বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, কথিত অল্প ও বেশি সংস্কারের আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে জাতীয় নির্বাচন। গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা নিয়ে বিভিন্ন টালবাহানা চলছে। জনগণ বিশ্বাস করতে শুরু করেছে যে, সংস্কার নিয়ে সময় ক্ষেপণের আড়ালে সরকারের ভেতরে ও বাইরে কিছু ভিন্ন উদ্দেশ্য রয়েছে।
বুধবার বিকেলে নয়াপল্টনে ‘তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশে’ লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন। আগামী নির্বাচনের জন্য বিএনপি নেতাকর্মীদের তিনি প্রস্তুতি নিতে বলেন।
‘দিল্লি নয়, পিন্ডি নয়, নয় অন্য কোনো দেশ, সবার আগে বাংলাদেশ।’ -তারেক রহমান এই স্লোগান দিয়ে তার বক্তব্য শেষ করেন।
সমাবেশে তারেক রহমান বলেন, ‘আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে, আবারো বলছি, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন হবে। এজন্য বিএনপি নেতাকর্মী ও যুব সমাজকে প্রস্তুতি নিতে হবে।’
সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘জনগণের বিশ্বাস ও ভালোবাসা নষ্ট হয় এমন কোনো পদক্ষেপ অন্তর্বর্তী সরকারের নেয়া ঠিক হবে না। গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক দলগুলোকে প্রতিপক্ষ বানাবেন না। আপনাদের কেউ নির্বাচন করতে চাইলে সরকার থেকে বের হয়ে এসে নির্বাচন করুন।’
‘এখানে যে তরুণ সমাজ উপস্থিত তারা, দেশে নতুন ভোটাররা আজ পর্যন্ত একটি নির্বাচনে ভোট দিয়ে জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করার সুযোগ পায়নি। অতীতে পলাতক সরকারের কাছেও নির্বাচন কোনো গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এ পর্যন্ত জাতীয় নির্বাচন নিয়ে দৃশ্যমান কিছু আমরা দেখতে পাচ্ছি না।’

তিনি বলেন, ‘অতীতে দেখেছি তত্ত্বাবধায়ক সরকার তিন মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন করেছে। এখন আমরা দেখছি ১০ মাস পার হয়ে গেলেও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করছে না। আমরা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ একটি সরকার দেখতে চাই।’
‘পলাতক স্বৈরাচরের সময় আমরা দেখেছি, তারা কীভাবে আদালতকে অবজ্ঞা করেছে। ইশরাক হোসেনের মেয়র পদে শপথ নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের আদালত অবমাননা স্বৈরাচারের সময়ের পুনরাবৃত্তি বলে আমরা মনে করি। যারা আইনের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেন না, তাদের প্রতি আমরা কতটুকু সংস্কার আশা করতে পারি। আমরা মনে করি, পুঁথিগত সংস্কারের চেয়ে ব্যক্তিগত মানসিকতার সংস্কার জরুরি।’
তারেক বিএনপির প্রস্তুতি প্রসঙ্গে বলেন, ‘তরুণ জনগোষ্ঠীকে প্রাধান্য দিয়ে বিএনপি সব কাজ করছে। তরুণ প্রজন্মের কাছে কর্মপরিকল্পনা তুলে দিতে গত এক মাস বিভাগী শহরে তারুণ্যের সমাবেশ করেছে। তার আগের দিন ভিন্ন মতাদর্শের তারুণ্যের প্রতিনিধিদের নিয়ে করেছে সেমিনার। কীভাবে দেশকে এগিয়ে নেওয়া যায়, সে মতামত দিয়েছেন তারা।’
‘প্রবীণদের অভিজ্ঞতা ও নবীনদের তারুণ্যকে সমন্বয়ক করে একাত্তর থেকে চব্বিশের আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ গড়ে তোলা হবে। সম্ভাবনাকে সামনে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। এখন আর কথামালার রাজনীতি চলবে না। এখন করতে হবে দৃষ্টান্ত স্থাপন।’
তিনি বলেন, ‘নারী-পুরুষের জন্য কর্মসংস্থান, ক্ষুদ্র কুটির শিল্প স্থাপনসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে আমরা এগোতে চাই। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে পরিবারের নারী প্রধানকে ফ্যামিলি কার্ড দেওয়া হবে। প্রতিমাসে রাষ্ট্রীয়ভাবে সহযেগিতা করা হবে। এতে করে পরিবারগুলো কিছুটা স্বাবলম্বী হবে। কৃষকদের জন্য দেওয়া হবে ফার্মার্স কার্ড।’
তারেক বলেন, ‘উন্নয়ন ও উৎপাদনের রাজনীতি শুরু করেছেন জিয়াউর রহমান। জনগণই বিএনপির মূল ভিত্তি। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে দেশ ও জনগণের কাছে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী রাষ্ট্র গঠন করবে। সরকারি ও প্রাইভেট সেক্টরকে সমন্বয়ে কাজ করছে বিএনপি। খাল খনন ও বৃক্ষ রোপণকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। প্রতি পাঁচ বছরে ২৫-৩০ কোটি বৃক্ষ রোপণ করা হবে।’
বিএনপির তিন সহযোগী সংগঠন ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল এ সমাবেশের আয়োজন করে। এতে ঢাকা, সিলেট, ফরিদপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগের বিভিন্ন জেলার নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করেন।
সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ড. আবদুল মঈন খান, মির্জা আব্বাস, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও সালাউদ্দিন আহমেদ।
যুবদল সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্নার সভাতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মোহম্মদ নুরুল ইসলাম নয়ন ও ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব। সমাবেশের যৌথ সঞ্চালনায় ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান ও ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির।