রকেটে চড়ে মহাকাশ পাড়ি দিলেন পপতারকা কেটি পেরি। তবে তিনি একা নন, বিভিন্ন অঙ্গনের খ্যাতিমান আরো পাঁচ জন নারী তার সঙ্গী ছিলেন। একসঙ্গে মহাকাশে যাত্রা করে সফলভাবে পৃথিবীতে ফিরে এসেছেন তারা। এর মাধ্যমে ৬০ বছরেরও বেশি সময় পর শুধুই নারী নভোচারী দিয়ে পরিচালিত হলো কোনো মহাকাশযান। তাদের এই ঐতিহাসিক কৃতিত্ব এখন দুনিয়া জুড়ে আলোচনায়।
১৯৬৩ সালের ১৬ জুন মহাকাশে প্রথম নারী হিসেবে প্রায় তিন দিনের একক অভিযানে গিয়েছিলেন সোভিয়েত ইউনিয়নের নভোচারী ভ্যালেন্টিনা তেরেশকোভা। এবার ছয় নারী একসঙ্গে শূন্যে ঘোরার ইতিহাস গড়লেন। নারীদের এই অর্জন মহাকাশযাত্রার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
আমেরিকান বিলিয়নিয়ার জেফ বেজোসের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ব্লু অরিজিনের নিউ শেপার্ড (এনএস-৩১) রকেটে চড়ে মহাকাশে যুগান্তকারী ভ্রমণ করে পৃথিবীতে ফিরেছেন কেটি পেরি। রকেটে তার সঙ্গী ছিলেন সিবিএস টেলিভিশনের সঞ্চালক গেইল কিং, মানবাধিকারকর্মী আমান্ডা নুয়েন, নাসার সাবেক রকেট বিজ্ঞানী আয়শা বোয়ি, চলচ্চিত্র প্রযোজক কেরিয়ান ফ্লিন ও জেফ বেজোসের বাগদত্তা, সাংবাদিক-লেখক লরেন সানচেজ। তাদের মধ্যে আয়শা বোয়ি প্রথম বাহামিয়ান নারী হিসেবে মহাকাশে যাওয়ার কৃতিত্ব গড়েছেন।

মহাকাশ সংস্থা ব্লু অরিজিন ছয় নারীর মহাকাশযাত্রা সরাসরি সম্প্রচার করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট টেক্সাস থেকে স্থানীয় সময় সকাল ৯টা ৩১ মিনিটে মহাকাশের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে এনএস-৩১। এর সাক্ষী হতে সেখানে অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন গেইল কিংয়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু অপরাহ উইনফ্রে, উদ্যোক্তা ক্রিস জেনার ও ক্লোয়ি কার্দাশিয়ান।
১১ মিনিটের উপকক্ষপথ যাত্রায় কেটি পেরিসহ অন্য নারীরা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মহাকাশ সীমানা কার্মান লাইন পেরিয়েছেন। নিরাপদে পৃথিবীতে ফিরে আসার আগে কয়েক মিনিট ওজনহীন থাকার অভিজ্ঞতা হয়েছে তাদের। তখন শূন্যে রকেটের ভেতর ভাসতে দেখা গেছে ছয় নারীকে।

পৃথিবীতে অবতরণের পর মহাকাশযান থেকে বেরিয়ে অনন্য অভিজ্ঞতার জন্য কৃতজ্ঞতার প্রতীক হিসেবে মাটিতে চুম্বন করেন কেটি পেরি।
পৃথিবীতে ফেরার পর এক সংবাদ সম্মেলনে গেইল কিং জানান, ওজনহীন হয়ে সবাই নিজেদের আসনে ফিরে আসার পর আমেরিকার কৃষ্ণাঙ্গ সংগীতশিল্পী লুই আর্মস্ট্রংয়ের ‘হোয়াট অ্যা ওয়ান্ডারফুল ওয়ার্ল্ড’ গানটি গেয়ে ওঠেন কেটি পেরি। যদিও অন্য নভোচারীদের আশা ছিলো, গ্র্যামি মনোনীত গায়িকা হয়তো নিজের জনপ্রিয় গান ‘রোর’ কিংবা ‘ফায়ারওয়ার্ক’ গাইবেন।

সংবাদ সম্মেলনে কেটি পেরি উল্লেখ করেন, পৃথিবীকে সম্মান জানাতে ও মহাকাশে নারীদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করতে ‘হোয়াট অ্যা ওয়ান্ডারফুল ওয়ার্ল্ড’ গানটি বেছে নিয়েছেন। মহাকাশে একটি ডেইজি ফুল নিয়ে গিয়েছিলেন ৪০ বছর বয়সী এই তারকা। কারণ তার মেয়ের নাম ডেইজি। কেটির বিশ্বাস ছিলো, একটি ফুলেই মানুষ পৃথিবীর সৌন্দর্য বুঝতে পারবে।
কেটি পেরি বলেন, ‘এটি কোনো যাত্রা ছিলো না। আমরা নারীরা মহাকাশে ঐক্য প্রদর্শন করেছি। জায়গা দখল নয়, জায়গা তৈরি করাই আমাদের লক্ষ্য।’

এটি ছিলো নভোচারী নিয়ে ব্লু অরিজিনের ১১তম ও নিউ শেপার্ড প্রকল্পের সামগ্রিকভাবে ৩১তম মহাকাশযাত্রা। এর মাধ্যমে এখন পর্যন্ত ৫২ জন মহাকাশ ভ্রমণ করেছেন। ব্লু অরিজিনের ওয়েবসাইটে উল্লেখ রয়েছে, তাদের লক্ষ্য মহাকাশে প্রবেশের খরচ আমূল কমানো। সেজন্য তাদের রকেটগুলো পুনর্ব্যবহারযোগ্য হিসেবে নকশা করা হয়েছে। তবে নিউ শেপার্ড রকেট প্রতিবার উৎক্ষেপণের খরচ ১০ লাখ থেকে ৩০ লাখ ডলার। এ ধরনের রকেটে থাকে ছয়টি আসন। খরচ ওঠাতে প্রত্যেক যাত্রীর কাছ থেকে কমপক্ষে ৫ লাখ ডলার নেওয়ার কথা। ফলে মহাকাশ পর্যটন জনসাধারণের জন্য সাশ্রয়ী হতে অনেক সময় লাগবে বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা।