অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত বহুল আলোচিত দুর্নীতির মামলার অভিযোগ গঠনের আদেশ বাতিল করেছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, মামলাটি ‘মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন’। আদালত মনে করেছে, ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর দুর্নীতি দমন কমিশন–দুদকের তড়িঘড়ি করে মামলা প্রত্যাহারের যে উদ্যোগ, সেটি যথাযথ ছিল না।
বুধবার (২৩ এপ্রিল) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন চার বিচারকের আপিল বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করে। এর মাধ্যমে হাই কোর্টের আগের রায়ও বাতিল হয়, যেখানে মামলার কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়ার নির্দেশ ছিল।
রায়ের পর ইউনূসের আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘আপিল বিভাগ অত্যন্ত স্পষ্ট ভাষায় বলেছে, এই মামলাটি মিথ্যা, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ভিত্তিহীন। এটি ছিল একটি সম্মানহানির প্রচেষ্টা, যার পরিণতি আজ জনসমক্ষে প্রকাশ পেল।’
তিনি আরও জানান, মামলাটি গোপনে প্রত্যাহার করা হয়নি, বরং ইউনূস নিজেই চেয়েছিলেন আইনগত প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে তা নিষ্পত্তি হোক।
২০২৩ সালের ৩০ মে দুদকের উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। অভিযোগ ছিল, গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ইউনূস ও ১৩ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী শ্রমিক-কর্মচারীদের লভ্যাংশের ২৫ কোটি ২২ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে অর্থ স্থানান্তর করেছেন।
এ মামলায় ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪-এর বিচারক সৈয়দ আরাফাত হোসেন ২০২৪ সালের ১২ জুন অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন।
পরে ওই আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন করলে সেটি খারিজ হয় ২৪ জুলাই। এরপরই ইউনূস আপিল বিভাগের দ্বারস্থ হন এবং লিভ টু আপিল গ্রহণ করা হয়।
৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বদলে যায়, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে মুহাম্মদ ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
এই নতুন বাস্তবতায় দুদক নিজেই মামলাটি প্রত্যাহারের আবেদন করে। গত বছরের ১১ আগস্ট ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ সেই আবেদন মঞ্জুর করে মামলা প্রত্যাহার করে নেয়। পরে আপিল বিভাগ ২১ অক্টোবর মামলাটির পূর্ণাঙ্গ শুনানির দিন ধার্য করে।
অবশেষে বুধবার আপিল বিভাগ সর্বসম্মতভাবে মামলাটি বাতিল করে। আদালতের ভাষ্য অনুযায়ী, মামলাটি শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য করা হয়েছিল, যাতে ড. ইউনূসকে সামাজিক ও আন্তর্জাতিক পরিসরে বিব্রত করা যায়।
এ রায়ের মাধ্যমে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ভিত্তিতে দায়ের হওয়া একটি মামলার পরিসমাপ্তি ঘটল বলে মনে করছে ইউনূসপক্ষ। একইসঙ্গে এটি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আদালতের আস্থারও প্রতিফলন বলে বিশ্লেষণ করছেন অনেকেই।