কান-মঞ্চে বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে যা বললেন আদনান আল রাজীব

টাইমস রিপোর্ট
4 Min Read
কান উৎসবের সংবাদ সম্মেলনে আদনান আল রাজীব । ছবি: কান উৎসবের ওয়েবসাইট

৭৮তম কান চলচ্চিত্র উৎসবের স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র প্রতিযোগিতায় স্পেশাল মেনশন সম্মান পেয়ে অভিনন্দনে ভাসছেন পরিচালক আদনান আল রাজীব। ‘আলী’ তার হাতে এনে দিয়েছে এই সম্মানের একটি সনদ। শনিবার রাতে জয়ের পর কান উৎসবের প্রাণকেন্দ্র পালে দে ফেস্টিভ্যাল ভবনে সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেন তিনি। কানে স্বীকৃতি পাওয়ার প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশের রাজনীতির প্রসঙ্গ তুলে ধরেন এই তরুণ নির্মাতা।

সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন ফরাসি সাংবাদিক দিদিয়ের আলুশ। তার পাশে আদনান আল রাজীব ছাড়াও ছিলেন স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের স্বর্ণপাম জয়ী ইসরায়েলের তৌফিক বারহোম। তবে দিদিয়ের আলুশ প্রথমেই স্পেশাল মেনশন পাওয়ার অনুভূতি জানতে চেয়েছেন। আদনান আল রাজীব বলেন, ‘এই স্বীকৃতি আমাদের জন্য সত্যিকার অর্থেই বিশেষ। বাংলাদেশের জন্যও একই মনে করি। এবারই প্রথম আমরা বড় কিছু অর্জন করলাম। কানের এই সম্মান আমাদের জন্য স্বপ্নের মতো কিছু।’

কান উৎসবের সংবাদ সম্মেলনে (বাঁ থেকে) দিদিয়েঁর আলুশ, তৌফিক বারহোম ও আদনান আল রাজীব । ছবি: কান উৎসবের ওয়েবসাইট

এরপর বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রসঙ্গ টেনে আনেন আদনান আল রাজীব। তার কথায়, ‘বাংলাদেশ এখন অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এমন অবস্থায় দেশের নাগরিকরা স্বস্তির হাওয়া খুঁজছেন। কানে এই স্বীকৃতি পাওয়ায় সেটা অনুভব করতে পারবেন তারা। আমি মনে করি, আমাদের অর্জন মানুষের মাঝে আশা ও ইতিবাচক মনোভাব তৈরি করে দিতে পারে।’

‘আলী’ কাকে উৎসর্গ করবেন জানতে চাইলে আদনান আল রাজীব বলেন, ‘যারা নিপীড়িত ও চুপ থাকতে বাধ্য হয় তাদের প্রতি এই স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র উৎসর্গ করছি। মানুষের সোচ্চার হওয়া, বলিষ্ঠ ও স্পষ্টভাবে কথা বলায় আমরা বিশ্বাসী। এটাই সবক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। ‘আলী’ সেসব মানুষকে উৎসর্গ করছি যাদের কথা বলতে দেয়া হয় না। মানুষ যেন নিজেদের কণ্ঠস্বরে সব বলতে পারে সেজন্যই আমরা এই স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র বানিয়েছি।”

স্পেশাল মেনশন সম্মান প্রাপ্তির পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আদনান আল রাজীব লিখেছেন, ‘এটি বাংলাদেশের জন্য। কান উৎসবে ধন্যবাদ।’

কান উৎসবের মূলকেন্দ্র পালে দে ফেস্টিভ্যাল ভবনের ছাদে ‘আলী’ টিম । ছবি: রানআউট ফিল্মস

এবারের আসরে জমা পড়ে ৪ হাজার ৭৮১টি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। এর মধ্য থেকে প্রতিযোগিতার জন্য নির্বাচিত হয়েছে ১১টি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। বাংলাদেশের ‘আলী’ সেগুলোরই একটি। ১৫ মিনিট দৈর্ঘ্যের ছবিটির গল্প এক কিশোরকে কেন্দ্র করে। বাংলাদেশের উপকূলীয় একটি শহরে বসবাস করে সে, যেখানে নারীদের গান গাওয়ার অনুমতি নেই। আলী শহরে পাড়ি জমানোর সুযোগ পেতে গানের একটি প্রতিযোগিতায় নাম লেখায়। চমকপ্রদ ব্যাপার হলো, সে নারীকণ্ঠেও গাইতে পারে!

এবারের আসরের স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ও লা সিনেফ বিভাগের প্রধান বিচারক জার্মান পরিচালক মারেন আদে ‘আলী’ ও আদনান আল রাজীবকে স্পেশাল মেনশন প্রদানের ঘোষণা দেন। তখন মিলনায়তন ভর্তি অতিথিরা করতালি দিলে আদনান আল রাজীব আসন থেকে উঠে দাঁড়ান। তাকে জড়িয়ে ধরেন ‘আলী’র অন্যতম প্রযোজক তানভীর হোসেন। গ্র্যান্ড থিয়েটার লুমিয়েরে আরো ছিলেন স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ও লা সিনেফ বিভাগের বিচারক আমেরিকান পরিচালক রেইনাল্ডো মার্কাস গ্রিন, ফরাসি গায়িকা-অভিনেত্রী ক্যামেলিয়া জর্ডানা, স্প্যানিশ প্রযোজক হোসে মারিয়া প্রাদো গার্সিয়া, ক্রোয়েশিয়ান পরিচালক নেবয়শা স্লিয়েপসেভিচ।

আদনান আল রাজীব ও ‘আলী’র দৃশ্য । ছবি: রানআউট ফিল্মস

গত ২৩ মে পালে দে ফেস্টিভ্যাল ভবনের দুবুসি থিয়েটারে স্থানীয় সকাল ১১টায় ও বাজিন থিয়েটারে দুপুর ১টায় এবারের আসরে নির্বাচিত স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রগুলোর প্রদর্শনী হয়েছে। ‘আলী’র প্রদর্শনীতে আদনান আল রাজীবের সঙ্গে ছিলেন নাম ভূমিকায় অভিনয় করা নোয়াখালীর ছেলে আল আমিন, প্রযোজক তানভীর হোসেন, নির্বাহী প্রযোজক মো. হাবিবুর রহমান, চিত্রগ্রাহক কামরুল হাসান খসরু, শিল্প নির্দেশক শিহাব নুরুন নবী, কস্টিউম ডিজাইনার আনিকা জাহিন, লাইন প্রোডিউসার নিকিতা আহমেদ ও প্রধান সহকারী পরিচালক মিরাজ হোসেন।

কানের অফিসিয়াল সিলেকশনে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র বিভাগে ‘আলী’র মাধ্যমে প্রথমবার জায়গা পেয়েছে বাংলাদেশ। ২০২১ সালে আঁ সাঁর্তে রিগা বিভাগে নির্বাচিত আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সাদের ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ ছিল কানের অফিসিয়াল সিলেকশনে বাংলাদেশের প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। ২০০২ সালে প্রয়াত তারেক মাসুদের ‘মাটির ময়না’ সমান্তরাল বিভাগ ডিরেক্টর’স ফোর্টনাইটে ফিপরেসি পুরস্কার জিতেছে।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *