প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা ও কবি রফিক আজাদের স্মৃতিমাখা ধানমণ্ডির একটি বাড়ির একাংশ ভেঙে ফেলা হয়েছে। বাড়িটিতে প্রায় ৩৭ বছর সপরিবারে বসবাস করেছেন রফিক আজাদ।
রফিক আজাদের পরিবার টাইমস অব বাংলাদেশকে জানিয়েছে, বুধবার (১৬ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বাড়িটি ভাঙার কাজ শুরু করে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে মামলা চলমান থাকলেও তা আমলে নেয়া হয়নি।
চার ইউনিটের বাড়িটির একটিতে থাকেন কবির স্ত্রী দিলারা হাফিজ। বাকি তিন ইউনিট অন্যদের নামে বরাদ্দ রয়েছে। বুধবার বাড়িটির পূর্বাংশের দুটি ইউনিট গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
ধানমণ্ডির ১ নম্বর সড়কের ১৩৯/৪এ ঠিকানার বাড়িটিতে (পশ্চিমাংশ) কমবেশি ৫ কাঠা পরিমাণ জায়গা রয়েছে।
এ দিন বিকেলে সরেজমিনে ধানমণ্ডির বাড়িটিতে গেলে রফিক আজাদের পরিবার জানায়, সকালে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রট তৈয়ব-উর-রহমান আশিকের নেতৃত্বে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের ৩০ থেকে ৪০ জনের একটি দল বাড়ি ভাঙার কাজ শুরু করে। তখন পুলিশ ধানমণ্ডি ১ নম্বরের সড়কটি বন্ধ করে দেয়। বাড়িটির গ্যাস ও বিদ্যুতের লাইন বন্ধ রাখা হয়। পরে সন্ধ্যার দিকে বাড়িটিতে বিদ্যুতের লাইন আসে।
রফিক আজাদের স্ত্রী দিলারা হাফিজ টাইমস অব বাংলাদেশকে বলেন, ‘এই বাড়িতে রফিক আজাদের অনেক স্মৃতি। কবিশুন্য এই বাড়িটিতে তার সকল স্মৃতি আঁকড়ে বেঁচে আছি আমি। প্রতি বছর ফাল্গুনে রফিক আ জাদের জন্মদিন পালন করা হয়। আমাদের দুই সন্তান প্রবাসী, তারাও বিদেশ থেকে বাবার জন্মদিন পালন করতে এখানে আসতো। আজ যা হলো তা অকল্পনীয়।’
কান্না জড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘এই বাড়ি থেকে রফিক আজাদের লাশ বের হয়েছে, আমি মারা গেলে সরকার বাড়িটি নিয়ে বহুতল ভবন করতে পারত। আমার সন্তানরা কিছুই বলত না। আজ এলাকাবাসীর সামনে আমাদের হেয় করা হয়েছে। দেশ স্বাধীন করল যে, তাকেই আজ উচ্ছেদ করা হলো।’
দেশের অন্যতম প্রধান কবি এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা কবি রফিক আজাদের সার্বিক অবদান মূল্যায়ন করে তার স্মৃতি সংরক্ষণ ও ধারণের জন্যে বাড়িটির অংশবিশেষের স্থায়ী বন্দোবস্তের জন্য সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন দিলারা হাফিজ।
জানা যায়, ১৯৮৮ সালে একতলা এ বাড়িটি রফিক আজাদের স্ত্রী কবি দিলারা হাফিজের নামে সাময়িকভাবে বরাদ্দ দেয় ‘এস্টেট অফিস’। দিলারা হাফিজ তখন ইডেন কলেজে প্রভাষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
সে সময় সহকারী পরিচালক এম বেগমের স্বাক্ষর করা এ বরাদ্দনামায় উল্লেখ করা হয়, এই বরাদ্দের দ্বারা বাসার ওপর কোনো অধিকার বর্তাবে না, তবে পরবর্তী আদেশ না হওয়া পর্যন্ত সেখানে বসবাস করতে পারবেন।
দিলারা হাফিজ টাইমস অব বাংলাদেশকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন পর বাড়িটি নিজের বলে দাবি করেন সৈয়দ নেহাল আহাদ নামের এক ব্যক্তি। ২০১২ সালে নিজের মালিকানার পক্ষে আদালতের রায় পান তিনি। এ নিয়ে সৈয়দ নেহাল, হাউজিং অ্যান্ড পাবলিক ওয়ার্কস এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে বিবাদী করে মামলা করেন দিলারা হাফিজ। এর ফলে আদালত বাড়িটির ওপর স্থিতাবস্থা দেন। পরের বছর এই স্থিতাবস্থা স্থায়ী করেন আদালত।’
পরে মামলাটি ঢাকার সপ্তম সহকারী জজ আদালতে স্থানান্তরিত হয়। আগামী মে মাসের ২৫ তারিখ এ মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের কথা রয়েছে। এইসব তথ্য উল্লেখ করে মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, একই মন্ত্রণালয়ের সচিব ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর পৃথক চিঠি দেন দিলারা হাফিজ। এর মাঝেই বুধবার সকালে বাড়িটি উচ্ছেদে অভিযান চালানো হয়।
এ বিষয়ে জানতে উচ্ছেদ অভিযানের নেতৃত্বে থাকা জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের ম্যাজিস্ট্রট (সিনিয়র সহকারী সচিব) তৈয়ব-উর-রহমান আশিককে কয়েকবার মোবাইলে কল করা হলেও তিনি টেলিফোন ধরেননি।