অন্তর্বর্তী সরকারকে সতর্ক করলেন মঈন খান

টাইমস রিপোর্ট
4 Min Read
‘ফিরে দেখা রক্তাক্ত জুলাই-আগস্ট: প্রত্যাশা এবং বাস্তবতা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নেতা আব্দুল মঈন খান। ছবি: ইউএনবি

গণতন্ত্রের উত্তরণ আরও বিলম্বিত হলে বাংলাদেশের জনগণ আবার জেগে উঠতে পারে বলে অন্তর্বর্তী সরকারকে সতর্ক করে দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নেতা আব্দুল মঈন খান।

তিনি বলেন, ‘আমি অন্তর্বর্তী সরকারকে অনুরোধ করছি, দয়া করে গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথ দীর্ঘায়িত করবেন না। যদি আপনি তা করেন, তাহলে বাংলাদেশের জনগণ আবার জেগে উঠবে।’

শনিবার রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে ‘ফিরে দেখা রক্তাক্ত জুলাই-আগস্ট: প্রত্যাশা এবং বাস্তবতা’ শীর্ষক আলোচনার আয়োজন করে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি।

মঈন খান বলেন, ‘১৯৭১ সালে বাংলাদেশের জনগণ স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছিল। কারণ, তারা বুঝতে পেরেছিল যে পাকিস্তানের শাসনামলে গণতন্ত্র কখনো বিকশিত হতে পারবে না।’

বাংলাদেশের জনগণ এবং গণতন্ত্রপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য গত পনের থেকে ষোল বছর ধরে সংগ্রাম করে আসছে বলেও সরকারকে স্মরণ করিয়ে দেনে বিএনপির এই নেতা।

তিনি বলেন, ‘সেই প্রত্যাশা কি পূরণ হয়েছে? না…গত এক বছরেও হয়নি। কেন নয়? আমরা অতীতে এমন উদাহরণ দেখেছি যেখানে ৯০ দিনের মধ্যে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আমাদের চোখের সামনে সেই নজির রয়েছে।’

এক বছর পরও কেন দেশ তার গণতান্ত্রিক উত্তরণে এগিয়ে যেতে পারেনি–এমন প্রশ্নও তোলেন মঈন খান।

তিনি বলেন, ‘আমি প্রায়শই ভয় পাই যে এই নতুন ব্যবস্থা স্থায়ী ব্যবস্থায় পরিণত হতে পারে কি না। আমরা পরিবর্তন চাই, কিন্তু সমস্ত পরিবর্তনই প্রকৃত পরিবর্তন নয়। ১/১১-এর সময়, আমরা ঢাকা জুড়ে ব্যানার এবং ফেস্টুন দেখেছি যাতে সবকিছু পরিবর্তন করার, সবকিছু পুনর্গঠনের আহ্বান জানানো হয়েছে। কিন্তু বিশ্বের সবকিছু পরিবর্তন করা যায় না বা করা উচিত নয়।’

বিএনপি নেতা বলেন, ‘যখন অনেকে পরিবর্তনের কথা বলেন, তখন পরিবর্তনের জন্য এটি পরিবর্তন করা উচিত নয়।

তিনি আরও বলেন, ‘যখন আমরা সংস্কারের কথা বলি, তখন আমি বলি সংস্কারগুলো ভাসাভাসা হওয়া উচিত নয়। বাহ্যিক পরিবর্তন ১৮ কোটি মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করবে না। আপনি সংবিধানের কয়েকটি লাইন সংশোধন করতে পারেন-এমনকি পুরো দলিলটিও পুনর্লিখন করতে পারেন—তবে এটি কোনো কাজে আসবে না, যদি না এই দেশ পরিচালনাকারী মানুষের হৃদয় পরিবর্তন হয়।’

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘অতীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে পারত, এমনকি এক বছর অতিবাহিত হওয়ার পরেও দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে কি না সে বিষয়ে নাগরিকদের এখনো আস্থা নেই।

তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করিনি যে বর্তমান সরকার পুরো পরিস্থিতিকে এভাবে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে দেবে। বৈষম্য কমেনি-এটি আরও ছড়িয়ে পড়েছে। দারিদ্র্য বেড়েছে, ক্ষুদার্ত মানুষের সংখ্যা বেড়েছে, বেকারত্ব বেড়েছে এবং সামগ্রিক বিনিয়োগ পরিবেশ নেতিবাচক পর্যায়ে পৌঁছেছে।’

এই হতাশাজনক পরিস্থিতির মধ্যে হক আপাতদৃষ্টিতে একটি সুসংবাদের দিকে ইঙ্গিত করেছেন—মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশি পণ্যের ওপর তার শুল্ক ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করেছে।

তিনি বলেন, ‘আমরা জানি না কী বিনিময় হয়েছে। আমরা জানি না বাংলাদেশ কী দিয়েছে। যদি এই চুক্তিতে এমন কোনো আপসের বিষয় থাকে, যা আমাদের ভবিষ্যতের নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে—তাহলে সরকারকে তা জনসাধারণের সামনে তুলে ধরতে হবে এবং জাতিকে জানাতে হবে। এই শুল্ক হ্রাসের পেছনে কোনো রাজনৈতিক কারণগুলো ভূমিকা রেখেছে—তা প্রকাশ করা উচিত এবং জনগণের কাছে তথ্য উপস্থাপন করা উচিত।’

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *