জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দেশের অনেক কিছুই পাল্টে দিয়েছে। দীর্ঘ ১৬ বছরের ক্ষমতাকে এক নিমিষেই নাই করে দিয়েছে। এর এ আন্দোলনে বিরাট ভূমিকা রেখেছে ফটোগ্রাফাররা। তাদের তোলা ছবিগুলো নৃশংসতার অগ্নিসাক্ষী হিসেবে রয়ে গেছে। কিন্তু সেগুলো সংরক্ষণ করাও দরকার। যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম অভ্যুত্থানের কথা ভুলে না যায়। এরকম ভাবনা থেকে প্রখ্যাত ফটোগ্রাফার জীবন আহমেদের ‘‘উইটনেস টু দ্য আপরাইজিং’ শিরোনামে পাঁচ দিনব্যাপি আলোকচিত্র প্রদর্শনী শুরু হয়েছে।
নেত্র নিউজ ও প্রকাশনা সংস্থা দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড (ইউপিএল) এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজনটি চলছে ধানমণ্ডির অলিয়ঁস ফ্রঁসেজে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে শুরু হওয়া প্রদর্শনীটি আগামী ১১ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির লা গ্যালারিতে চলবে। এটি চলবে প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে রাত ৯টা
সব শ্রেণির দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত এই প্রদর্শনীটি উদ্বোধন করেন অন্তবর্তী সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। বিশেষ অতিথি হিসেবে প্রদর্শনীতে যোগ দেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)’র সদস্য ড. তানজিম উদ্দিন খান, শিক্ষক ও এক্টিভিস্ট ড. সামিনা লুৎফা। আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহবায়ক নাহিদ ইসলাম ও ইউপিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহরুখ মহিউদ্দিন প্রমুখ।
ফারুকী তার বক্তব্যে বলেন, জীবনের কাজ সম্বন্ধে প্রথম জানি ২০১৮ সাল থেকে। এবার যখন আমি সরকারের দায়িত্বে গেলাম তখন আমার উপর একটা দায়িত্ব পড়ল ‘ইকোনমিস্ট কান্ট্রি অফ দা ইয়ার অ্যাওয়ার্ড’ পাওয়ার পরে একটা কমিউনিকেশন ম্যাটেরিয়াল বানানোর জন্য। যেখানে আমাদের জুলাই গণঅভ্যুত্থান এবং বাংলাদেশের মানুষের রেজিলিয়েন্স এটা থাকবে। সাত দিনের মধ্যে বানাতে হবে শুটিং করার কোন সময় নাই। আমি কয়েকজন ফটোগ্রাফারের সঙ্গে যোগাযোগ করলাম। তার মধ্যে অবশ্যই জীবন অন্যতম। আমার অফিসে একদিন খিচুড়ি খেতে খেতে প্রায় ৫০০০ ছবি দেখলাম । শেষ পর্যন্ত আমরা যে ভিডিওটা বানাই তার ২০-২৫ সেকেন্ডই জীবনের তোলা ছবি। যার বেশিরভাগই এ প্রদর্শনীতে আছে।
তিনি যোগ করেন, একই স্পটে ৫ জন কাছাকাছি জায়গা থেকে ৫জন ছবি তুলে। কিন্তু আপনি ছবি দেখে বলে দিতে পারবেন কোনটা জীবনের তোলা। আমি কাউকে ছোট করার জন্য বলছি না। আপনার দেখবার চোখই আপনাকে শিল্পী হিসেবে আলাদা করে দেবে এবং এই দেখবার চোখটাই জীবনকে শিল্পী হিসেবে আলাদা করে দিয়েছে’
জীবন তার বক্তব্যে শুধু বলেন, ‘আমি খুব খুশি প্রদর্শনীটি করতে পেরেছি।’
জীবন আহমেদ গণঅভ্যুত্থানের একজন প্রত্যক্ষদর্শী আলোকচিত্রী। পুরো সময়টা জুড়ে তিনি ছিলেন রাজপথে। জুলাই অভ্যুত্থান ২০২৪-এর উত্তাল দিনগুলো ধরা পড়েছে তার ক্যামেরায়, যেগুলো একইসাথে ইতিহাসের স্মারক এবং রাষ্ট্রীয় নির্মমতা ও জনতার প্রতিরোধের মুখোমুখি লড়াইয়ের প্রামাণ্য দলিল। আন্দোলন চলাকালীন বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তের চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে জীবন আহমেদের এই একক প্রদর্শনীতে।
এর আগে, ৫ আগস্ট একই ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হয় জীবন আহমেদের লেখা বই ‘উইটনেস টু দ্য আপরাইজিং’-এর মোড়ক উন্মোচন। গণআন্দোলনের প্রামাণ্য দলিল হয়ে ওঠা এই বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন শহীদ নাফিজের বাবা, যিনি সেই সময় তার সন্তানের মরদেহ বহনকারী রিকশাচালক নুর মিয়া।