নীলফামারীর নাউতারা নদীভাঙনে নিঃস্ব শত পরিবার

টাইমস রিপোর্ট
3 Min Read
ডিমলায় নাউতারা নদীগর্ভে বিলীন আবাদি জমি, বাঁধ, সড়ক ও স্লুইসগেট। ছবি: টাইমস

এক সময়ের জীবিকার একমাত্র অবলম্বন নাউতারা নদী বর্তমানে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার শতাধিক পরিবারের জন্য অভিশাপ কারণের হয়ে দাঁড়িয়েছে। নদীটির ভয়াবহ ভাঙনে পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়নের বিল থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার এলাকা বিলীন হয়ে গেছে। স্থানীয়দের দাবি, সরকার যেন দ্রুত কার্যকর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ এবং স্থায়ী সমাধান করে।

পাউবো জানায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে নদীটি খননের প্রকল্প হাতে নেয়। খনন সম্পন্ন হয় ২০২১ সালে। কিন্তু খননের পর নদীর প্রাকৃতিক গতিপথে একাধিক চ্যানেল তৈরি হওয়ায় শুরু হয় ভয়াবহ ভাঙন। বসতভিটা, আবাদি জমি, বাঁধ, সড়ক ও স্লুইসগেট নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

২০০৭ সালে এলজিইডি নির্মিত স্লুইসগেট খননের পর দেবে গিয়ে অকেজো হয়ে পড়ে। ধসে পড়ে তিনটি সেতু, হেলে পড়ে আরও দুটি। চার কিলোমিটার রাস্তা ও আশপাশের ঘরবাড়ি নদীতে হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে শতাধিক পরিবার। সেচ ও যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় কৃষিকাজ, মাছচাষ ও বাজারে পণ্য পৌঁছানো একপ্রকার বন্ধ হয়ে গেছে।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, অপরিকল্পিত খননের কারণে এ ধসের সৃষ্টি হয়েছে। পাঁচ বছর পার হয়েছে, তবুও ভাঙা স্লুইসগেট, সেতু ও সড়কের ধ্বংসস্তূপ অপসারণ করা হয়নি।

পূর্ব ছাতনাই এলাকার বাসিন্দা আলিয়ার রহমান কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘চোখের সামনে নদী সব গিলে ফেলল। রান্নাঘর, শোবার ঘর, বাচ্চাদের বইখাতা এক রাতেই শেষ। প্রাণ নিয়ে বাঁচলাম, কিন্তু ভিটে তো আর ফেরত পাব না।’

ছাতনাই বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী খাদিজা আক্তার বলেন, ‘কাঁদা মাড়িয়ে স্কুলে যেতে প্রায়ই দেরি হয়। পড়াশোনায় মনও বসে না। অনেক সময় মনে হয়, আমাদের স্বপ্নও নদীর পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে।’

মিয়াপাড়ার কৃষক লাল মিয়া জানান, তার তিন বিঘা জমি ছিল। ধান-ভুট্টা চাষ করতেন তিনি। কিন্তু নদীকে সব বিলীন হয়ে গেছে।  এখন তিনি অন্যের জমিতে মজুরি করেন। তার মতো অনেকে জমি হারিয়ে পুরোপুরি নিঃস্ব হয়ে গেছেন।

পূর্ব ছাতনাই ক্ষুদ্র পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন জানান, খননের পর তাদের সেচ ও মাছচাষ নির্ভর সমিতি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। সরকার যদি দ্রুত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা না নেয় তাহলে এলাকা একদিন জনশূন্য হয়ে যাবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি।

‘তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও’ আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সদস্য সোহেল হাসান জানান, খননের আগে পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন করা হয়নি। ফলে ভাঙন ঠেকানোর উদ্যোগই এখন সর্বনাশের কারণ হয়েছে।

উন্নয়ন তখনই প্রকৃত উন্নয়ন, যখন তা মানুষের জীবনমান উন্নত করে। নাউতারার খনন প্রকল্প সেই পরীক্ষা উতরে যেতে পারেনি বলেও জানান তিনি।

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী বলেন, খননের পর নদীতে ভেঙে পড়া অবকাঠামোর কারণে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে ভাঙন বাড়ছে।

ভাঙনের বিষয়ে ডিমলা উপজেলা প্রকৌশলী শফিউল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেন। আমি আর কিছু বলতে পারব না।’

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *