দীর্ঘসূত্রতায় স্থবির মেট্রোরেলের সম্প্রসারণ

টাইমস রিপোর্ট
3 Min Read
গ্রাফিক্স: টাইমস
Highlights
  • প্রকল্পটি গতবছর ২০২৪ সালের মধ্যে চালুর কথা থাকলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে তা আগামী বছর ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের আগে চালু হওয়া কঠিন বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা। ফলে প্রতি বছর গড়ে অন্তত ১২৬ কোটি টাকার রাজস্ব গচ্চা যাবে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

ঢাকা মেট্রোরেলের মতিঝিল থেকে কমলাপুর রেল স্টেশন পর্যন্ত মাত্র ১.১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ সম্প্রসারণ কাজটি এ বছর শেষ হওয়ার কথা থাকলেও প্রকল্পে বড় ধরনের দীর্ঘসূত্রতা দেখা দিয়েছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, চুক্তিগত জটিলতা ও ইলেক্ট্রোমেকানিকেল কাজের ধীরগতির কারণে ব্যয়ভার হয়েছে দ্বিগুণ।

ম্যাস র‍্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) লাইন-৬-এর আওতায় এই সম্প্রসারণ কাজ মূলত আটকে আছে মূল যন্ত্রাংশগুলোর দাম নিয়ে মতবিরোধের কারণে। এর মধ্যে রয়েছে বিদ্যুৎব্যবস্থা, লিফট, এস্কেলেটর, প্ল্যাটফর্ম স্ক্রিন দরজা, সিসিটিভি, সিগন্যালিং এবং টেলিকম সিস্টেম স্থাপন।

এই একাংশের জন্য বরাদ্দ ছিল ২৭৪ কোটি টাকা, যা এখন উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে পুরো লাইন-৬ প্রকল্পের মোট ব্যয় ১১ হাজার ৪৮৬.৯২ কোটি টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ৪৭১.৯২ কোটিতে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জাইকা (জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি) অর্থায়ন করছে এই প্রকল্পে, যারা অনুমোদিত ঠিকাদার ব্যবহারের শর্ত দিয়েছে। কিন্তু ইলেক্ট্রোমেকানিকেল কাজের জন্য ঠিকাদার সংস্থা প্রায় দ্বিগুণ দাম চাওয়ায় ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) নতুন করে দরপত্র আহ্বানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

প্রকল্প পরিচালক মো. জাকারিয়া টাইমস অব বাংলাদেশকে বলেন, ‘নতুন দরপত্র আহ্বানের প্রস্তুতি নিচ্ছি যাতে প্রতিযোগিতামূলক হার পাওয়া যায়।’

ডিএমটিসিএলের সর্বশেষ বোর্ড সভায় সংশোধিত কোটেশন আহ্বান করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আগামী তিন মাসের মধ্যে পরবর্তী বোর্ড সভায় বিষয়টি চূড়ান্ত হবে। তবে নতুন দরপত্র আহ্বান করলেও সময় ও খরচ দুটোই আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

প্রকল্পটি গতবছর ২০২৪ সালের মধ্যে চালুর কথা থাকলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে তা আগামী বছর ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের আগে চালু হওয়া কঠিন বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা। ফলে প্রতি বছর গড়ে অন্তত ১২৬ কোটি টাকার রাজস্ব গচ্চা যাবে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

মতিঝিল–কমলাপুর অংশে শতকরা ৫০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। ১৭৭টি পিলার, ৬১টির মধ্যে ৫৯টি পাইল ক্যাপ এবং ৩৯টির মধ্যে ৩৭টি পিয়ারের কাজ শেষ। প্রিকাস্ট সেগমেন্ট তৈরি হলেও ২৭টির মধ্যে মাত্র ৫টি স্প্যান স্থাপন হয়েছে এবং ১৮০ মিটার ট্র্যাক স্ল্যাবের মধ্যে মাত্র ৪৫ মিটার ঢালাই হয়েছে। পিলারের ওপর ভায়াডাক্ট স্থাপনের কাজ এখনো শুরু হয়নি।

এমআরটি লাইন-৬ মূলত উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ। কমলাপুর অংশ যুক্ত হলে এটি দেশের কেন্দ্রীয় রেল হাবের সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত হবে, যা আন্তঃজেলা যাত্রীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

তবে চুক্তি চূড়ান্ত না হওয়ায় স্থবিরতা দেখা দিয়েছে সব কাজে। ‘ঠিকাদার বাড়তি অর্থ দাবি করছে, কিন্তু এখনো কোনো চুক্তি হয়নি,’ জানিয়েছেন এক কর্মকর্তা।

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোহাম্মদ ফওজুল কবীর খান বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত হয়েছেন। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মনে করছেন, নতুন দরপত্র দিলে খরচ ও সময় আরও বাড়তে পারে।

বুয়েটের অধ্যাপক ড. হাদিউজ্জামান সতর্ক করে বলেন, ‘প্রকল্পে দফায় দফায় দেরি হলে জনআস্থা ও কার্যকারিতা দুইই কমে যায়। সময়মতো বাস্তবায়ন না হলে মেট্রোর লক্ষ্যই ব্যাহত হবে।’

মেট্রোরেল প্রথম দফায় ২০২২ সালে ডিসেম্বরে উত্তরা–আগারগাঁও অংশ চালু হয়, পরে ২০২৩ সালের নভেম্বরে এটি উত্তরা-আগারগাঁও-মতিঝিল পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়। বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে ৪ লাখ যাত্রী ঢাকা মেট্রোরেল ব্যবহার করে।

 

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *