গত বছরের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ওই সরকারের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের অবৈধ সম্পদ উদ্ধারে তৎপরতা বেড়েছে। জব্দ করা হয়েছে দেশে-বিদেশে থাকা তাদের সম্পদ। তবে বিদেশে থাকা সম্পদ দেশে ফিরিয়ে আনা আদৌ সম্ভব কি না—তা নিয়ে বড় প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
এ পর্যন্ত ১৩ হাজার কোটি টাকার বেশি সম্পদ আদালতের নির্দেশে জব্দ বা ফ্রিজ করা হয়েছে, যার মধ্যে বেশিরভাগই দেশে। কিন্তু বিদেশে পাচার হওয়া সম্পদের ভবিষ্যৎ এখনো অনিশ্চিত।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট ইউনিটের তথ্য অনুযায়ী, বিদেশে জব্দ করা সম্পদের মধ্যে যুক্তরাজ্য, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) ও স্লোভাকিয়ায় ৫৮২টি ফ্ল্যাট, পাশাপাশি ৮ লাখ ৮৮ হাজার মার্কিন ডলার ও ৮.৬২ মিলিয়ন ইউরো মূল্যের নগদ অর্থ ও করপোরেট শেয়ার রয়েছে। প্রকৃত সম্পদের পরিমাণ আরও অনেক বেশি হতে পারে বলে ধারণা করা হয়।
তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, যদি সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সক্রিয় সহযোগিতা না পাওয়া যায়, তাহলে এসব জব্দের কার্যকারিতা কাগুজে ঘোষণায় পরিণত হতে পারে।
একজন বিশেষজ্ঞ বলেন, “বাধ্যতামূলক চুক্তি না থাকলে, এসব আইন শুধু কাগজে সীমাবদ্ধ থাকে।”
সবচেয়ে আলোচিত মামলাগুলোর একটি হলো সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বিরুদ্ধে। ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালত তার যুক্তরাজ্যে থাকা ৩৪৩টি সম্পত্তি জব্দের আদেশ দেন, যার বাজারমূল্য প্রায় ১৫০ থেকে ২০০ মিলিয়ন পাউন্ড (প্রায় ২,১০০ থেকে ২,৮০০ কোটি টাকা)।
এই সম্পদগুলো তার স্ত্রী রুখমিলা জামানের সঙ্গে যৌথভাবে রাখা হয়েছে, যা লন্ডন, লিভারপুল, ব্রিস্টল ও টাওয়ার হ্যামলেটস অঞ্চলে বিস্তৃত। আদালত এই সম্পদগুলোর বিষয়ে যুক্তরাজ্যের এইচএম ল্যান্ড রেজিস্ট্রি এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার আওতায় পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ জানিয়েছে।
বাংলাদেশ ইতোমধ্যে যুক্তরাজ্য, ইউএই এবং যুক্তরাষ্ট্রের কাছে মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিকোয়েস্টও পাঠিয়েছে। তবে এ প্রক্রিয়ায় অগ্রগতি খুবই ধীর।
দুদকের সিনিয়র আইন উপদেষ্টা মো. আসিফ হাসান টাইমস অব বাংলাদেশ-কে বলেন, ‘এটি একটি পারস্পরিক আইনি সহায়তা চুক্তি। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এ ধরনের চুক্তি করতে কাজ করছে। উভয় পক্ষ সম্মত হলে, জব্দকৃত সম্পদ ফেরতের প্রক্রিয়া সহজ হবে।’
বর্তমানে অল্প কয়েকটি দেশের সঙ্গে ই বাংলাদেশের মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স বলবৎ আছে। আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে আদালতের আদেশ থাকলেও অধিকাংশ বিদেশি আদালতে তা কার্যকর করতে আলাদা আইনি প্রক্রিয়ার প্রয়োজন হয়। ফলে সম্পদ ফেরত আনা হয়ে ওঠে দীর্ঘমেয়াদি ও রাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল একটি প্রক্রিয়া।
জব্দ আদেশের আওতায় রয়েছেন শেখ হাসিনার পরিবারের সদস্য, সাবেক মন্ত্রীরা যেমন আনিসুল হক, দীপু মনি, জুনায়েদ আহমেদ পলক এবং বড় ব্যবসায়িক গ্রুপ—এস আলম, সিকদার গ্রুপ ও নাবিল গ্রুপের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
অন্তর্বর্তী সরকার আইনি কাঠামো সংস্কার ও দুদককে শক্তিশালী করার পদক্ষেপ নিলেও বিশ্লেষকদের মতে, উচ্চ পর্যায়ের আন্তঃসংস্থাগত টাস্কফোর্স এবং কৌশলগত কূটনৈতিক তৎপরতা ছাড়া বিদেশি সম্পদ ফেরত আনার এই উদ্যোগ সফল হবে না।