জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ‘শাটডাউনসহ’ সব কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছে আন্দোলনরত এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ। রোববার রাতে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। এর ফলে প্রায় দুই মাস ধরে চলা আন্দোলনের অবসান হলো।
এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ এবং দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিদলের নেতারা এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়া হয়। রাজধানীর তেজগাঁওয়ের বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।
এতে ব্যবসায়ীদের পক্ষে বক্তব্য দেন বিসিআই সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী পারভেজ ও এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সভাপতি ও অতিরিক্ত কমিশনার হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন, বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান, দেশের শীর্ষস্থানীয় চামড়াজাত পণ্য প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান এপেক্স ফুটওয়্যারের এমডি ও মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সহসভাপতি মির্জা আশিক রানা প্রমুখ।
এর আগে, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে দ্বিতীয় দিনের মতো রোববারও চলে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ ও ‘মার্চ টু এনবিআর কর্মসূচি’।
রাজস্ব বোর্ডের সংস্কার রোধ ও চেয়ারম্যানের অপসারণের দাবিতে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে আন্দোলনকারীরা আগারগাঁওয়ের প্রধান কার্যালয়ের বাইরে অবস্থান নেন তারা। এতে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে রাজস্ব আহরণ কার্যক্রম।
রোববার অন্তর্বর্তী সরকার এক বিবৃতিতে কঠোর বার্তা দেয় আন্দোলনকারীদের। এতে বলা হয়, রাজস্ব আদায় কার্যক্রম অন্যায় ও অনৈতিকভাবে মারাত্মক ব্যাহত করে আন্দোলনের নামে চরম দুর্ভোগ তৈরি করেছে, যা সম্পূর্ণভাবে অগ্রহণযোগ্য বলে জানিয়েছে অন্তবর্তী সরকার। রোববার এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সরকার গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছে, রাজস্ব সংস্কারের কাজকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ নজিরবিহীনভাবে গত ২ মাস ধরে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, আমদানি-রপ্তানি ও রাজস্ব আদায় কার্যক্রম অন্যায় ও অনৈতিকভাবে ব্যাহত করে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করে আন্দোলনের নামে চরম দুর্ভোগ তৈরি করেছে যা সম্পূর্ণভাবে অগ্রহণযোগ্য।’
বাংলাদেশের বাজেট ব্যবস্থাপনায় উন্নয়নমুখী কার্যক্রম পরিচালনার সবচেয়ে বড় সীমাবদ্ধতা হলো দুর্বল রাজস্ব সংগ্রহ ব্যবস্থা। রাষ্ট্রের প্রয়োজনের তুলনায় আমাদের রাজস্ব সংগ্রহ অনেক কম। এর মূল কারণ হলো আমাদের রাজস্ব আহরণ ব্যবস্থাপনার নানা দুর্বলতা, অনিয়ম ও দুর্নীতি, বিবৃতিতে বলা হয়।
এ প্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তী সরকার সব অংশীজনের পরামর্শ অনুযায়ী জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ।
এ পরিস্থিতিতে, অতি জরুরি আমদানি-রপ্তানি ও বৈদেশিক বাণিজ্যের কার্যক্রম চলমান রাখার জাতীয় স্বার্থে সরকার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আওতাধীন সব কাস্টমস হাউস, আইসিডি, বন্ড কমিশনারেট এবং শুল্ক স্টেশনসমূহের সকল শ্রেণির চাকরিকে অত্যাবশ্যকীয় সার্ভিস ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
এদিকে, এ ধর্মঘটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অচলাবস্থায় প্রতিদিন আমদানি-রপ্তানি খাতে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীরা। তারা এই সংকটের দ্রুত সমাধান দাবি করেন।
শনিবার ‘কমপ্লিট শাটডাউন’কর্মসূচিতে দেশের সব ট্যাক্স, কাস্টমস ও ভ্যাট অফিসে আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা ছাড়া বন্ধ হয়ে যায় আয়কর, কাস্টমস ও ভ্যাট কার্যক্রম। আন্দোলনকারীরা চেয়ারম্যানের অপসারণ, ‘দমনমূলক বদলি আদেশ’ বাতিল এবং সংস্কার কমিটিতে তাদের প্রতিনিধি রাখার দাবি জানিয়েছেন।