২০২৩ সালের ৯ মে পাকিস্তানের বিভিন্ন শহরে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনায় হামলা চালায়। এর বেশিরভাগই সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিল। রাওয়ালপিন্ডির জেনারেল হেডকোয়ার্টার্স ও লাহোরে এক জেনারেলের বাসভবনে আগুন লাগানো হয়।
এ বিক্ষোভ ছিল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) কর্মীদের। দুর্নীতির অভিযোগে আটক নেতা ইমরান খানের মুক্তির দাবিতে তারা মাঠে নেমেছিল।
এই প্রতিবাদ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দীর্ঘদিনের আধিপত্যের বিরুদ্ধে এক নজিরবিহীন চ্যালেঞ্জও ছুঁড়ে দেয়।
ঠিক দুই বছর পরের ঘটনা।
২০২৫ সালের ১১ মে পাকিস্তানের রাস্তায় একই রকম জনসমাবেশ হলেও এবার তা ছিল উৎসবমুখর, সেনাবাহিনীর প্রশংসায় মুখর। ভারতের সঙ্গে কয়েক দিনের তীব্র সামরিক সংঘর্ষে পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে ‘দেশরক্ষার প্রতীক’ হিসেবে অভিনন্দন জানানো হচ্ছিল তাদের।

গ্যালাপ পাকিস্তানের এক জরিপে দেখা যায়, অংশগ্রহণকারী ৯৬ শতাংশই মনে করছে পাকিস্তান এই সংঘর্ষে জয়ী হয়েছে; ৯২ শতাংশ বলেছে, সেনাবাহিনী সম্পর্কে তাদের ধারণা উন্নত হয়েছে।
‘কালো দিন’ থেকে ‘ন্যায়ের যুদ্ধ দিবস’
৮ মে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘর্ষ চূড়ান্ত রূপ নেয়। ভারতীয় কাশ্মীরে এক হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর ভারত পাকিস্তানের মাটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। পাকিস্তানও চালায় পাল্টা হামলা। চার দিনের সংঘর্ষে ৫০ জনের বেশি নিহত হন। শেষ পর্যন্ত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ঘোষিত হয় যুদ্ধবিরতি।
পরদিন ১০ মে পাকিস্তান সরকার দিনটিকে ঘোষণা করে ‘ন্যায়ের যুদ্ধ দিবস’, যা ২০২৩ সালের ৯ মে ঘোষিত ‘কালো দিবসের’ সম্পূর্ণ বিপরীত।
প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ সেনাবাহিনীর ভূমিকাকে ‘সোনালি অধ্যায়’ আখ্যা দেন। তিনি বলেন, ‘পুরো জাতি এখন সীসার প্রাচীরের মতো সেনাবাহিনীর পাশে দাঁড়িয়ে।’
সেনাবাহিনীর ভারতবিরোধী অভিযানের নাম দেওয়া হয় “বুনইয়ান মারসুস”।

জেলে থাকা ইমরান খানও এই সময়ে এক বিবৃতিতে সেনাবাহিনীর পাশে থাকার আহ্বান জানান।
সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব বনাম রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ
১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা-পরবর্তী পাকিস্তানে সেনাবাহিনী সবসময়ই দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচিত।
তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, বিশেষ করে ইমরান খানের সাথে সম্পর্ক খারাপ হওয়ার পর, এই ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ হতে থাকে। ২০২৩ সালের মে মাসে পিটিআই সমর্থকদের দাঙ্গার পর সেনাবাহিনী ব্যাপক ধরপাকড় চালায়। অনেককে সামরিক আদালতে শাস্তি দেওয়া হয়।
কিন্তু দুই বছরের মধ্যে পাল্টে গেছে পরিস্থিতি।

যুদ্ধ ও জনমত: স্থায়ী না ক্ষণস্থায়ী?
বিশ্লেষকরা বলছেন, যুদ্ধকালীন ‘জাতীয়তাবাদী উচ্ছ্বাস’ দীর্ঘস্থায়ী নাও হতে পারে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক বদর আলম বলেন, ভারতের হুমকি যতদিন থাকবে, পাকিস্তানে সেনাবাহিনী অপরিহার্য থাকবে।
তবে এটি স্পষ্ট নয় যে, সাম্প্রতিক জনপ্রিয়তা সেনাবাহিনীর ঘরোয়া রাজনৈতিক অবস্থানকে কতটা প্রভাবিত করবে; বিশেষ করে ইমরান খানের মূল সমর্থকদের চোখে। আলম বলেন, ‘আমরা ভারতের সঙ্গে চিরস্থায়ী সংঘর্ষে থাকতে পারি না। আমাদের অর্থনীতি মেরামত করতে হবে, নইলে সেটাই অস্তিত্বের সংকটে পরিণত হবে।’
ভারতের সঙ্গে সাম্প্রতিক সংঘর্ষ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জনপ্রিয়তা বাড়িয়েছে। কিন্তু বিশ্লেষকদের মতে এটি সাময়িক। ঘরোয়া রাজনৈতিক পরিবেশ ও ইমরান খানের জনপ্রিয়তাও সামরিক ভাবমূর্তির স্থায়িত্ব নির্ধারণে বড় নির্ধারক হয়ে উঠবে।
সূত্র: আল জাজিরা