যুক্তরাষ্ট্রকে ‘উপযুক্ত জবাব’ দেওয়া হবে: ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রী

3 Min Read
টেলিভিশনে প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি। আল-জাজিরা টিভি থেকে নেওয়া
Highlights
  • ‘যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল এখন এমনভাবে আগ্রাসন চালাচ্ছে, যেন তারা কোনো আন্তর্জাতিক কাঠামোর মধ্যেই নেই। অথচ এটা আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার চরম হুমকি।’

‘ইরানের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়ে যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘ সনদ চরমভাবে লঙ্ঘন করেছে’—এমন মন্তব্য করেছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি।

তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘এই হামলা “চরম সীমা” ছাড়িয়ে গেছে। এখন আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করে তার “উপযুক্ত জবাব দেওয়া হবে।”

মার্কিন সংবাদ মাধ্যম সিএনএন-এর লাইভ নিউজে বলা হয়, তুরস্কের ইস্তানবুলে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআসি) পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের ৫১তম সম্মেলনের ফাঁকে রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।

আরাকচি প্রতিবাদ জানিয়ে আরো বলেন, ‘তারা আমাদের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়ে এক অগ্রহণযোগ্য আগ্রাসন চালিয়েছে। এটি কেবল ইরানের ওপর নয়, সমগ্র আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার ওপর আঘাত।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই যুদ্ধবাজ ও আইনবহির্ভূত মার্কিন প্রশাসন একাই এর পরিণতির জন্য দায়ী থাকবে। এর ফলে মধ্যপ্রাচ্যে ও বিশ্বজুড়ে যে অস্থিরতা দেখা দেবে, তার দায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে নয়, কেবল ওয়াশিংটনকে নিতে হবে।’

জাতিসংঘে আনুষ্ঠানিক অভিযোগের প্রস্তুতি

আরাকচি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে জরুরি অধিবেশন ডাকার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘আমরা জাতিসংঘ সনদের মৌলিক নীতিমালার এমন লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে পরিষ্কার অবস্থান আশা করছি। যুক্তরাষ্ট্রকে এই আগ্রাসনের জন্য আন্তর্জাতিক আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে।’

তার মতে, ‘এভাবে নীরব থাকা মানেই বিশ্বকে অনিয়ন্ত্রিত বিপদের দিকে ঠেলে দেওয়া। মানবজাতি অনেক দূর এগিয়েছে, এখন আর এমন “জঙ্গলের আইন” চালানো উচিত নয়।’

আঞ্চলিক সহায়তা চেয়ে যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছে ইরান

আরাকচি জানান, তিনি পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলসহ বিভিন্ন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। ‘প্রায় সবাই ইসরায়েলের আগ্রাসন নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং তারা এই সংকট নিরসনে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে চাচ্ছেন,’ জানান তিনি।

ইরানের এই শীর্ষ কূটনীতিক আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল এখন এমনভাবে আগ্রাসন চালাচ্ছে, যেন তারা কোনো আন্তর্জাতিক কাঠামোর মধ্যেই নেই। অথচ এটা আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার চরম হুমকি।’

হারমুজ প্রণালী বন্ধের ইঙ্গিত

বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তেল-পরিবহন জলপথ হারমুজ প্রণালী বন্ধের সম্ভাবনা প্রসঙ্গে আরাকচিকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘ইরানের হাতে নানা ধরনের কৌশলগত প্রতিক্রিয়ার পথ খোলা আছে।’

বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরান যদি এই প্রণালী বন্ধ করে দেয়, তাহলে প্রতি দিন কয়েক কোটি ব্যারেল তেল পরিবহন বন্ধ হয়ে যাবে, যা বিশ্ব অর্থনীতিকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

আরাকচি পরিষ্কার করে জানান, ‘আমরা শুধু মার্কিন সামরিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে নয়, বরং ইসরায়েলি সরকারের বেপরোয়া ও বেআইনি কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধেও সব ধরনের প্রতিরোধ গড়ে তুলব। ইরান আত্মরক্ষায় পিছু হটবে না।’

এই অবস্থায় মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা আরও বাড়ছে এবং কূটনৈতিক সমাধানের পথ ক্রমেই সংকীর্ণ হয়ে পড়ছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই সংঘাত এখন কেবল সামরিক নয়, বরং অর্থনীতি, জ্বালানি নিরাপত্তা ও আন্তর্জাতিক নীতির ওপর গভীর প্রভাব ফেলতে যাচ্ছে।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *