বিক্ষোভে অচল সচিবালয়, দর্শনার্থী প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা

টাইমস রিপোর্ট
4 Min Read
সচিবালয়ে বিক্ষোভ করছেন বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সম্প্রতি তোলা ছবি: ফোকাস বাংলা

সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ বাতিলের দাবিতে তৃতীয় দিন সোমবার সকাল থেকে সচিবালয়ে বিক্ষোভ করছেন বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। মঙ্গলবারেও বিক্ষোভ অব্যাহত রাখার ঘোষণা এসেছে। অন্যদিকে আন্দোলন দমাতে সচিবালয়ে দর্শনার্থী প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

সচিবালয় কর্মকর্তা কর্মচারীদের আন্দোলনের বিপরীতে মঙ্গলবার সচিবালয়ের বাইরে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছে নবগঠিত রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। পাল্টা এ কর্মসূচিতে উত্তেজনা বেড়েছে অনেকটা।

অন্যদিকে সচিবালয়ের পাশাপাশি মঙ্গলবার সারাদেশের সব সরকারি দপ্তরে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানিয়েছে সচিবালয় কর্মচারীরা।

অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে সোমবার তৃতীয় দিনের কর্মসূচির মধ্যে সচিবালয় কর্মচারীদের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের সঙ্গে বৈঠকের কথা থাকলেও, সেটি হয়নি।

এরপরই নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে সচিবালয়ে কর্মরত-কর্মচারীদের সবগুলো সংগঠনের সম্মিলিত প্ল্যাটফর্ম ‘বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য ফোরাম’।

এই অধ্যাদেশকে ‘নিবর্তনমূলক ও কালাকানুন’ আখ্যায়িত করে এটি প্রত্যাহার না হলে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলে কর্মচারীরা জানিয়েছেন।

সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সচিবালয় চত্বর ভরে ওঠে শত শত বিক্ষোভকারীতে। বিক্ষোভকারীদের নানা ধরনের স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে সরকারেরর প্রধান প্রশাসনিক কেন্দ্র সচিবালায়। মঙ্গলবার সকাল দশটা থেকে বিক্ষোভ অব্যাহত রাখার ঘোষণা এসেছে।

এদিকে উত্তেজনাকর এ পরিস্থিতির মাঝে সচিবালয়ে দর্শনার্থী প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানায়, ‘অনিবার্য কারণবশত আগামী ২৭ মে ২০২৫ মঙ্গলবার বাংলাদেশ সচিবালয়ে সকল ধরনের দর্শনার্থী প্রবেশ বন্ধ থাকবে।’

বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের নেতৃত্বে সোমবার দিনভর মিছিল-সমাবেশ চলে। পুরো সচিবালয় এলাকা ঘুরে মিছিলকারীরা প্রতিবাদ জানান।

জুলাই বিপ্লবী ছাত্র-জনতার ব্যানারে সচিবালয়ের বাইরে গণসমাবেশের ডাক এসেছে।

এদিন আন্দোলনকারীদের সতর্ক করে এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ‘সচিবালয়ের কর্মকর্তারা তাদের ক্যু অব্যাহত রাখলে তাদের পরিণতি পতিত হাসিনার মতো হবে।’

সোমবার বিকেলে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পোস্টে হাসনাত লেখেন, ‘জনদুর্ভোগ ও ফ্যাসিবাদ দীর্ঘায়িত করার ক্যান্টনমেন্ট হিসেবে পরিচিত সচিবালয়ের ক্যু সম্পর্কে সচেতন থাকুন। পাঁচ আগস্ট পর্যন্ত কালো ব্যাজ ধারণ করে, হাসিনাকে সমর্থন দিয়ে অফিস করা সচিবালয়ের কর্মকর্তারা তাদের ক্যু অব্যাহত রাখলে তাদের পরিণতি পতিত হাসিনার মতো হবে।’

তিনি লেখেন, ‘বাংলাদেশের জনগণ সবকিছু পর্যবেক্ষণ করছে। সুতরাং, সাবধান!’

শনিবার থেকে টানা বিক্ষোভ সমাবেশ করছেন সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। দাবি আদায় না হওয়ায় বাড়ছে বিক্ষোভের ব্যাপ্তি। এ অবস্থায় কার্যত সচিবালয় অচল হয়ে পড়েছে। রাষ্ট্রের প্রশাসনিক কাজের কেন্দ্রবিন্দুতে এ অচলাবস্থার প্রভাব পড়ছে সর্বত্র। সরকারের পক্ষ থেকে আলোচনার কথা বলা হলেও পরে তা বাতিল হয়েছে।

সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারীর চলমান আন্দোলনের ভেতরেই রোববার সন্ধ্যায় ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ জারি করে সরকার। এর আগে বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ২০১৮ সালের আইন সংশোধনের খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়।

বার্তা সংস্থা বাসস জানায়, নতুন অধ্যাদেশে সরকারি কর্মচারীদের শৃঙ্খলা সংক্রান্ত চারটি আচরণকে ‘অপরাধ’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে:

১. অনানুগত্য বা শৃঙ্খলা ভঙ্গকারী কার্যকলাপ, ২. যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকা, ৩. অন্য কর্মচারীদের দায়িত্ব পালনে বাধা বা উসকানি দেওয়া এবং ৪. অন্যদের কর্মবিরতিতে প্ররোচিত করা।

অধ্যাদেশে বলা হয়, এ ধরনের অপরাধে কর্মচারীকে ‘অবনমিত’, ‘চাকরিচ্যুতি’ বা ‘বরখাস্ত’ করার বিধান রাখা হয়েছে।

সোমবার সকালে ওই অধ্যাদেশের বিরুদ্ধে সচিবালয়ে ফের শুরু হওয়া আন্দোলনে বিক্ষোভকারীরা স্লোগান দেন, ‘অবৈধ কালো আইন মানি না’, ‘সচিবালয়ের কর্মচারী, এক হও লড়াই কর’ ইত্যাদি।

বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, ‘২০১৮ সালের সরকারি চাকরি আইন’ সংশোধনে প্রস্তাবিত ওই অধ্যাদেশে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ ছাড়াই চাকরিচ্যুতির বিধান রাখা হয়েছে, যা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে তৈরি করেছে তীব্র অসন্তোষ।

তারা বলছেন, ‘এটি মৌলিক অধিকার লঙ্ঘনের শামিল।’

গত ২২ মে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়। তবে তা পর্যালোচনার দ্বায়িত্বে রয়েছন চারজন উপদেষ্টা। অধ্যাদেশ জারির পর আন্দোলন জোরদার করেছেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সচিবালয়ের বিক্ষোভ সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়ার কথাও বলছেন তারা।

আন্দোলনকারীরা স্পষ্ট জানিয়েছেন, দাবি মানা না হলে ভবিষ্যতে ‘সচিবালয় অচল করে দেওয়ার মত কঠোর কর্মসূচি’তে যাবেন তারা।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *