দরজায় ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। অথচ সন্ত্রাসী ও দুর্বৃত্তদের হাতে রয়ে গেছে পুলিশের লুট হওয়া বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গুলি। নির্বাচনকে ঘিরে এগুলো বড় ঝুঁকি হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক তৌহিদুল হক বলেন, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য অন্তত তিনটি ঝুঁকি রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র-গুলি উদ্ধার না হওয়া, মব ভায়োলেন্স দমন না করা এবং অগণতান্ত্রিক পন্থা অব্যাহত থাকা। তার মতে, লুন্ঠিত অস্ত্র উদ্ধার, সহিংসতা দমন এবং জোর-জবরদস্তি ঠেকাতে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আন্দোলনের সময় সারাদেশের ৪৬২ থানায় হামলা হয়। তখন পুলিশের কাছ থেকে লুট হয় ৫ হাজার ৭৫৩টি অস্ত্র এবং ৬ লাখ ৫১ হাজার ৮৩২ রাউন্ড গুলি।
পুলিশ সদর দপ্তরের হিসাব বলছে, এর মধ্যে এখনো ১ হাজার ৩৬৩টি অস্ত্র ও ২ লাখ ৫৭ হাজার ৭১৯ রাউন্ড গুলি উদ্ধার হয়নি। বাকি উদ্ধার হওয়া অস্ত্রের সংখ্যা ৪ হাজার ৩৯০ এবং গুলি ৩ লাখ ৯৪ হাজার ১১২ রাউন্ড। লুট হওয়া অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে রাইফেল, এসএমজি, এলএমজি, পিস্তল, শটগান, গ্যাসগান, কাঁদানে গ্যাস লঞ্চার, শেল, স্প্রে ও সাউন্ড গ্রেনেড।
এসবের মধ্যে বিশেষভাবে উদ্বেগজনক হচ্ছে গণভবন থেকে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) লুট হওয়া ৩২টি অত্যাধুনিক অস্ত্র।
যৌথ বাহিনীর অভিযানে স্থানীয়দের সহায়তায় কিছু অস্ত্র জমা হয়েছে। ঢাকার খিলগাঁও থানার শতাধিক অস্ত্র সেনাবাহিনীর কাছে জমা দেওয়ার ঘটনা উল্লেখযোগ্য। স্থানীয়দের দাবি, পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালানোর পর তারা অস্ত্রগুলো নিয়ে গিয়ে পরে সেনাবাহিনীর কাছে জমা দিয়েছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী রোববার বলেন, ‘আমাদের যে অস্ত্রগুলো হারিয়ে গেছে, এগুলো উদ্ধারের জন্য আমরা একটা সার্কুলার দিচ্ছি। একটি পুরস্কারও ঘোষণা করছি। যে তথ্য দেবে, তাকে আমরা কত টাকা দিতে পারি, সে বিষয়ে নিজেদের মধ্যে একটা কমিটি করে দু’-চার দিনের মধ্যে হয়তো গণমাধ্যমে ঘোষণা দেব। কেউ যদি খবর দিতে পারেন, তিনি পুরস্কার পাবেন।’

এ সময় উপদেষ্টা জানান, লুট হওয়া ৭০০টিরও বেশি অস্ত্রের এখনও খোঁজ মেলেনি।
তবে সরকারি হিসাবের তুলনায় হারানো অস্ত্রের সংখ্যা দ্বিগুণের কাছাকাছি। পুলিশ মহাপরিদর্শক জানিয়েছেন, অস্ত্র উদ্ধারে সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে এবং এগুলো যেন অপরাধীদের হাতে না যায়, সেজন্য তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।
বাংলাদেশ পুলিশ এসোসিয়েশনের হিসাবে, দেশের ৬৬৪ থানার মধ্যে ৪৫০টির বেশি থানা আক্রান্ত হয়েছিল। এর মধ্যে ঢাকার যাত্রাবাড়ী, বাড্ডা, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, আদাবর, খিলগাঁও, কদমতলী, উত্তরা পূর্ব, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল, লালবাগ, বংশাল ছাড়াও সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর, সাভার, আশুলিয়া, ধামরাই, মুন্সীগঞ্জের ৬ থানা, গাজীপুরের কালিয়াকৈর ও জয়দেবপুর, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, কুমিল্লা, টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, দিনাজপুর ও জয়পুরহাটের বেশ কিছু থানা রয়েছে।