মিয়ানমারে শুক্রবার দুপুরের দিকে সাত দশমিক সাত মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। সেখানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও হতাহতের আশংকা করা হচ্ছে। ভূমিকম্প এতই শক্তিশালী ছিল যে শত শত মাইল দূরে চীন ও থাইল্যান্ড থেকেই কম্পন অনুভূত হয়। এরই সূত্রে ব্যাংককে বেশ কিছু ভবন ধসে গেছে। মিয়ানমারের পাশপাশি ব্যাংককে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে।
ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলের কাছের শহর মান্দালাইয়ের বিমানবন্দরে ধারণ করা একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, কম্পনে আতঙ্কিত লোকজন মাটিতে শুয়ে পড়ছে। এসময় অনেককে দৌড়াতে বারণ করার কথা চিৎকার করে বলতে শোনা যাচ্ছিলো।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) জানিয়েছে, ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল মিয়ানমারের উত্তর-পশ্চিমের শহর সাগাইং থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরে। এলাকাটি রাজধানী নেপিডো থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার উত্তরে।
ইউএসজিএস জানায়, শুক্রবার স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে প্রথম ভূমিকম্প আঘাত হানে, রিখটার স্কেলে যা ছিল সাত দশমিক সাত মাত্রার। এরপর আরও বেশ কয়েকটি আফটার শক অনুভূত হয়। প্রথম কম্পনের ১২ পর মিনিট পর দ্বিতীয় কম্পন অনুভূত হয়, যার মাত্রা ছিল ছয় দশমিক চার।
নেপিডো থেকে বার্তা সংস্থা এএফপির সংবাদদাতা জানিয়েছেন, ভূমিকম্পের আঘাতে সেখানে বিভিন্ন রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং অনেক ভবনের ছাদ থেকে আস্তরণ খসে পড়েছে। ছয়টি অঞ্চলে জরুরি অবস্থা জারি করেছে মিয়ানমারের জান্তা সরকার।

এদিকে থাইল্যান্ড মূলত ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চল নয়। সেখানে অনুভূত হওয়া প্রায় সব ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল হয় প্রতিবেশী মিয়ানমার। ব্যাংককের ভবনগুলোর শক্তিশালী ভূমিকম্প সহ্য করার ক্ষমতাসম্পন্ন নয়, এ কারণে সেখানে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় অকাঠামোগত ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। ব্যাংককে নির্মাণাধীন একটি ৩০ তলা ভবন ধসে ৪৩ জন শ্রমিক নিখোঁজ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। উদ্ধারকারীরা সেখানে অনুসন্ধান শুরু করেছে বলে জানিয়েছে থাই কর্তৃপক্ষ। একটি তাৎক্ষণিক বৈঠকের পর ব্যাংককে জরুরি অবস্থা জারি করেছে থাই সরকার।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে বিভিন্ন ভবন থেকে লোকজন বের হয়ে এসে রাস্তায় জড়ো হচ্ছে। একটি ভবনের ছাদের সুইমিং পুল থেকে পানি বাইরে নিচের দিকে ছিটকে পড়তে দেখা গেছে।

ব্যাংককে বসবাসকারী বিবিসির সাংবাদিক বুই থু জানান, ভূমিকম্পের সময় তিনি বাড়িতে রান্না করছিলেন।
তিনি বলেন, “আমি খুব বিহ্বল হয়ে পড়েছিলাম, খুব আতঙ্কিত ছিলাম। আমার মনে হয় গত এক দশকে ব্যাংককে এই রকম শক্তিশালী ভূমিকম্প হয়নি। আমার অ্যাপার্টমেন্টের দেয়ালে কিছু ফাটল দেখতে পাচ্ছি। সুইমিং পুল থেকে পানি ছলকে পড়ছে এবং মানুষজন শুধু চিৎকার করছে। ব্যাংককের বিল্ডিংগুলো ভূমিকম্প সহনশীল করে তৈরী করা হয়নি। আমি মনে করি সে কারণেই বড় ক্ষতি হতে চলেছে।”