ইসরায়েলের রক্তক্ষয়ী সামরিক অভিযানের বিরুদ্ধে গাজাবাসীর প্রতি সংহতি জানিয়ে করাচির প্রধান সড়কগুলোতে বিশাল বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেন হাজার হাজার মানুষ। রোববার (১৩ এপ্রিল) পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামী (জেআই) এবং জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম-ফজল (জেইউআই-এফ) এর আয়োজনে শহরের শাহরাহ-ই-ফয়সল এবং শাহরাহ-ই-কায়েদিনে পৃথক এই কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। দেশটির প্রভাবশালী সংবাদ মাধ্যম দ্য ডন এ তথ্য জানিয়েছে।
গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাসের আকস্মিক হামলার জবাবে ইসরায়েলের অভিযান শুরু হয়, যাতে এ পর্যন্ত ৫০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ধ্বংস হয়েছে গাজার অধিকাংশ ঘরবাড়ি ও হাসপাতাল। এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে হাজারো মানুষ আটকে আছেন, যাদের অধিকাংশই মারা গেছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
জেআই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, দলটির আমির হাফিজ নাঈমুর রহমানের ডাকে আইনজীবী, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, চিকিৎসকসহ সব শ্রেণিপেশার হাজারো মানুষ মিছিলে অংশ নেন। শাহরাহ-ই-ফয়সলের একটি পাশ শুধু নারী ও শিশুদের জন্য বরাদ্দ ছিল। একটি ওভারহেড ব্রিজের নিচে গাজার নিহত শিশুদের ভাস্কর্যও প্রদর্শন করা হয়। পাশাপাশি স্ক্রিনে প্রদর্শিত হয় প্রামাণ্যচিত্র।
হাফিজ নাঈম সমাবেশের বক্তব্যে বলেন, ‘গাজার জনগণ অমানবিক যন্ত্রণা সহ্য করছে। প্রায় ৭০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।’ তিনি জাতিসংঘের ভূমিকা নিষ্ক্রিয় বলে আখ্যা দেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতায় ইসরায়েলের নিষ্ঠুরতা চলমান বলেও অভিযোগ করেন।
নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘গাজার পর ইসরায়েল অন্য মুসলিম দেশগুলোকে হুমকি দেবে। তাই এখনই ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নিতে হবে।’ তিনি একটি যৌথ বৈশ্বিক কৌশল প্রণয়নের জন্য বিশ্বের মুসলিম নেতৃত্বকে এক প্ল্যাটফর্মে আসার আহ্বান জানান।
তিনি আরও বলেন, ‘তহবিল, একটি টুইট, ভিডিও বার্তা বা ফোনকল – সবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি পদক্ষেপই ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের অংশ।’
পাকিস্তান সরকারকে তিনি দ্বিচারিতা বাদ দিয়ে সাহসী পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান এবং স্মরণ করিয়ে দেন যে, ‘পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা কায়েদে আজম ইসরায়েলকে অবৈধ রাষ্ট্র বলে স্বীকৃতি দেননি।’
বক্তৃতার শেষে তিনি করাচিবাসীকে ইসরায়েলি পণ্য বর্জনের ডাক দেন এবং ২২ এপ্রিল সারাদেশে হরতালের ঘোষণা দেন।
অন্যদিকে জেইউআই-এফ প্রধান মাওলানা ফজলুর রহমান বলেন, ‘ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ও ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি প্রকাশে আমাদের সংগ্রাম চলবে।” তার দল আয়োজিত ‘ডেথ টু ইসরায়েল’ মিছিলে তিনি কায়েদে আজমের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন এবং বলেন, “গাজার মুসলমানদের নৈতিক, কূটনৈতিক ও সর্বপ্রকার সহায়তা আমাদের দায়িত্ব।’
তিনি আরও বলেন, ‘ফিলিস্তিনিরা একা নয়। আমরা তাদের সঙ্গে আছি শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত।’
দুই মিছিলেই হাজারো মানুষ ফিলিস্তিনের পতাকা ও ইসরায়েল বিরোধী পোস্টার বহন করেন। চারপাশে টানানো ছিল বিশাল ব্যানার ও স্লোগান।