বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্য তৃতীয় দেশে পাঠাতে ভারতীয় স্থলবন্দর ব্যবহার করে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বন্ধ করে দেওয়ার ভারতের সিদ্ধান্তে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে প্রতিবেশী দেশগুলোতে।
এক বাংলাদেশি রপ্তানিকারককে একজন নেপালি ব্যবসায়ী বলেছেন, ‘ওই সিদ্ধান্তের ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই আমরা আমাদের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলিকে জানিয়েছি, সিদ্ধান্তটি আমাদের কীভাবে প্রভাবিত করবে।’
তিনি আরও জানান, প্রধানমন্ত্রী ওলি এ বিষয়টি দিল্লির সর্বোচ্চ পর্যায়ে তুলবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন।
টাইমস অব বাংলাদেশকে দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় ওই বাংলাদেশি রপ্তানিকারক বলেন, ‘এটি আমাদের দু’দেশের জন্যই একটা ধাক্কা!’
বাংলাদেশি ওষুধের উপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল বলে নেপাল ট্রান্সশিপমেন্ট বন্ধের সিদ্ধান্তে ব্যাপকভাবে উদ্বিগ্ন। বেশ কিছু বাংলাদেশি ওষুধ কোম্পানি ভারতের ভূমি ব্যবহার করে নেপালে ওষুধ রপ্তানি করে থাকে।
জাতিসংঘের শিশু তহবিল– ইউনিসেফসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা টেন্ডারের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে ওষুধ সংগ্রহ করে।
২০২০ সালের জুনে চালু হওয়া ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধার আওতায় বাংলাদেশ তৃতীয় দেশ, যেমন– নেপাল, ভুটান ও মিয়ানমারে পণ্য পাঠাতে ভারতীয় ভূমি ব্যবহার করতে পারত।
ওষুধ ছাড়াও বাংলাদেশি কাগজ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ‘বসুন্ধরা’ ও ‘মেঘনা গ্রুপ’ নেপালে কাগজ রপ্তানি করে, এ কারণে নেপালও বাংলাদেশের কাগজের উপর নির্ভরশীল। বাংলাদেশের কৃষিপণ্যও এই রুটে ভারত হয়ে নেপালে যায়।
বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ছিল ‘প্রাণ-আরএফএল’, ‘স্কয়ার’ ও ‘বম্বে সুইটস’। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর ভুটানমুখী রপ্তানিও ভারতীয় স্থলবন্দর ব্যবহার করে হতো।
অন্যদিকে, বাংলাদেশ যেসব পণ্য আমদানি করত, তার মধ্যে পাথর ও হারবাল পণ্য অন্যতম।
ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, ভারত সম্প্রতি একটি সার্কুলারের মাধ্যমে এই ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বন্ধ করেছে। সিদ্ধান্তটি সঙ্গে সঙ্গেই কার্যকর হয়েছে বলে জানিয়েছে ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্য মহাপরিদপ্তর (ডিজিএফটি)।
তবে, ভারতের কেন্দ্রীয় রাজস্ব বোর্ড (সিবিআইসি) জানিয়েছে, যেসব চালান ইতোমধ্যে ভারতে ঢুকে পড়েছে, সেগুলোকে পূর্ববর্তী সার্কুলারের নিয়ম অনুযায়ী ভারতে থেকে বেরিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হতে পারে।
এটি ছিল এমন একটি চুক্তি, যার মাধ্যমে বাংলাদেশি রপ্তানিকারকেরা ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করে তৃতীয় দেশে পণ্য পাঠাতে পারতেন, যা পরিবহন সময় ও খরচ কমিয়ে দিত।
ভারতের নতুন সার্কুলারে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বন্ধের ওই সিদ্ধান্তের কারণ উল্লেখ করা হয়নি। তবে বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এই পদক্ষেপ দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ককে প্রভাবিত করতে পারে।