লাতিন আমেরিকান সাহিত্যের উজ্জ্বল নক্ষত্র মারিও ভার্গাস ইয়োসা মারা গেছেন। নোবেলজয়ী এ পেরুভিয়ান ঔপন্যাসিক প্রয়াত হয়েছেন ৮৯ বছর বয়সে।
ইয়োসার তিন সন্তান রোববার এক যৌথ বিবৃতিতে তার মৃত্যুর কথা জানান।
বিবৃতিতে তারা বলেন, ‘লিমায় পরিবারের প্রিয়জনদের বেষ্টনীতে, শান্তিপূর্ণভাবে তিনি আমাদের ছেড়ে গেছেন। আত্মীয়, বন্ধু ও বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য পাঠককে তার প্রস্থান শোকার্ত করবে। তবে আমরা আশাবাদী, তার দীর্ঘ, দুঃসাহসিক ও সার্থক জীবনের কথা ভেবে তারা কিছুটা সান্ত্বনা পাবেন, যেমনটা আমরা পাচ্ছি।’
লাতিন আমেরিকান সাহিত্যকে বৈশ্বিক অঙ্গনে জনপ্রিয় করার অন্যতম রূপকার ছিলেন মারিও ভার্গাস ইয়োসা। তার সাহিত্যজীবন পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময়জুড়ে বিস্তৃত ছিল। ৫০-এর বেশি গ্রন্থের স্রষ্টা এই সাহিত্যিক। এসব বইয়ের অনেকগুলোই নানা ভাষায় অনূদিত হয়েছে। ২০১০ সালে তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।
১৯৩৬ সালে পেরুর দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর আরেকিপায় এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম মারিও ভার্গাস ইয়োসার। শৈশবে তার মা-বাবার বিচ্ছেদ হলে তিনি প্রপিতামহের সঙ্গে বলিভিয়ার কোচাবাম্বায় চলে যান। পেরুতে ফিরে আসেন দশ বছর বয়সে, আর ষোলো বছর বয়সে লেখেন তার প্রথম নাটক ‘দি এস্কেপ অভ দি ইনকা’। এরপর লিমা ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতক সম্পন্ন করে স্পেনেও পড়াশোনা করেন। পরে চলে যান প্যারিসে।
তার প্রথম উপন্যাস ‘দ্য টাইম অভ দ্য হিরো’ ছিল পেরুর এক সামরিক বিদ্যালয়ে দুর্নীতি ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র। ১৯৬২ সালে প্রকাশিত এই উপন্যাসের সময় দেশটির সামরিক বাহিনী রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে প্রচণ্ড ক্ষমতাধর ছিল।
তার দ্বিতীয় উপন্যাস ‘দ্য গ্রিন হাউস’ (১৯৬৬) ছিল সাহসী নিরীক্ষা। এ কাহিনির ঘটনাস্থল ছিল পেরুর মরুভূমি আর অরণ্য, আর কাহিনির কেন্দ্রে ছিল এক পতিতালয়কে ঘিরে গড়ে ওঠা দালাল, ধর্মপ্রচারক ও সৈনিকদের জটিল আঁতাত।
এই দুটি উপন্যাসই ১৯৬০ ও ১৯৭০-এর দশকে ‘লাতিন আমেরিকান বুম’ নামক সাহিত্যিক নবজাগরণে ভূমিকা রাখে। এ সাহিত্যিক আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য ছিল নিরীক্ষাধর্মী ও প্রবল রাজনৈতিক রচনা।
ভার্গাস ইয়োসার একাধিক রচনা চলচ্চিত্রে রূপ পেয়েছে। তার লেখা ‘আন্ট জুলিয়া অ্যান্ড দ্য স্ক্রিপ্টরাইটার’ অবলম্বনে ১৯৯০ সালে নির্মিত হয় হলিউডের ছবি ‘টিউন ইন টুমরো’।
রাজনৈতিক সচেতন মারিও ভার্গাস ইয়োসা ১৯৯০ সালে একটি মধ্য-ডানপন্থি দল থেকে পেরুর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নেন। যদিও তিনি জয়ী হতে পারেননি।
ইয়োসার জীবনের শেষ সময় কেটেছে পেরু ও মাদ্রিদে। জীবনের দীর্ঘ পথচলায় তার ব্যক্তিজীবন অনেকবার পত্রিকার শিরোনাম হয়েছে। ২০১৫ সালে ৫০ বছরের দাম্পত্যজীবনের ইতি টেনে তিনি সম্পর্কে জড়ান স্প্যানিশ-ফিলিপিনো তারকা ইসাবেল প্রেসলারের সঙ্গে।