কেরুর কৃষি খামারে বাড়তি মুনাফা

টাইমস ন্যাশনাল
4 Min Read
কেরুর পতিত জমিতে বিভিন্ন ফসল ফলানো হচ্ছে। ছবি: টাইমস

চুয়াডাঙ্গার দর্শনা কেরু অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের চিনিকলের বাণিজ্যিক কৃষি খামারগুলোতে আখ উৎপাদনের পাশাপাশি বিবিধ কর্ম পরিকল্পনায় পতিত জমি থেকে বাড়তি আয় হচ্ছে। এসব জমি ফসল উৎপাদনের জন্য বরাদ্দ দেওয়া ছাড়াও নিজ উদ্যোগে বছরে কিছু ফসল ফলানোর মাধ্যমে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে এই কোম্পানিটি। এতে এলাকার দরিদ্র মানুষদের সারা বছরের কর্ম সংস্থানেরও ব্যবস্থা হয়েছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, চিনিকলের ডিহি কৃষি খামারের উৎপাদিত আখ দিয়ে চিনি উৎপাদনের পাশপাশি, পড়ে থাকা অনাবাদি জমি বরাদ্দ দিয়ে এবং বিনা ও বিএডির সহযোগিতায় নিজেরাই বিভিন্ন ধরনের মৌসুমি ফসল চাষ করে লাভবান হচ্ছে কেরু অ্যান্ড কোম্পানি।

খামার ইনচার্জ এমদাদুল হক জানান, দেশের খাদ্য ও চিনি করপোরেশনের একমাত্র লাভজনক ঐতিহ্যবাহী এ প্রতিষ্ঠানের ডিহি কৃষি খামারে মোট ৪১৮ একর জমি আছে। এর মধ্যে ৩০০ একর জমিতে ভালো মানের আখ হচ্ছে এবং ৪৮ একর জমি এলাকার কৃষকদেরকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের সঙ্গে ১২ একর জমিতে যৌথভাবে আউশ ধান উৎপাদন করা হচ্ছে। এই ইনস্টিটিউটের তত্ত্বাবধানে ২ একরের আরও একটি খামারে হলুদের পরীক্ষামূলক চাষ শুরু হয়েছে। এ ছাড়া ৮ একর জমিতে মিষ্টিকুমড়া এবং ৪ একর জমিতে আমন ধান হচ্ছে। সব মিলিয়ে যথা সময়ে প্রত্যেকটি জমির সুষ্ঠু ব্যবহার করে খামারকে লাভবান করার লক্ষ্যে কাজ চলছে।

পতিত জমিতে ফসল চাষ। ছবি: টাইমস

তিনি আরও জানান, দীর্ঘ ৩২ বছরের মধ্যে এই কৃষি খামার এ বছরই সর্বোচ্চ লাভ করেছে। খামারে বিভিন্ন ফসল উৎপাদনে বছরে ওই এলাকার খামারের আশেপাশের সাধারণ নিম্নবিত্ত ৫০ হাজার শ্রমিক কাজ করে থাকে। এরা কেরু চিনিকলে উৎপাদনে সহযোগিতা করার পাশপাশি এলাকার আর্থ সামাজিক উন্নয়নে ভুমিকা রাখছে।

খামার ইনচার্জ সুমন কুমার সাহা জানান, আমাদের কৃষি খামারে মোট ৩ হাজার ৫৫ একর জমি রয়েছে। ২ হাজার ৩৫০ একর জমি চাষাবাদে ব্যবহার হয়। এর মধ্যে মোট জমির তিন ভাগের দুই ভাগ আখ চাষের জন্য এক বছর রেখে বাকিটা আগাম আখ চাষের জন্য ছাড়তে হয়। এরপরও প্রায় ৬০০ একর পতিত জমি দেশের স্বার্থে স্বল্পমেয়াদে ফসল উৎপাদনের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়।  আগে এগুলোতে চার থেকে পাঁচ কোটি টাকা লোকসান হতো। এখন নতুন কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে বিভিন্ন ফসল চাষ করে লাভ হচ্ছে।

এখন এক একর জমি থেকে ২০ টন পর্যন্ত ফসল উৎপাদন করা যায়। চলতি অর্থবছরের আখ মাড়াই মৌসুমে ১ হাজার ৫১৬ একর আখ উৎপাদিত হয়েছে। এর মধ্যে ৮৬০ একর মুড়ি আখ রয়েছে। আর ৬০০ একর পতিত জমির মধ্যে কিছু জমি এলাকার কৃষকদের বরাদ্দ দিয়ে প্রায় ১ কোটি ৫২ লাখ টাকা আয় করেছে কেরু অ্যান্ড কোম্পানি।

এ ছাড়া এখন ১৫০ একর জমিতে মিষ্টিকুমড়া, ২০০ একরে মাষকলাই, ৬০ একরে আউশ ধান, ১৪ একরে পাট বীজ, ৫০ একরে গোল আলু, ২০ একরে মসুর ডাল, ২০ একরে ধনিয়া, ২০ একরে মুগ ডাল, ৪০ একরে তিল, ১২ একরে বোরো ধান এবং ১০ একর জমিতে হলুদ চাষ হচ্ছে, যা থেকে ১ কোটি টাকার বেশি লাভ করেছে কোম্পানিটি। ভবিষ্যতে বিনা ও বিএডিসি’র সহযোগিতায় আরও ১০০ একর জমিতে পাট বীজ এবং কিছু জমিতে আলু ও মসুর চাষ করার পরিকল্পনা রয়েছে।

এ বিষয়ে এই চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাব্বিক হাসান বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে ১০০ মন পাট বীজ কিনেছি পরে সেই পাট বীজ উৎপাদন করবো। এতে এই এলাকার মানুষ আর্থিকভাবে লাভবান হবে এবং আগামীতে বাইরে থেকে পাটের বীজ আমদানি করতে হবে না।’

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *