২১০০ কোটি টাকা বকেয়া রেখেই বিমানে রেকর্ড মুনাফা?

টাইমস রিপোর্ট
3 Min Read
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি উড়োজাহাজ। ছবি: বিমানের ফেসবুক পেজ থেকে নেওয়া

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৯৩৭ কোটি টাকার অনিরীক্ষিত মুনাফা করেছে বলে ঘোষণা দিয়েছে। সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে প্রতিষ্ঠানটির মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) এ বি এম রওশন কবীর এ তথ্য জানান। বিমানের দাবি, এটি তাদের ৫৫ বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ মুনাফা।

তবে রাষ্ট্রায়ত্ত পদ্মা অয়েল লিমিটেড বলছে, জ্বালানি তেল (জেট ফুয়েল) বাবদ তারা এখনো বিমানের কাছে প্রায় দুই হাজার ১০০ কোটি টাকা পায়।  বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) সহযোগী এই প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, জুন পর্যন্ত হিসাব অনুযায়ী এই বকেয়া পাওনা দুই হাজার কোটি টাকার নিচে নামেনি। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, বিপুল বকেয়া রেখে বিমান কীভাবে রেকর্ড মুনাফা করল?

পদ্মা অয়েল দেশের একমাত্র জেট ফুয়েল সরবরাহকারী। বিপিসির এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘বিমানের কাছে বিপিসির পাওনা রয়েছে প্রায় দুই হাজার ১০০ কোটি টাকা। তারা হয়তো কিছু অংশ পরিশোধ করেছে, তবে তা খুব সামান্যই।’

বিমান তাদের বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, রেকর্ড মুনাফার পেছনে মূল কারণ দক্ষ সম্পদ ব্যবস্থাপনা, কার্যকর কৌশল এবং যাত্রীসেবার উন্নয়ন। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটির আয় হয়েছে ১১ হাজার ৬৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্য।

বকেয়া রেখেই বিমানে মুনাফা
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি উড়োজাহাজ। ছবি: বিমানের ফেসবুক পেজ

১৯৭২ সালে মাত্র এক কোটি ৯০ লাখ টাকা আয়ে যাত্রা শুরু করা প্রতিষ্ঠানটি এ পর্যন্ত মোট ২৬টি অর্থবছরে লাভের মুখ দেখেছে।

এয়ারলাইন্সের বহরে বর্তমানে ২১টি উড়োজাহাজ রয়েছে, যার মধ্যে ১৯টি নিজস্ব মালিকানাধীন। এর মধ্যে রয়েছে আধুনিক বোয়িং ৭৮৭-৮ ও ৭৮৭-৯ ড্রিমলাইনার। বিমান জানায়, বহর রক্ষণাবেক্ষণে তারা এখন দেশেই সব ধরনের বড় চেক সম্পন্ন করতে সক্ষম, যা ব্যয় সাশ্রয় ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে।

যাত্রী পরিবহনের ক্ষেত্রেও উন্নতির দাবি করেছে বিমান। গত অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটি ৩৪ লাখ যাত্রী পরিবহন করেছে, কার্গো পরিবহন করেছে প্রায় ৪৪ হাজার টন। কেবিন ফ্যাক্টর বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮২ শতাংশে। ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসে বিমানের ইতিহাসে সর্বোচ্চ টিকিট বিক্রির রেকর্ড হয়েছে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।

জাতীয় পতাকাবাহী এ সংস্থা যাত্রীদের দ্রুত লাগেজ সরবরাহ, ইন-ফ্লাইট সেবা উন্নয়ন এবং বিমানবন্দর প্রক্রিয়ার আধুনিকায়নের কথাও বলেছে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা মান মেনে চলায় প্রশংসনীয় সেফটি রেকর্ড বজায় রাখার দাবিও করেছে বিমান।

তবে বিশ্লেষকদের মতে, মুনাফা ঘোষণার পাশাপাশি জ্বালানি খাতে বিপুল বকেয়া প্রশ্ন তুলছে বিমানের আর্থিক বাস্তবতা ও দায়বদ্ধতা নিয়ে। একদিকে রেকর্ড আয় ও মুনাফার দাবি, অন্যদিকে ২১০০ কোটি টাকার অনাদায়ী ঋণ—এ দুটি তথ্য মিলে সংস্থাটির আর্থিক ব্যবস্থাপনা কতটা টেকসই তা নিয়েও সন্দেহ তৈরি হয়েছে।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *