যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার স্থানীয় সময় রোববার বিকেলে ফিলিস্তিনকে ‘স্বাধীন রাষ্ট্র’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দেবেন বলে জানিয়েছে বিবিসি।
গত জুলাইয়ে তিনি বলেছিলেন, সেপ্টেম্বরের মধ্যে ইসরায়েল যদি গাজায় যুদ্ধবিরতি ও স্থায়ী শান্তিচুক্তির অঙ্গীকার না করে, তবে যুক্তরাজ্য ইসরায়েলের পক্ষে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করবে। সম্প্রতি তিনি ফের হুঁশিয়ার করে বলেন, ‘জাতিসংঘের আসন্ন সাধারণ পরিষদের বৈঠকের আগে ইসরায়েলকে যুদ্ধবিরতি ও শান্তিচুক্তিতে অঙ্গীকার করতে হবে। নইলে যুক্তরাজ্য ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেবে।’
ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস ব্রিটেনের এ পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন। এর আগে তিনি স্টারমারের সঙ্গে বৈঠকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ভবিষ্যতে ‘স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের শাসন ব্যবস্থা’য় হামাসের কোনো ভূমিকা থাকবে না।

ব্রিটেন সরকারের এমন পদক্ষেপকে দেশটির পররাষ্ট্রনীতিতে বড় পরিবর্তন হিসেবে দেখছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা। ব্রিটেন বরাবরই ইসরায়েল-ফিলিস্তিন শান্তিচুক্তির অংশ হিসেবে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে আগ্রহ দেখিয়েছে।
ব্রিটিশ পার্লামেন্টের মন্ত্রীরা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘমেয়াদে ‘শান্তি প্রতিষ্ঠা’ করার নৈতিক দায়িত্ব থেকেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। পশ্চিম তীরে অবৈধ বসতি সম্প্রসারণ, নেতানিয়াহু সরকারের বিতর্কিত ই-ওয়ান প্রকল্পও ফিলিস্তিনকে স্বাধীন স্বীকৃতি দেওয়ার পেছনে প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে বলে জানিয়েছেন ব্রিটিশ মন্ত্রীরা।
দেশটির আইন ও বিচার বিভাগীয় মন্ত্রী ডেভিড ল্যামি বলেন, ‘পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের অব্যাহত দখলদারিত্ব ও সহিংসতা দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের সম্ভাবনাকে ধ্বংস করছে। এর থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়া এবং যুদ্ধ বন্ধ করে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা।’
ব্রিটেনের সরকারি সূত্রের বরাতে বিবিসির খবরে বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে গাজা সিটি দখলের উদ্দেশ্যে শহরটিতে হামলা ও অভিযান জোরদার করেছে ইসরায়েল। এতে অগণিত বেসামরিক নাগরিকের প্রাণহানি ঘটেছে। সেই সঙ্গে গাজায় দুর্ভিক্ষ, মানবিক সহায়তার জন্য কাতর ফিলিস্তিনিদের অসহায়ত্বের চিত্রকে ‘অসহ্য বেদনাদায়ক’ বলে উল্লেখ করেন কিয়ার স্টারমার।
তবে তার এমন সিদ্ধান্তে নাখোশ ইসরায়েলি সরকার, হামাসের হাতে জিম্মিদের পরিবার ও কয়েকজন কনজারভেটিভ রাজনীতিবিদ। স্টারমার সরকারের কড়া সমালোচনা করে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেন, ‘এই সিদ্ধান্ত “সন্ত্রাসবাদকে পুরস্কৃত” করতে যাচ্ছে।’

এর মধ্যেই জাতিসংঘের একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশনের গাজায় ‘গণহত্যা’ সংঘটনের প্রমাণ পেয়েছে। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক আইনে সংজ্ঞায়িত ‘গণহত্যার’ পাঁচটি ঘটনার মধ্যে অন্তত চারটিই গাজায় সংঘটনের প্রমাণ মিলেছে।
ওই প্রতিইবেদনে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে একটি জাতিসত্তার নিরপরাধ মানুষদের হত্যা করা, গুরুতর শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি সাধন, ধ্বংসের উদ্দেশ্যে বাস্তুচ্যুত করা এবং মানবেতর জীবনযাপনে বাধ্য করা, জন্ম প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণসহ বেশকিছু যুক্তিসঙ্গত প্রমাণ মিলেছে বলে দাবি করেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক জাতিসংঘ মানবাধিকার প্রধান নাভি পিল্লাই। তিনি গাজায় স্বাধীন তদন্ত কমিশনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
তবে জাতিসংঘের এই অভিযোগকে ‘ভ্রান্ত ও বিকৃত’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে নেতানিয়াহু সরকার। এমন পরিস্থিতিতে হামাসের হাতে জিম্মিদের পরিবারের সদস্যরা ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরাবর খোলা চিঠি লিখেছেন। ত্যারা অনুরোধ করেছেন ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্তটি পিছিয়ে দিতে। তাদের দাবি, এই ঘোষণার ফলে এখনও ৪৮ জন জিম্মির মুক্তির প্রচেষ্টা আরও জটিল হয়ে পড়েছে।
কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে এ নিয়ে মতবিরোধে জড়িয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও। তিনি সম্প্রতি যুক্তরাজ্য সফরে এসে ফিলিস্তিন প্রশ্নে ইসরায়েলের পাশে থাকার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন।