মঞ্চ নাটক বন্ধে ‘তৌহিদী জনতার’ হুমকি

admin
By admin
4 Min Read
‘শেষের কবিতা’ নাটকে (মাঝে) নূনা আফরোজ । ছবি: প্রাঙ্গণেমোর
Highlights
  • সংস্কৃতি উপদেষ্টার প্রতি নূনা আফরোজের অনুরোধ, ‘আপনি কি কোনো ব‍্যবস্থা নেবেন আমরা যেন আমাদের আজ ও আগামীকালের প্রদর্শনী যাতে দুটো নির্বিঘ্নে করতে পারি? এভাবে থিয়েটার বন্ধ করে দেয়াকে প্রতিহত করুন।’

চৈত্র সংক্রান্তি ও পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে ঢাকার বেইলি রোডে মহিলা সমিতি মিলনায়তনে টানা দুই দিন প্রাঙ্গণেমোর নাট্যদলের ‘শেষের কবিতা’ নাটকের প্রদর্শনী হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু তৌহিদী জনতার আপত্তির মুখে এ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।

মহিলা সমিতি কর্তৃপক্ষ প্রাঙ্গণেমোর-এর নাট‍্যকার, নির্দেশক ও অভিনেত্রী নূনা আফরোজকে ফোন করে জানিয়েছে, তৌহিদী জনতা চিঠি দিয়ে নাটকটির প্রদর্শনী বাতিল করতে বলেছে। এ নিয়ে নাট্যাঙ্গনে ব্যাপক সমালোচনা চলছে।

রবিবার (১৩ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে প্রাঙ্গণেমোর নাট‍্যদলের নাট‍্যকার, নির্দেশক ও অভিনেত্রী নূনা আফরোজ ফেসবুকে লিখেছেন, ‘এইমাত্র মহিলা সমিতি ফোন করে জানালো তৌহিদী জনতা তাদের চিঠি দিয়েছে, মহিলা সমিতিতে যেন কোনো প্রদর্শনী করতে দেয়া না হয়। আমরা মহিলা সমিতিকে দুই দিনের মিলনায়তন ভাড়া দিয়েছি। প্রচার-প্রকাশনায় সকল খরচ করা হয়ে গেছে। আমাদের সকল প্রস্তুতি, সকল আয়োজন সম্পন্ন। আয়োজনের প্রতিটি খাতে খরচ করা হয়ে গেছে। আমাদের ছেলেমেয়েরা অক্লান্ত পরিশ্রম করছে এতদিন ধরে।’

‘আমরা মহিলা সমিতিকে বলেছি, আপনারা প্রশাসনের সাহায্য নেন। প্রশাসন অপারগতা প্রকাশ করলে না হয় আমরা প্রদর্শনী নাইবা করলাম। মহিলা সমিতি জানালো কত কিছুই তো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, প্রশাসন তো বন্ধ করতে পারছে না। প্রশাসন কি সহযোগিতা করবেন আমাদের?’

ফেসবুক পোস্টের শেষ লাইনে নূনা আফরোজ প্রশ্ন রেখেছেন, ‘সংস্কৃতি অঙ্গনের ও দেশের সচেতন মানুষেরা বলুন কী করবো? এমনই চলতে থাকবে?’

 

‘শেষের কবিতা’ নাটকে (ডানে) নূনা আফরোজ । ছবি: প্রাঙ্গণেমোর

এরপর দুপুর ১২টার দিকে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকে খোলা চিঠি লিখেছেন নূনা আফরোজ।

