মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের জন্য ‘মানবিক করিডোর’ দেওয়া এবং চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার টার্মিনাল ‘বিদেশি কোম্পানির হাতে দেওয়ার’ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
শনিবার রাতে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) অষ্টম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন। রাজধানীর গুলশানে একটি হোটেলে আয়োজন করা এই অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন তারেক রহমান।
অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করে তারেক রহমান বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে করিডোর প্রদান কিংবা বন্দর ব্যবস্থাপনা বিদেশির হাতে তুলে দেওয়াটাকেই বেশি প্রাধান্য বলে মনে হচ্ছে। আমরা আবারও স্পষ্ট করে জানিয়ে দিতে চাই, করিডর কিংবা বন্দর দেওয়া না-দেওয়ার সিদ্ধান্ত অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ নয়, এই সিদ্ধান্ত নেবে জনগণের ভোটে নির্বাচিত জাতীয় সংসদ বা জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার। গণতান্ত্রিক বিশ্বে শেষ পর্যন্ত রাজনীতিবিদেরাই রাষ্ট্র পরিচালনা করেন।’
‘সরকার কিন্তু কোনো একটি এলিট ক্লাব কিংবা করপোরেট প্রতিষ্ঠান নয়। সরকার অবশ্যই একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। এই রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে দেশের প্রতিটি নাগরিকের সরাসরি অংশগ্রহণ নিশ্চিত থাকতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের চিন্তা ও কর্মপরিকল্পনা সম্পর্কে জনগণ অন্ধকারে থাকায় দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে হয়তো অস্থিরতা বাড়ছে। বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে প্রতিদিন বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ রাজপথে জড়ো হচ্ছেন। মাত্র ১০ মাসের মাথায় সরকারের ভেতরে ও বাইরে একধরনের অস্থিরতা দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। সরকার জনগণের ভাষা, আশা–আকাঙ্ক্ষা উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হলে রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়তেই থাকবে।’
জাতীয় নির্বাচনের সুস্পষ্ট তারিখ ঘোষণার দাবি জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন,‘পরিস্থিতি অযথা ঘোলাটে না করে জাতীয় নির্বাচনের সুস্পষ্ট তারিখ ঘোষণা করুন। গণতন্ত্রের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলো, যারা দীর্ঘ দেড় দশক ধরে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামে একসঙ্গে আমরা রাজপথে ছিলাম, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সামর্থ্য ও সক্ষমতা সম্পর্কে আমরা এখনো নেতিবাচক মন্তব্য করিনি। আমাদের অবস্থান থেকে আমরা চুপ থাকলেও জনমনে এই সরকারের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন এরই মধ্যে উঠেছে। গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারের সদিচ্ছা কিংবা সামর্থ্য নিয়ে ইতিমধ্যে হয়তো জনগণের মধ্যে কিছুটা হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। বহু মানুষ, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এরই মধ্যে কথা বলছেন। দেশে এভাবে অস্থিরতা বাড়লে সরকারের পক্ষে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে।’
সরকার জাতীয় নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট দিন-তারিখ ঘোষণাকে সুকৌশলে ‘অল্প সংস্কার’,‘বেশি সংস্কার’-এ ধরনের অভিনব এক শর্তের বেড়াজালে আটকে দিয়েছে- বলে মন্তব্য করেন তিনি।
দেশের বিনিয়োগ পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তারেক রহমান বলেন, ‘ব্যাপক আয়োজনে বিনিয়োগ সম্মেলন করলেও কাঙ্ক্ষিত বিনিয়োগ কিন্তু আসেনি। দেশি কিংবা বিদেশি বিনিয়োগ পরিবেশের জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং স্থিতিশীল একটি সরকার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সরকার এনবিআরের সংস্কার শুরু করেছে। এনবিআর সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে হয়তো কারও কোনো তেমন দ্বিমত নেই। কিন্তু সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ–আলোচনা, সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও পরিণতি চিন্তা না করে তড়িঘড়ি করে সংস্কার শুরু করে দেওয়ায় পুরো বিষয়টি হিতে বিপরীত হয়েছে, যা এরই মধ্যে আমরা সংবাদপত্রের মাধ্যমে পরিষ্কারভাবে দেখতে পাচ্ছি।’
গণ–অভ্যুত্থানে শহীদদের সংখ্যা ও তালিকা অন্তর্বর্তী সরকার ১০ মাসেও চূড়ান্ত করতে না পারার ঘটনায় হতাশা প্রকাশ করেন তিনি। এ বিষয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘এটা সরকারের সক্ষমতার অভাব নাকি হতাহতদের ব্যাপারে উদাসীনতা; তা দেশের মানুষের একটা বড় জিজ্ঞাসা।’
এনডিএমের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে দলের মহাসচিব মোমিনুল আমিন, উচ্চ পরিষদ সদস্য পারভেজ খান, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খানসহ বিভিন্ন দলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
