আন্দোলনরত বুয়েট শিক্ষার্থীদের প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার দিকে যেতে বাধা দেওয়ার ঘটনায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) আট সদস্য আহত হয়েছেন।
বুধবার বিকালে আহতদের রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এদের মধ্যে দুইজনের অবস্থা গুরুতর।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা ফয়সল হাসানের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
আহতরা হলেন—রমনা জোনের ডিসি মাসুদ আলম, এডিসি রেজোয়ানুল ইসলাম (৩৭), এসআই তৌহিদুল ইসলাম, এএসআই ফরহাদ আলী (২৯), কনস্টেবল আদিব (২২), কনস্টেবল আমিনুল ইসলাম (২০) ও কনস্টেবল শ্রাবণ (২০)। এর মধ্যে তৌহিদুল ইসলাম ও আদিবের অবস্থা গুরুতর।
সন্ধ্যায় ডিএমপির গণমাধ্যম শাখার ডিসি তালেবুর রহমানের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দুপুর আনুমানিক ১টার দিকে রাজধানীর ব্যস্ততম সড়ক শাহবাগ মোড় দখল করে আন্দোলনরত প্রকৌশল শিক্ষার্থীরা সমাবেশ করতে থাকে। জনসাধারনের চলাচল স্বাভাবিক করতে শাহবাগ মোড়ে সমাবেত শিক্ষার্থীদের বারবার রাস্তা ছেড়ে দিতে অনুরোধ করা হয়। কিন্তু এরপরেও তারা রাস্তা বন্ধ করে সমাবেশ অব্যাহত রাখেন এবং দুপুর দেড়টার দিকে তারা প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনার দিকে রওনা হয়। ডিবিবিএল ফোয়ারার সামনে থেকে একপর্যায়ে তারা যমুনায় প্রবেশের চেষ্টা করলে তাদের ‘অবৈধ সমাবেশকে’ পুলিশ আইনগতভাবে ছত্রভঙ্গ করে। এসময় উশৃঙ্খল জনতার মারমুখী আচরণ এবং তাদের ছোড়া ইটপাটকেলের আঘাতে ডিএমপির রমনা জোনের ডিসি মাসুদ আলমসহ আট সদস্য আহত হন।
অন্যদিকে বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে শাহবাগে অবস্থান নিয়ে পুলিশি হামলার অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা। তারা পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে—স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়া ও জবাবদিহি, পূর্ব ঘোষিত কমিটি বাতিল করে শিক্ষক প্রতিনিধি ও আন্দোলনের স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে নতুন কমিটি গঠন, আহতদের চিকিৎসার দায়িত্ব নেওয়া এবং আন্দোলন চলাকালে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, রোকন নামে এক শিক্ষার্থীর ওপর হামলাকারীদের গ্রেপ্তার ও চাকরিচ্যুত করা এবং শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার দায়ে ডিসি মাসুদকে অপসারণ করা।
এর আগে মঙ্গলবার বিকাল থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত পাঁচ ঘণ্টা শাহবাগ মোড় অবরোধ করার পর শিক্ষার্থীরা ‘লং মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচির ঘোষণা দেন। সেই কর্মসূচির অংশ হিসেবে বুধবার সকাল থেকে দ্বিতীয় দিনের মতো শাহবাগে অবস্থান নেন বুয়েটসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এতে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এই সড়ক ও আশপাশের এলাকায় তীব্র যানজট তৈরি হয়।
দুপুর দেড়টার দিকে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার দিকে মিছিল নিয়ে এগোতে চাইলে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে।
আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, এতে ৫০ থেকে ৬০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
বিকালের ব্রিফিংয়ে শিক্ষার্থী জুবায়ের আহমেদ বলেন, ‘পুলিশ দিয়ে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না।’
মঙ্গলবার বুয়েট শিক্ষার্থীরা তিন দফা দাবিতে শাহবাগ অবরোধ। তাদের দাবিগুলো ছিল—সহকারী প্রকৌশলীর নবম গ্রেডের পদে কেবল পরীক্ষার মাধ্যমে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়োগ, দশম গ্রেডে শুধু ডিপ্লোমাধারী নয় বরং উচ্চ ডিগ্রিধারীদেরও আবেদন করার সুযোগ দেওয়া এবং বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পন্নকারীরাই কেবল ‘প্রকৌশলী’ শব্দ ব্যবহার করতে পারবেন তা নিশ্চিত করা।