ফেসবুক পোস্টে এই অভিনেত্রী-নির্দেশক লিখেছেন, ‘আজ সকাল ১০টায় যখন আমাদের নাটকের সেট রওনা হয়ে গেছে ঠিক তখন মহিলা সমিতি থেকে ফোন করে জানালো তৌহিদী জনতা তাদের চিঠি দিয়েছে, মহিলা সমিতিতে যেন কোনো প্রদর্শনী করতে না দেয়া হয়। আপনার জানার কথা আমরা নিজেদের পকেটের টাকা খরচ করে, জীবন থেকে অনেক কিছু বিসর্জন দিয়ে থিয়েটার করি। আমরা মহিলা সমিতিকে বলেছি, আপনারা প্রশাসনের সাহায্য নেন, প্রশাসন অপারগতা প্রকাশ করলে নাহয় আমরা প্রদর্শনী নাইবা করলাম। মহিলা সমিতি জানালো কত কিছুই তো হচ্ছে প্রশাসন তো বন্ধ করতে পারছে না। এ কথা বলার পর তো আর কিছু বলার থাকে না। আমরাও চাই না মহিলার সমিতির কোনো ক্ষতি হোক বা আমাদের ছেলেমেয়েদের কোনো ক্ষতি হোক।’

সংস্কৃতি উপদেষ্টার প্রতি নূনা আফরোজের অনুরোধ, ‘আপনি কি কোনো ব‍্যবস্থা নেবেন আমরা যেন আমাদের আজ ও আগামীকালের প্রদর্শনী যাতে দুটো নির্বিঘ্নে করতে পারি? এভাবে থিয়েটার বন্ধ করে দেয়াকে প্রতিহত করুন।’

এ নিয়ে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করেননি।

নূনা আফরোজের ফেসবুক পোস্ট শেয়ার দিয়ে বটতলা নাট্যদলের ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর মোহাম্মদ আলী হায়দার লিখেছেন, ‘এগুলো ভয়াবহ অন্যায়! দুই দিন পর-পর নাটক বন্ধের ডাক দেয়া এই সো-কল্ড তৌহিদি জনতা আমার কাছে মনে হয় থিয়েটারের লোকজনই। এদের চেনা প্রয়োজন। থিয়েটারকর্মী সবার উচিত এটার প্রতিবাদে মহিলা সমিতির সামনে দাঁড়ানো। আর মহিলা সমিতি কারো উড়ো ফোনে মিলনায়তন বরাদ্দ বাতিল করলে মহিলা সমিতির বিরুদ্ধেও প্রতিবাদ করা উচিত। আমি তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সকল নাট্যকর্মীদের উচিত এক হয়ে এর প্রতিবাদ করা।’

ফেসবুকে নূনা আফরোজ উল্লেখ করেছেন, রোববার বিকেল সাড়ে ৫টায় মহিলা সমিতির সামনে নাটক বন্ধের প্রতিবাদ জানাবেন তারা। এতে অংশ নিতে সংস্কৃতিজন ও সচেতন নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

শেষের কবিতায় লাবণ্য চরিত্রে অভিনয় করার কথা ছিল নূনা আফরোজের। চৈত্র সংক্রান্তিতে আজ (রোববার) সন্ধ্যা ৭টায় বাংলাদেশ মহিলা সমিতির ড. নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তনে ‘শেষের কবিতা’র ৪৫তম মঞ্চায়ন হওয়ার কথা ছিল। পহেলা বৈশাখে সন্ধ্যা ৭টায় এ নাটকের আরেকটি প্রদর্শনীর জন্য একই মিলনায়তন ভাড়া নিয়েছিল প্রাঙ্গণেমোর। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘শেষের কবিতা’ উপন্যাস থেকে এর নাট্যরূপ দিয়েছেন অনন্ত হিরা, নির্দেশনা দিয়েছেন নূনা আফরোজ।

২০২৪ সালের ২ নভেম্বর তৌহিদী জনতার প্রতিবাদের মুখে দেশনাটকের ‘নিত্যপুরাণ’ নাটকের ১২৭তম প্রদর্শনী মাঝপথে বন্ধ করে দেন শিল্পকলা একাডেমির তৎকালীন মহাপরিচালক ড. সৈয়দ জামিল আহমেদ। এ ঘটনার দুই দিন পর প্রতিবাদ সমাবেশ করেন থিয়েটারকর্মীরা।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *