কালিগঙ্গায় বর্ণিল নৌকাবাইচ

টাইমস ন্যাশনাল
3 Min Read
কালিগঙ্গায় নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা। ছবি: টাইমস

মানিকগঞ্জের বেউথা কালিগঙ্গা নদীতে অনুষ্ঠিত হলো বর্ণাঢ্য নৌকাবাইচ। এ সময়, নদীর দুই তীরে হাজারো মানুষের ভিড়, মাঝিদের বৈঠার ছন্দ আর দর্শকদের করতালিতে চারপাশ মুখরিত হয়ে ওঠে।

এই প্রতিযোগিতায় মানিকগঞ্জসহ আশপাশের ছয় জেলার নৌকা অংশ নেয়। ছিপ, খেল্লা, ছান্দি, গয়টা, এমন নানা প্রকারের মোট ২৩টি বাহারি নৌকা সাজিয়ে আনা হয় প্রতিযোগিতায়। প্রতিটি নৌকায় ৩০ থেকে ৫০ জন মাঝি অংশ নেন এতে। এর আয়োজন করে জেলা প্রশাসন।

বাংলার গ্রামীণ জীবনে নৌকাবাইচ শুধু একটি খেলা নয়, এটি এক প্রাচীন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। বহু বছর ধরে নদীমাতৃক এই ভূখণ্ডে বর্ষা মৌসুম মানেই ছিল নৌকাবাইচের উৎসব। মাঝিদের ধ্বনি আর বৈঠার টানে নদী মুখরিত হতো, গ্রাম জেগে উঠত এক অনন্য আনন্দে। কিন্তু আধুনিকতার স্রোতে এই ঐতিহ্য ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে বসেছিল।

মোল্লা বাড়ী নৌকার মাঝি হাশেম আলী বলেন,’বাইচ মানেই আমাদের প্রাণের খেলা। বৈঠা চালাতে কষ্ট হয় ঠিকই, কিন্তু হাজারো মানুষের উচ্ছ্বাস আমাদের সমস্ত কষ্ট ভুলিয়ে দেয়। এই সময়ে যেখানে নৌকা বাইচ অনুষ্ঠিত হয় সেখানেই আমরা অংশ নেই।’

প্রতিযোগিতার দিনে আকাশ ছিল মেঘলা। মাঝে মাঝে হালকা বৃষ্টিও মানুষের উৎসাহ দমাতে পারেনি। বৃষ্টিতে ভিজেই হাজারো দর্শনার্থী নদীপাড়ে দাঁড়িয়ে উপভোগ করেন প্রতিযোগিতা। পরিবার পরিজন নিয়ে আসা অনেকেই জানান, এমন আয়োজন আগে দেখেননি।

চারপাশে উৎসুক জনতার ভিড়ে কালিগঙ্গায় নৌকাবাইচ। ছবি: টাইমস

দর্শনার্থী রফিকুল ইসলাম বলেন,’আমরা ভেবেছিলাম বৃষ্টিতে হয়তো মানুষ কম আসবে, কিন্তু এসে দেখি নদীর দুই পাড়ে যেন মানুষের মেলা বসেছে! একটুও পা ফেলার জায়গা নেই। তবে, বৃষ্টিতে ভিজলেও আনন্দ পেয়েছি।’

আরেক দর্শক শিউলি আক্তার জানান, ছোটবেলায় তিনি এই বাইচ দেখেছেন। তার সন্তানরাও এখানে এসে দেশের সংস্কৃতি কাছ থেকে দেখতে পারছে। প্রতিবছর এমন আয়োজন প্রত্যাশা তার।

এমন আয়োজন মানেই নদীপাড়ে মেলার আমেজ। নৌকাবাইচ দেখতে আসা মানুষের ঢলকে কেন্দ্র করে জমে ওঠে অস্থায়ী দোকানপাট। ভেলপুরি, চানাচুর, আইসক্রিম থেকে শুরু করে খেলনা ও গ্রামীণ পিঠার দোকানে ভিড় লেগে থাকে দিনমান।

মেলার ব্যবসায়ী হাসান আলী বলেন, ‘আজকের দিনটা আমাদের জন্য বড় সুযোগ। স্বাভাবিক দিনে যেখানে এক হাজার টাকার বেচাকেনা হয়, আজকে সেখানে চার-পাঁচ হাজার টাকার মাল বিক্রি করেছি। এ ধরনের আয়োজন স্থানীয় অর্থনীতিকেও প্রাণবন্ত করে তোলে।’

চারটি বিভাগে অনুষ্ঠিত প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের জন্য রেফ্রিজারেটর, টেলিভিশন, মাইক্রোওয়েভ ওভেনের মতো আকর্ষণীয় পুরস্কার ছিল। আর চ্যাম্পিয়ন এর জন্য ছিল মোটরসাইকেল।

একজন বিজয়ী মাঝি বলেন, ‘আমাদের গ্রামের মানুষদের জন্য এমন নৌকা বাইচে অংশ নিতে পারাটাই গর্বের বিষয়। পুরস্কার পেলে খুশি হবো, তবে সবচেয়ে বড় আনন্দ হলো গ্রামের মানুষকে খুশী করা।’

সাংস্কৃতিক কর্মী নজরুল ইসলাম বলেন, ‘এমন আয়োজন মানুষকে তাদের শেকড়ের সাথে যুক্ত করে।  নৌকাবাইচ কেবল খেলা নয়, এটি আমাদের সংস্কৃতির উৎসব।’

জেলা প্রশাসক ড. মানোয়ার হোসেন মোল্লা জানান, মানিকগঞ্জের ঐতিহ্য ধরে রাখতেই তাদের এই আয়োজন। প্রতিবছরই এমন নৌকাবাইচের আয়োজন করার পরিকল্পনা রয়েছে।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *