সিলেটের ভোলাগঞ্জ-জাফলং-এ প্রকাশ্যে পাথর লুটপাটের পর এবার জৈন্তাপুর উপজেলার রাংপানি পর্যটনকেন্দ্রে প্রকাশ্যে চলছে পাথর লুট। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভোলাগঞ্জের সাদাপাথর ও জাফলং-এর লুট হওয়া পাথর উদ্ধারে যৌথবাহিনীর অভিযানের ভেতরেই জৈন্তাপুরের পাথর লুটের ঘটনা প্রকাশ্যে এলো।
স্থানীয়দের অভিযোগ, জৈন্তাপুরের রাংপানিতে সীমান্তসংলগ্ন নদী ও টিলা থেকে প্রকাশ্যে পাথর লুটের সঙ্গে রাজনৈতিক নেতাদের পাশাপাশি প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু অসাধু সদস্যও জড়িত। উত্তোলন করা পাথর রাখা হচ্ছে রাংপানি ক্যাপ্টেন রশিদ স্কুল অ্যান্ড কলেজের পেছনে, সেখান থেকে ট্রাকে করে পাঠানো হচ্ছে বিভিন্ন স্থানে।
সাংবাদিকরা পাথর লুটের ভিডিও ধারণ করতে গেলে বাধা দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। কয়েকজন সাংবাদিক জানিয়েছেন, শ্রমিকেরা স্পটে পাহারা দিচ্ছেন, ছবি তুলতে গেলে আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠেন তারা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয়রা বলছেন, আগে আওয়ামী লীগ–ঘনিষ্ঠ একটি চক্র এই লুটে জড়িত থাকলেও এখন বিএনপি ও যুবদলের কয়েক নেতা ওইসব লুটপাটে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। পাথর বোঝাই প্রতি নৌকা থেকে ৮০০ টাকা ও ট্রাকপ্রতি ৩ হাজার টাকা করে চাঁদাও তোলা হচ্ছে।

এই চক্রের নেতৃত্বে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আবদুল আহাদ, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক দিলদার হোসেন, জামায়াত নেতা আমির নূরুল ইসলাম ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন জড়িত বলে কয়েকটি গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়। তবে তারা সবাই এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
জৈন্তাপুর থানার ওসি আবুল বাশার মো. বদরুজ্জামান বলেন, পুলিশের নামে চাঁদা তোলার অভিযোগ তার জানা নেই। তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জর্জ মিত্র চাকমা বলেন, প্রশাসনের নাম ভাঙিয়ে কেউ ফায়দা নিতে চাইলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পরিবেশ সংগঠন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সিলেট জেলার সাধারণ সম্পাদক কাসমির রেজা বলেন, ‘প্রশাসন যদি সাদাপাথর লুটের বিরুদ্ধে প্রথমেই কঠোর ব্যবস্থা নিত, তাহলে রাংপানিতে লুট এভাবে বাড়ত না।’
রাংপানিতে সম্প্রতি অভিযানে নেমেছে স্থানীয় প্রশাসন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফারজানা আক্তার লাবনী জানান, মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ২৮ হাজার ঘনফুট বালু ও ২০ হাজার ঘনফুট পাথর জব্দ করা হয়েছে। আগের দিন আরও ৩৫টি ট্রাকভর্তি বালু ও সাড়ে ৯ হাজার ঘনফুট পাথর জব্দ হয়।
ফারজানা আক্তার বলেন, ‘জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া এসব বন্ধ করা সম্ভব নয়। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জব্দ করা পাথর নদীতেই পুনঃস্থাপন করা হবে।’