক্কা ও তিন চারে ৩৭ বলে ৬৪ রান করেন এই ডানহাতি ব্যাটার। 

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *