‘গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তিকে ক্ষমতায় চায় না সরকারের একটি মহল’

টাইমস রিপোর্ট
3 Min Read
জাতীয় প্রেস ক্লাবে খ্যাতিমান রাজনীতিবিদ কাজী জাফর আহমেদের দশম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি: বিএনপির ফেসবুক

সরকারের ভেতরকার একটি মহল সচেতনভাবে দেশের গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তিকে ক্ষমতায় আসতে দিতে চায় না বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, ‘আমাদের অনেক বেশি সজাগ ও সতর্ক থেকে লক্ষ্য অর্জনের জন্য অনেক বেশি কাজ করতে হবে। আমরা যদি মনে করি, আমরা জিতে গেছি, সবকিছু ঠিক হয়ে গেছে, তাহলে বড় ভুল হবে। সরকারের ভেতরের একটি মহল অত্যন্ত সচেতনভাবে চেষ্টা করছে, গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তি যাতে ক্ষমতায় আসতে না পারে।’

বুধবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে খ্যাতিমান রাজনীতিবিদ কাজী জাফর আহমেদের দশম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘পত্রিকায় দেখলাম বিরাট খবর ছাপা হয়েছে। বাংলাদেশে ব্যাংক লুটের জন্য বিখ্যাত একজন দিল্লিতে বসে শেখ হাসিনাকে আড়াই হাজার কোটি টাকা দিয়েছেন এবং পরিকল্পনা করেছেন, কীভাবে ওই টাকা ব্যবহার করে বাংলাদেশের নির্বাচন বন্ধ করবে, হাসিনাকে আবার ফিরিয়ে আনবে।’

তিনি আরও বলেন,  ‘একটি অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে একটি ভয়াবহ ফ্যাসিবাদ থেকে মুক্ত হয়ে গণতন্ত্রের পথে উত্তরণের জন্য আমরা কাজ করছি। এরই মধ্যে অনেক কাজ হয়েছে। রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য যে বিষয়গুলো এসেছে, তার অনেকগুলোতে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়েছে, অনেকগুলোতে তারা একমত হতে পারেনি। নির্বাচনের একটি তারিখও ঘোষণা করা হয়েছে।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমরা ৩১ দফা কর্মসূচি প্রণয়ন করেছি যার মধ্যে সংস্কারের সবগুলোই আছে। প্রথম থেকেই সংস্কারের পক্ষে থেকে উপলব্ধি করেছিলাম, বিদ্যমান রাষ্ট্র কাঠামোতে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। সংস্কারের জন্য যত সহযোগিতা লাগে, আমরা তা অন্তর্বর্তী সরকারকে করেছি।’

কোনো বড় রকমের দাবি তুলে রাজপথে নেমে সরকারের বিরোধিতা করে কোনো বাধা সৃষ্টি করেননি জানিয়ে এই নেতা বলেন, ‘কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে কিছু রাজনৈতিক মহল পরিকল্পিতভাবে নির্বাচনকে বানচাল ও ব্যাহত করার জন্য নিত্যনতুন দাবি তুলে ধরছে। এমনসব দাবি তারা তুলে ধরছেন, যার সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষ আসলে পরিচিতই না। যেখানে সংস্কার শব্দটির সঙ্গেই সাধারণ মানুষ পরিচিত নয়।’

‘সংখ্যানুপাতিক ভোট বোঝাতে সময় লাগবে; এটা বোঝানো খুবই কঠিন। কাকে ভোট দিলেন, আপনি তা জানেন না। অথচ, এলাকায় একজন জনপ্রিয় মানুষকে ভোটটা দিলেন, কিন্তু দেখা গেল হয়ে গেলেন অন্যজন। এ বিষয়গুলো এখন আমাদের কাছেও পরিষ্কার নয়, সাধারণ মানুষের কাছেও নয়। অথচ এগুলো নিয়ে তারা জোরেশোরে হুমকি দিচ্ছে,’ যোগ করেন তিনি।

আক্ষেপ ও হতাশা নিয়ে এই জ্যেষ্ঠ রাজনীতিক বলেন, ‘আমি রাজনীতিতে কোনোদিন হতাশ হইনি। সবাইকে সাহস দিয়েছি, অনুপ্রেরণা দিয়েছি। কিন্তু ইদানীং একটা হতাশার ছায়া ঘোরাঘুরি করছে। এক-এগারোর সরকার দুই বছর থাকল এবং ফ্যাসিস্টের হাতে ক্ষমতা তুলে দিল। ১৫ বছর ধরে সেই ভোগান্তি আমাদের পোহাতে হয়েছে। তারা বাংলাদেশের অর্থনীতি শেষ করে দিয়েছে। রাজনৈতিক কাঠামো শেষ করেছে। মানুষের মন-মানসিকতা সবকিছু পরিবর্তন হয়ে গেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘মনমানসিকতার মধ্যে যে পরিবর্তন নিয়ে আসার কথা ছিল, সেই পরিবর্তনটা আনা যায় নি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে রাজনৈতিক নেতারাও অপরাধে জড়িত হয়ে পড়েছেন। যেটা বাংলাদেশের আরও বেশি ক্ষতি করছে।’

১৯৭১ এর চেতনায় উজ্জ্বিবিত হয়ে বাংলাদেশকে বাঁচানোর জন্য আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। যেই যুদ্ধে ভাই-বোন-মা শহীদ হয়েছেন, আশ্রয় হারা হয়েছেন, সেই একাত্তরকে ভুলিয়ে দেওয়ার অনেক চেষ্টা চলছে। কিন্তু সেটা ভোলা সম্ভব নয়, যোগ করেন তিনি।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *