বরগুনার বিষখালী নদীর তীর কেটে অবৈধভাবে মাটি তুলে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় কিছু ইটভাটার মালিকদের বিরুদ্ধে। এতে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি সৃষ্টি হয়েছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভাঙনের ঝুঁকি।
বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার কাকচিড়া ইউনিয়নের বাইনচটকি এলাকায় অবৈধভাবে এসব মাটি তুলে নেওয়া হচ্ছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, গত এক মাস ধরে আরএসবি ও আল মামুন এন্টারপ্রাইজের চারটি ইটভাটায় ভেকু মেশিন দিয়ে নদীর তীর কেটে মাটি তোলা হচ্ছে। এতে নদীর প্রাকৃতিক প্রবাহ ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি হুমকির মুখে পড়ছে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য।
সরেজমিনে ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বেড়িবাঁধ থেকে মাত্র ২০০-৩০০ ফুট দূরে নদীর তীর কেটে মাটি তোলা হচ্ছে আরএসবি ইটভাটার একটি বার্জে।
এছাড়া কবরস্থানের জায়গা দখল করে ইটভাটা তৈরির অভিযোগ রয়েছে আরএসবি ইটভাটার মালিক কিসলু মিয়ার বিরুদ্ধে। স্থানীয়দের দাবি, নদীর তীরে ১৫-২০টি কবরের ওপরে ইটের স্তুপ ফেলে রাখা হয়েছে।
অবৈধভাবে বিষখালী নদীর তীর কেটে মাটি ইটভাটায় নেওয়া হচ্ছে। ছবি: টাইমস
কাদের মিয়া নামে স্থানীয় একজন বলেন, ‘নদীর তীর থেকে মাটি কাটায় ভাঙন হলে আমরা গরিব মানুষ মাথা গোঁজার ঠাঁই পাবো কোথায়?’
এই এলাকা ভাঙন কবলিত জানিয়ে সুজন হাওলাদার নামে আরেকজন বলেন, ‘ভাটা মালিকরা নদীর পাড় কেটে নিলে বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয় প্লাবিত হতে সময় লাগবে না।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মেসার্স আল মামুন এন্টারপ্রাইজের ম্যানেজার লিটন মিয়া বলেন, ‘আমরা যে জমি থেকে মাটি নিচ্ছি তা ক্রয় করা। এটি সরকারের জমি নয়।’
জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির তথ্য অনুযায়ী, বরগুনায় প্রায় ৬৮টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে এক-তৃতীয়াংশের অনুমোদন নেই। অধিকাংশ ভাটা নদীর তীরবর্তী এলাকায় গড়ে ওঠায় মালিকরা চর থেকে মাটি কেটে ইট তৈরিতে ব্যবহার করছেন।
জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও আরএসবি ইটভাটার মালিক আবদুর রাজ্জাক কিসলু জানান, যেখানে মাটি কাটা হচ্ছে তা খতিয়ানভুক্ত জমি। দলিল ও খতিয়ান দেখলেই বিষয়টি পরিষ্কার হবে।
নদীর তীর কেটে এভাবে মাটি নেওয়া হলে তা নদীর স্বাভাবিক প্রবাহে বাঁধা সৃষ্টি করবে বলে স্বীকার করেন বরগুনা নদী বন্দরের সহকারী পরিচালক নির্মল কুমার রায়। তিনি বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।
পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘নদীর মাটি কাটার বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। প্রশাসনিক অভিযান চলছে। কেউ যদি নদীর চর থেকে মাটি কাটায় জড়িত থাকেন তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’