বাফুফের ক্যাম্প বনাম কিংসের ব্যস্ততা, কার অবস্থান সঠিক?

টাইমস স্পোর্টস
3 Min Read
বাফুফে ও বসুন্ধরা কিংসের লোগো। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) এবং দেশের শীর্ষ ক্লাব বসুন্ধরা কিংসের সম্পর্ক দিন দিন জটিল আকার ধারণ করছে। সাম্প্রতিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হলো জাতীয় দলের আসন্ন দুটি প্রীতি ম্যাচ। সেপ্টেম্বরের ৬ এবং ৯ তারিখে নেপালের বিপক্ষে মাঠে নামবে বাংলাদেশ। কোচ হাভিয়ের ক্যাবরেরা ইতোমধ্যে দল গঠনের কাজ শুরু করে দিয়েছেন। তিনি খেলোয়াড়দের আগেভাগেই ক্যাম্পে ডাকতে চাইছেন। কিন্তু বসুন্ধরা কিংস এত আগে তাদের খেলোয়াড় ছাড়তে রাজি নয়। এখান থেকেই শুরু হয়েছে দ্বন্দ্ব।

জাতীয় দলের লক্ষ্য স্পষ্ট। ম্যাচের প্রায় এক মাস আগেই ক্যাম্প শুরু করে খেলোয়াড়দের শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রস্তুত করা, দলের সমন্বয় গড়ে তোলা এবং নতুন কৌশলগুলো অনুশীলনের মাধ্যমে খাপ খাওয়ানো। কোচ ক্যাবরেরা মনে করছেন, আন্তর্জাতিক ম্যাচে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হলে দীর্ঘমেয়াদী ক্যাম্প অপরিহার্য।

অন্যদিকে বসুন্ধরা কিংসের অবস্থান একেবারেই আলাদা। তারা মনে করছে মৌসুম শুরুর আগে খেলোয়াড়দের কন্ডিশনিং ট্রেনিং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ক্লাবের পক্ষ থেকে যুক্তি দেওয়া হচ্ছে, ক্যাম্পে আগেভাগে যোগ দিলে খেলোয়াড়রা সেই কন্ডিশনিং অনুশীলন মিস করবে। আর এই কন্ডিশনিং যদি না হয়, তাহলে সাত-আট মাসব্যাপী ঘরোয়া মৌসুমে ইনজুরির ঝুঁকি বেড়ে যাবে এবং পারফরম্যান্সেও প্রভাব পড়বে।

এ নিয়ে বাফুফের ভেতরেও ক্ষোভ রয়েছে। ফেডারেশন কমিটি সদস্য আমিরুল ইসলাম বাবু বলেন, ‘জাতীয় দলের ম্যাচ সামনে রেখে আমরা প্রস্তুতি শুরু করেছি। কিন্তু বসুন্ধরা কিংস সভাপতি ইমরুল হাসান, যিনি আবার বাফুফের সহসভাপতি এবং লীগ কমিটির চেয়ারম্যান, তিনি আমাদের সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ করছেন না। বাফুফের ডাকে সাড়া দিচ্ছেন না। বিষয়টা আমাদের জন্য বিস্ময়কর।’

এই দ্বন্দ্বের মধ্যে ফিফার নিয়মও আলোচনায় এসেছে। ফিফার বিধান অনুযায়ী, জাতীয় ফেডারেশন খেলোয়াড় ডাকলে ক্লাবকে অবশ্যই খেলোয়াড় ছাড়তে হবে। তবে এর জন্য একটি সময়সীমা বেঁধে দেওয়া আছে।

অফিসিয়াল ম্যাচের ক্ষেত্রে, যদি ম্যাচ একই মহাদেশে হয়, তবে ম্যাচ ডের চার দিন আগে খেলোয়াড় ছাড়তে হবে। আর যদি খেলোয়াড় অন্য মহাদেশ থেকে আসে, তবে সময়সীমা হবে পাঁচ দিন।

ফিফার আন্তর্জাতিক ক্যালেন্ডারে থাকা প্রীতি ম্যাচের জন্য খেলোয়াড় ছাড়তে হয় ম্যাচ শুরুর অন্তত ৪৮ ঘণ্টা আগে। তবে ক্যালেন্ডারের বাইরে কোনো প্রীতি ম্যাচ হলে ক্লাবগুলো খেলোয়াড় ছাড়তে বাধ্য নয়।

অর্থাৎ নেপালের বিপক্ষে ম্যাচ যেহেতু ফিফার ক্যালেন্ডারে অন্তর্ভুক্ত, তাই বসুন্ধরা কিংসের চাওয়া ৩১আগস্ট বাংলাদেশের খেলোয়াড় ছাড়বে তারা, সেটি ফিফার নিয়মের সাথে সামঞ্জস্য। অন্য মহাদেশে খেলা হামজা, ফাহমিদুল বা সমিতের মতো খেলোয়াড়রা ম্যাচের পাঁচ দিন আগে ক্যাম্পে যোগ দিলে সেটিই যথেষ্ট।

সমস্যার মূল জায়গা এখানেই। জাতীয় দলের কোচ এবং বাফুফে আগেভাগে প্রস্তুতি শুরু করতে চাইছে। তারা মনে করছে লম্বা সময় অনুশীলন ছাড়া আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রতিযোগিতামূলক ফুটবল খেলা সম্ভব নয়। অন্যদিকে বসুন্ধরা কিংস শুধু ফিফার বাধ্যতামূলক সময়সীমা অনুযায়ী খেলোয়াড় ছাড়তে রাজি। তাদের কাছে ক্লাব মৌসুমের কন্ডিশনিংয়ের গুরুত্বই আগে।

জাতীয় দলের অনুশীলন সাধারণত ম্যাচকেন্দ্রিক ট্রেনিংয়ের ওপর নির্ভর করে, যেখানে কৌশল, ট্যাকটিকস ও খেলোয়াড়দের মধ্যে বোঝাপড়ার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। অন্যদিকে ক্লাব পর্যায়ে প্রাক-মৌসুমে খেলোয়াড়দের শরীরকে পুরো মৌসুমের জন্য তৈরি করে তোলা হয়। এই দুই ধরনের অনুশীলনের উদ্দেশ্য আলাদা হলেও খেলোয়াড়দের একই সময়ে দুটি জায়গায় রাখা সম্ভব নয়।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *