বাসায় পৌঁছালেন খালেদা জিয়া, স্বাগত জানালেন স্বজনরা

টাইমস রিপোর্ট
5 Min Read
'ফিরোজায়' বিএনপি চেয়ারপারসনকে স্বাগত জানান স্বজনরা। ছবি: ভিডিও ক্লিপ থেকে নেওয়া

দীর্ঘ চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরে আসা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে নিয়ে গাড়ির বহর বিমানবন্দর থেকে প্রায় দুই ঘণ্টায় মঙ্গলবার বেলা ১টা ২৬ মিনিটে গুলশানের বাসায় পৌঁছেছে। হাজার হাজার নেতাকর্মী সংবর্ধনা, ফুলেল শুভেচ্ছা, নানা ধরনের শ্লোগানে মুখরিত করে রাখেন বিএনপি নেত্রীর পুরো যাত্রা। উচ্ছ্বিত অসংখ্য নেতাকর্মী ও জনতা পুরো পথ গাড়ির বহর ঘিরে রাখায় এর গতি ছিল মন্থর।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানাতে ঢল নেমেছে গুলশানের বাসভবন ‘ফিরোজার’ সামনে। ছবি: টিভি থেকে নেওয়া

প্রথমে কুর্মিটোলার বিমানবন্দর এলাকায় বিএনপি নেত্রীকে অসংখ্য নেতাকর্মী তুমুল উচ্ছ্বাস ও শ্লোগানে স্বাগত জানান। তারা সুশৃংখলভাবে বিমানবন্দর সড়কের দুই পাশে সারিবদ্ধভাবে দলীয় ও জাতীয় পতাকা উঁচিয়ে শুভেচ্ছা জানান খালেদা জিয়াকে।

লন্ডন থেকে চিকিৎসা নিয়ে চারমাস পর দেশে ফিরলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, ছবি: টিভি থেকে নেওয়া

সকাল থেকেই নগরীর ভিন্ন এলাকা থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে বিএনপির আরো নেতাকর্মীরা জড়ো হন বিমানবন্দর থেকে গুলশান–খালেদা জিয়ার ঢাকায় আগমনের পথে, সড়কের দুইপাশে। তারা নানা শ্লোগানে, ব্যানার-ফেস্টুন উঁচিয়ে, ফুল ছিটিয়ে পথে পথে সংবর্ধনা দেন খালেদা জিয়াকে।  তবে এসএসসি পরীক্ষার জন্য সড়কে ভিড় না করে ফুটপাতে অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানানো হয় দলীয়ভাবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিবেচনায় আরও জোরদার করা হয় সার্বিক নিরাপত্তাব্যবস্থা।

‘ফিরোজায়’ বিএনপি নেত্রীকে স্বাগত জানান তার মেজ বোন সেলিমা ইসলাম, ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার, শামীমের স্ত্রী কানিজ ফাতেমা, জোবাইদা রহমানের বড় বোন শাহীনা জামান বিন্দু এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা। এছাড়া মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাস ও সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ উপস্থিত ছিলেন সেখানে।

বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে দেশের পথে খালেদা জিয়া এবং তার দুই পুত্রবধূ জোবাইদা রহমান ও শর্মিলা রহমান। ছবি: বিএনপির ফেসবুক পেজ

খালেদা জিয়ার জন্য গুলশানের ৭৯ নম্বর সড়কের ‘ফিরোজা’ আগেই পুরোপুরি প্রস্তুত করা হয়েছিল।

সেখানে স্বাগত জানাতে ঢল নামে নামে নেতাকর্মীদের। এ দিন সকাল থেকেই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা ‘ফিরোজার’ সামনে উপস্থিত হন। জাতীয় ও দলীয় পতাকা, ব্যানার, ফেস্টুন ও খালেদা জিয়া ও জিয়াউর রহমানের ছবি হাতে নিয়ে তারা স্লোগানে মুখর করে রাখেন গোটা এলাকা। গাড়ি থেকেই দলের নেত্রীকে এক ঝলক দেখেই তারা উজ্জীবিত। খালেদা জিয়া গাড়ির ভেতর থেকে হাত নেড়ে নেতা-কর্মীদের শুভেচ্ছা জানান।

বাসভবনের সামনে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিতে মোতায়েন রয়েছে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক টিমও দায়িত্ব পালন করছে।

লন্ডনে চিকিৎসা শেষে চার মাস পর দেশে ফিরেন খালেদা জিয়া। তাকে বহনকারী বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে লন্ডন থেকে দোহায় যাত্রা বিরতি দিয়ে মঙ্গলবার সকাল ১০টা ৪০ মিনিটের দিকে ঢাকার হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে অবতরণ করে। বিমানবন্দরে বিএনপি নেত্রীকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও জাতীয় স্থায়ী কমিটির শীর্ষ নেতারা।

লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও তার স্ত্রী জোবাইদা রহমান। ছবি: বিএনপির ফেসবুক পেজ

খালেদা জিয়ার সফরসঙ্গী হিসেবে ছিলেন দুই পুত্রবধূ—জোবায়দা রহমান ও সৈয়দা শর্মিলা রহমান। কাতারের আমিরের দেওয়া এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সোমবার স্থানীয় সময় বিকেল ৪টা ৩৫ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় রাত ৯টা ৩৫ মিনিট) লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর ত্যাগ করেন তিনি। বিমানটি দোহায় যাত্রাবিরতির পর ঢাকায় অবতরণ করে।

হিথ্রো বিমানবন্দরে খালেদা জিয়াকে বিদায় জানান তার বড় ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। নিজেই গাড়ি চালিয়ে মাকে বিমানবন্দরে পৌঁছে দেন তিনি। গাড়িতে দাদির সঙ্গে ছিলেন তারেকের মেয়ে জাইমা রহমানও। বিদায়লগ্নে সেখানে উপস্থিত ছিলেন হাজারো প্রবাসী নেতা-কর্মী। তারা ফুলের তোড়া, ব্যানার-প্ল্যাকার্ড নিয়ে নেত্রীকে শুভেচ্ছা জানান।

বিমানবন্দর ও গুলশানের বাসভবন ‘ফিরোজা’-তে কাউকে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি। এ ছাড়া ধানমন্ডির ‘মাহবুব ভবন’-এ তারেকপত্নী জোবায়দা রহমানের বাবার বাড়িতেও বাড়তি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে।

প্রায় ১৭ বছর পর দেশের মাটিতে পা রাখতে চলেছেন জোবায়দা রহমান। বাংলাদেশে তার অবস্থানকালে ‘ভিআইপি নিরাপত্তা’ নিশ্চিত করা হয়েছে বলেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) জানিয়েছে।

৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়া গত ৮ জানুয়ারি উন্নত চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে লন্ডনে যান। তিনি দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, কিডনি, হৃদ্‌রোগসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন।

 

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *