১০২ বছর বয়সে জাপানের ফুজি পর্বত (মাউন্ট ফুজি) জয় করে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম লেখালেন আকুজাওয়া কোকিচি। গত ৫ আগস্ট তিন হাজার ৭৭৬ মিটার উচ্চতার পর্বতটিতে দুঃসাহসিক এই চ্যালেঞ্জে সফল হন তিনি।
তার পরপরই বিশ্বের সবচেয়ে প্রবীণ ব্যক্তি হিসেবে মাউন্ট ফুজি বিজয়ীর সনদ কোকিচির হাতে তুলে দেয় গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস কর্তৃপক্ষ।
সিএনএনের খবরে বলা হয়েছে, পর্বত আরোহণে তার সঙ্গী ছিলেন ৭০ বছর বয়সী মেয়ে মতোয়ে, নাতনি ও তার স্বামী আর স্থানীয় পর্বত আরোহী ক্লাবের কয়েকজন বন্ধু। অবশ্য জাপানের এই শতবর্ষী নাগরিক জানান, বয়সের ভারে পর্বত আরোহণের কঠিন যাত্রায় অনেকবারই মাঝপথে হাল ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন তিনি। সঙ্গীদের উৎসাহ আর সমর্থন তাকে পর্বতের শীর্ষে পৌঁছে দেয়।
দুই রাত পাহাড়ে কাটানোর পর ৫ আগস্ট তারা পা রাখেন জাপানের সর্বোচ্চ শৃঙ্গে।
কোকিচি বলেন, ‘আমার সফলতায় আমি নিজেই আভিভূত। আমি বলবো, শারীরিক সামর্থ্য থাকাকালেই পর্বত আরোহণের শখ মিটিয়ে ফেলা উচিত।’

জীবনের সঙ্গে লড়াই, পাহাড়ের সঙ্গে বন্ধুত্ব
কোকিচির ছোট মেয়ে ইয়োকিকো জানান, এর আগেও তার বাবা ফুজি জয় করেছিলেন। ৯৬ বছর বয়সে জাপানের সবচেয়ে প্রবীণ ব্যক্তি হিসেবে ছুঁয়েছিলেন দেশটির সর্বোচ্চ চূড়া। সেবার পাহাড় থেকে পড়ে গুরুতর আহতও হন কোকিচি।
এরপর গত ছয় বছর শতবর্ষী কোকিচিকে নানা শারীরিক ধকল সইতে হয়েছে। বয়সের ভারে দিন দিন তিনি শ্রবণ শক্তি হারিয়েছেন। হৃদরোগ, শিঙ্গেলসের মতো রোগের সঙ্গে যুদ্ধ করেছেন।তারপর আবার পাহাড় জয়ের নেশায় তিন মাস আগে থেকে নিজেকে প্রস্তুত করেছেন। প্রতি সপ্তাহে একটি করে ছোট পাহাড়ে উঠেছেন শরীরকে প্রস্তুত করতে।
কোকিচির পাহাড়ের প্রতি টান শুরু হয়েছিল কৈশোরে। টোকিও থেকে প্রায় ২৪০ কিলোমিটার দূরে ম্যাবাশিতে বসে তিনি সেই স্মৃতি রোমন্থন করেন। জানান, পাহাড় কেবল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণেই নয়, বরং মানুষের সান্নিধ্যের কারণেও তার প্রিয় উঠেছে। পাহাড়ের পথে সবাই সমান, সবাই ঠুনকো—এই অনুভূতি তাকে আজীবন অনুপ্রাণিত করেছে।
একাকিত্বের পথে সঙ্গীদের ভরসা
কোকিচি জানান, যৌবনে তিনি একাই পাহাড় চড়তে ভালোবাসতেন। কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অন্যদের সহায়তা নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেন। সেখানে সঙ্গী হন তার পরিবারের সদস্যরা। পাহাড়ের পথে যত বন্ধু জুটিয়েছেন, তারাও কোকিচিকে প্রতিনিয়ত সমর্থন দিয়ে গেছেন।
এবারের ফুজি যাত্রা নিয়ে কোকিচি বলেন, ‘কখনও এত দুর্বল বোধ করিনি। শরীরে ব্যথা ছিল না, কিন্তু শক্তি শেষ হয়ে যাচ্ছিল। আমার সঙ্গীদের অনুপ্রেরণায় শীর্ষে পৌঁছাতে পেরেছি।’
ফুজির স্বপ্ন হয়তো শেষ, কিন্তু পাহাড় নয়
আরেকবার ফুজি চড়ার পরিকল্পনা আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে মৃদু হাসি দিয়ে কোকিচি বলেন, ‘ইচ্ছে থাকলেও হয়তো আর পারব না। এখন আমার জন্য ফুজির অর্ধেক উচ্চতার আকাগি পাহাড়ই যথেষ্ট।’