ঈদুল আজহা উপলক্ষে টানা ১০ দিনের ছুটি পেয়েছে সরকারি-বেসরকারি অফিস ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এ সুযোগে স্বজনদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে রাজধানী ছেড়ে গ্রামে যাচ্ছেন লাখো মানুষ। এর ফলে কর্মব্যস্ত রাজধানী ঢাকা এখন অনেকটাই ফাঁকা।
শুক্রবার সকাল থেকেই রাজধানীর প্রধান বাস টার্মিনালগুলো—গাবতলী, সায়েদাবাদ, মহাখালী এবং মিরপুর, কল্যাণপুর, মাজার রোডে ঘরমুখো মানুষের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। এস আর পরিবহন, শ্যামলী পরিবহন, সুপার সনিসহ বিভিন্ন বাস কাউন্টারে যাত্রীদের দীর্ঘসময় অপেক্ষা করতে দেখা গেছে।

অনেক যাত্রীর অভিযোগ, বাসের নির্ধারিত সময় না মেলায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হচ্ছে। পরিবহন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মহাসড়কের দীর্ঘ যানজটের কারণে শিডিউল বিপর্যয় ঘটছে।
ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কে এ দিনও ধীরগতিতে চলছে যানবাহন। শুক্রবার সকাল থেকে ঘারিন্দা থেকে যমুনা সেতুর পূর্ব পাড় পর্যন্ত প্রায় ২৫ কিলোমিটার এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। অতিরিক্ত গাড়ির চাপ এবং কিছু যানবাহন বিকল হয়ে পড়ায় এ ভোগান্তি আরও বেড়েছে। পুলিশ ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যানজট নিরসনে কাজ করলেও পুরোপুরি স্বস্তি আসেনি।
কমলাপুর রেলস্টেশনে যাত্রীদের ভিড় কিছুটা কমলেও ট্রেন যাত্রীতে ঠাসা। শুক্রবার সকাল থেকে নির্ধারিত সময়েই বেশিরভাগ ট্রেন ছেড়ে যাচ্ছে। একতা এক্সপ্রেস দেড় ঘণ্টা আগেই প্ল্যাটফর্মে চলে আসে। স্টেশনের প্রতিটি প্রবেশপথে কড়া নিরাপত্তা ও দুই স্তরের টিকিট যাচাই কার্যক্রম চলছে। যাত্রীরা ট্রেনে দাঁড়িয়ে, এমনকি ছাদেও উঠছেন। যাদের আগাম টিকিট নেই, তারাও নানা উপায়ে ট্রেনে উঠে যাচ্ছেন।

সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালেও ঈদের আমেজ। ভোর থেকে দুপুর ১১টা পর্যন্ত ২৮টি লঞ্চ ছাড়ে, যেগুলো বরিশাল, ভোলা, চাঁদপুর, লালমোহনসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন গন্তব্যে যাচ্ছে। বিকেল ৩টা পর্যন্ত আরও ৩৫টি লঞ্চ ছাড়ার কথা রয়েছে। সন্ধ্যা ও রাতে লঞ্চ ছাড়ার হার আরও বাড়বে। সদরঘাটে যাত্রীদের নিরাপত্তা ও যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে কোস্টগার্ড, নৌ-পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি জোরদার করা হয়েছে।
ঢাকার রাস্তাগুলো এখন অনেকটাই নীরব। অন্যান্য দিনের তুলনায় যানবাহনের সংখ্যা কমে গেছে। যেসব যানবাহন চলাচল করছে, সেগুলোতেও যাত্রীর সংকট দেখা যাচ্ছে। অনেক গাড়ি ফাঁকা আসন নিয়েই গন্তব্যে যাচ্ছে। নেই যানজট, নেই কোলাহল—চিরচেনা ঢাকা যেন ঈদের ছুটিতে ক্লান্ত শহরের মুখোশ খুলে নিয়েছে।
সবমিলিয়ে, রাজধানী ঢাকা থেকে গ্রামের পথে মানুষের ঈদযাত্রা এখনও অব্যাহত। ট্রেন, বাস ও লঞ্চ—সব মাধ্যমেই যাত্রীদের চাপ রয়েছে। তবে কোথাও কোথাও রয়েছে ভোগান্তিও। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা চলমান রয়েছে। ঈদের আগের দিনগুলোয় আরও বাড়তে পারে যাত্রার চাপ।