পালিত হচ্ছে বিদ্রোহী কবির ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী

টাইমস রিপোর্ট
3 Min Read
বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: জলরং, মাসুক হেলাল

দেশজুড়ে পালিত হচ্ছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী। রাজধানীসহ সারা দেশেই কবির মৃত্যুবার্ষিকী পালনের আয়োজন করেছে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।

১৯৭৬ সালের ২৭ আগস্ট (১২ ভাদ্র ১৩৮৩ বঙ্গাব্দ) ঢাকার তৎকালীন পিজি হাসপাতালে (বর্তমান বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) মৃত্যুবরণ করেন কাজী নজরুল ইসলাম। পরে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় কবিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে সমাহিত করা হয়।

মানবতার প্রতি নিখাদ প্রেম, অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ও সাম্যের চেতনায় উদীপ্ত এ স্বাধীনতাকামী কবি ১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ মে (১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ) পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবে তিনি ‘দুখু মিয়া’ নামে পরিচিত ছিলেন। তার পিতা কাজী ফকির আহমেদ এবং মাতা জাহেদা খাতুন। ছোটবেলা থেকেই তিনি দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে বেড়ে উঠেন।

বাংলা সাহিত্যপ্রেমীদের কাছে তিনি বিদ্রোহী কবি হিসেবে খ্যাত হলেও বিশাল পরিসরজুড়ে রয়েছে তার সৃষ্টির বিস্তার। কাজী নজরুল ইসলাম কবিতা, গান, উপন্যাস, গল্প, নাটক, প্রবন্ধ ও চলচ্চিত্রসহ সাহিত্যের প্রায় সর্বক্ষেত্রে নিজ প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে গেছেন। তিনি একাধারে সাংবাদিক, গায়ক ও অভিনেতা হিসেবেও পরিচিতি পেয়েছিলেন।

অল্প সময়ের সাহিত্যজীবনেই তিনি বাংলা ভাষাকে সমৃদ্ধ করেছেন তার অজস্র সাহিত্যকর্মে। কবির সৃষ্টিতে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, মানবপ্রেম ও স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষায় জাগরণের আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত হয়েছে।

স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগে ১৯৭২ সালের ২৪ মে কবিকে সপরিবারে বাংলাদেশে আনা হয়। এদিনেই কবিকে জাতীয় কবির মর্যাদার পাশাপাশি ধানমন্ডিতে একটি সরকারি বাসভবন দেওয়া হয়।

বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৭৪ সালের ৯ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এক বিশেষ সমাবর্তনে তাকে সম্মানসূচক ডি-লিট সন্মাননা প্রদান করে। ১৯৭৬ সালে তিনি বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পান। একই বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি তিনি একুশে পদক ভূষিত হন।

বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান সকাল ৮টায় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে মৃত্যুবার্ষিকীর কর্মসূচি শুরু করে। বাংলা একাডেমি কবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সেমিনার ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। বিকেল ৪টায় একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ‘নজরুলের মৌলচেতনা অদ্বৈতবাদী সমন্বয়ের’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন নজরুল গবেষক আনোয়ারুল হক। আলোচনায় অংশ নেবেন নজরুল গবেষক সৈয়দা মোতাহেরা বানু এবং কবি ও প্রাবন্ধিক কাজী নাসির মামুন।

সভাপতিত্ব করবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম। স্বাগত বক্তৃতা দেবেন বাংলা একাডেমির সচিব মো. সেলিম রেজা। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আবৃত্তি পরিবেশন করবেন আবৃত্তিশিল্পী টিটো মুন্সী। নজরুলগীতি পরিবেশন করবেন শিল্পী ফেরদৌস আরা, শহীদ কবির পলাশ এবং তানভীর আলম সজীব।

এ ছাড়াও কবি নজরুল ইনস্টিটিউট দিনটি পালনে ‘মৃত্যুঞ্জয়ী নজরুল’ শীর্ষক আলোচনা, হামদ-নাত ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে। বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে কবির কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন, একক বক্তৃতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *