রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালে ভাঙারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ সোহাগকে (৩৯) প্রকাশ্যে হত্যা অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি জানিয়েছেন, ঘটনায় জড়িত পাঁচজনকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং বাকিদের আইনের আওতায় আনতে গোয়েন্দা পুলিশ তৎপর রয়েছে।
শনিবার দুপুরে পুরান ঢাকার মিল ব্যারাকে ঢাকা জেলা পুলিশ লাইনস, রেঞ্জ রিজার্ভ ফোর্স (আরআরএফ) ও ট্রাফিক অ্যান্ড ড্রাইভিং স্কুল (টিডিএস) পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে তিনি এসব কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, ‘শুধু মিটফোর্ড নয়, সারা দেশেই এ ধরনের ঘটনায় পুলিশ তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিচ্ছে। তবে মিটফোর্ডের ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। সভ্য দেশে এমন কিছু কাম্য নয়।’
তিনি জানান, ঘটনার দিনই দু’জনকে ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন আরও দু’জন র্যাবের হাতে অস্ত্রসহ ধরা পড়ে। রাতে গ্রেপ্তার করা হয় আরেকজনকে।
এদিকে, এই হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের ঘোষণা দিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।
এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘সরকার এই নারকীয় হত্যাকাণ্ডের বিচার দ্রুত শেষ করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল আইন, ২০০২-এর ধারা ১০ অনুযায়ী দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিচার সম্পন্ন করা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই পাশবিক হত্যার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
হত্যাকাণ্ডের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ শুরু হয়। শুক্রবার ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ মিছিল হয়। একইদিন রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মশাল মিছিল করে বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন। খুলনায় বহিষ্কৃত যুবদল নেতা মাহবুব রহমান হত্যাসহ সাম্প্রতিক সহিংসতা ও হত্যার প্রতিবাদ জানানো হয় কর্মসূচিতে।
ঘটনার জেরে বিএনপির সহযোগী সংগঠনের চারজনকে দলীয়ভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।
শুক্রবার সন্ধ্যায় যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল পৃথক বিজ্ঞপ্তিতে তাদের আজীবনের জন্য বহিষ্কারের ঘোষণা দেয়।
বহিষ্কৃতরা হলেন- যুবদলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক জলবায়ুবিষয়ক সহসম্পাদক রজ্জব আলী (পিন্টু), ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সাবাহ করিম (লাকি), চকবাজার থানা ছাত্রদলের সদস্যসচিব অপু দাস এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মী কালু ওরফে স্বেচ্ছাসেবক কালু।
নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন। শিক্ষার্থী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা দ্রুত বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
পুলিশের মিল ব্যারাক এলাকা পরিদর্শন নিয়ে তিনি বলেন, মিল ব্যারাক পরিদর্শনের উদ্দেশ্য ছিল পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময়, তাদের আবাসন ও খাওয়ার মান পর্যবেক্ষণ এবং আগামী নির্বাচনকে ঘিরে প্রশিক্ষণের প্রস্তুতি পর্যালোচনা।
তিনি বলেন, ‘আমরা ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি শেষ করতে চাই। নির্বাচন কবে হবে, সেটা জানাবে নির্বাচন কমিশন।’