জুলাই ডায়েরি: মধ্যরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ

টাইমস রিপোর্ট
4 Min Read
সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের অবমাননা করা হয়েছে উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। ১৪ জুলাই দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে রাজু ভাস্কর্যের সামনে। ছবি: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফেসবুক পেজ

১৪ জুলাই চীন সফর শেষে ঢাকা ফিরে সংবাদ সম্মেলন করেন গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেসময় কোটা সংস্কার আন্দোলনে উত্তাল ছিল সারা দেশ। সবচেয়ে বেশি আলোচনায় ছিল মুক্তিযোদ্ধা কোটার বিষয়টি। ওই সংবাদ সম্মেলনে এ নিয়ে কথা বলেছিলেন শেখ হাসিনা। সেখানে এক প্রশ্নের প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেছিলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-পুতিরাও পাবে না (কোটা)? তাহলে কি রাজাকারের নাতি-পুতিরা পাবে?

শেখ হাসিনার এ বক্তব্যকে ‘অবমাননাকর’ মন্তব্য করে এদিন রোববার (১৪ জুলাই) মধ্যরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। একই সময়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করলে হামলা চালায় ছাত্রলীগ। মিছিল হয় জাহাঙ্গীরনগর ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়েও।

রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়।

চলমান কোটাবিরোধী আন্দোলন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন থেকে আসা বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় রাত ১০টা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আবাসিক হলে বিক্ষোভের পর মধ্যরাতে শিক্ষার্থীরা জড়ো হন টিএসসির রাজু ভাস্কর্যে।

রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে জড়ো হয়ে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী নানা স্লোগান দেন। সেখানে নারী শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল উল্লেখযোগ্য। জমায়েতে শিক্ষার্থীরা ‘চেয়েছিলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার’, ‘মেধা না কোটা, মেধা মেধা’, ‘তুমি কে, আমি কে, রাজাকার, রাজাকার’সহ নানা স্লোগান দেন৷

শিক্ষার্থীরা যখন টিএসসি এলাকায় জড়ো হচ্ছিলেন, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা মধুর ক্যানটিনে জড়ো হতে থাকেন।

কোটাব্যবস্থার যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে ১ জুলাই থেকে টানা আন্দোলনে রয়েছেন শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা। প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন থেকে আসা বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় সন্ধ্যার পর থেকেই ফেসবুকে কোটা আন্দোলনের সমর্থক শিক্ষার্থীদের অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করছিলেন। রাতে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সংসদ’ নামের একটি ফেসবুক গ্রুপে আন্দোলন-সমর্থক শিক্ষার্থীরা ব্যাপক হারে প্রতিবাদ জানাতে থাকেন।

একটি পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে হলে প্রতিবাদ শুরু হয়। পরে শিক্ষার্থীরা হলে হলে মিছিল শুরু করেন। পরে ওই ফেসবুক গ্রুপ থেকেই রাতে টিএসসির রাজু ভাস্কর্যে সশরীর প্রতিবাদ জানানোর আহ্বান আসে। এরপর শিক্ষার্থীরা হল থেকে বের হয়ে আসেন। তারা টিএসসি এলাকায় মিছিল নিয়ে আসতে থাকেন।

রাজু ভাস্কর্যের সামনে আসা বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলের এক ছাত্রী বলেন, ‘অন্যায্য কোটাব্যবস্থার বিরুদ্ধে কথা বলায় আমাদের অপমান করা হয়েছে, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা হয়েছে। এটা কেউই করতে পারেন না। এর প্রতিবাদে আমরা এখানে এসেছি।’

শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে বিভিন্ন হল থেকে টিএসসি এলাকায় আসতে চাইলে হলে হলে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাদের বাধা দেন বলে অভিযোগ ওঠে। কিছু হলের ফটকে ছাত্রলীগ শিক্ষার্থীদের আটকে রাখে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা বিপুল সংখ্যায় টিএসসিতে আসেন।

বাধা দেওয়ায় অন্তত দুটি জায়গায় ছাত্রলীগের দুই নেতা শিক্ষার্থীদের হাতে প্রহৃত হন বলে খবর পাওয়া যায়। এর একটি ঘটনা বিজয় একাত্তর হলের সামনে, অন্যটি শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের সামনে।

এমন পরিস্থিতিতে ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোনো ভূমিকা ছিল না।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের হামলা
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটা সংস্কার আন্দোলনের বিক্ষোভে ছাত্রলীগের হামলার ঘটনা ঘটে। রাত সাড়ে ১১টার দিকে ক্যাম্পাসের কাটা পাহাড় সড়কে এ ঘটনা ঘটে। এতে এক নারী শিক্ষার্থীসহ দুজন আহত হন। এর আগে রাত সোয়া ১১টার দিকে ক্যাম্পাসের জিরো পয়েন্টে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।

পরে রাত সাড়ে ১১টার দিকে ছাত্রলীগের চার-পাঁচজন নেতা-কর্মী সেখানে আসেন। এসে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মাঝেই কয়েকটি বাজি ফোটান। এরপরই আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা পিছু হটেন। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা কাটা পাহাড় দিয়ে মিছিল নিয়ে শহীদ মিনারে যাওয়ার পথে ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা তাদের ধাওয়া দেন। এতে আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েন। এ সময় চার থেকে পাঁচজন আন্দোলনকারীকে মারধর করা হয়। রাত একটা পর্যন্ত ছাত্রলীগের নেতা- কর্মীরা ক্যাম্পাসের জিরো পয়েন্টে অবস্থান করছিলেন।

জগন্নাথেও বিক্ষোভ
রাতে বিক্ষোভ করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও। রাত ১২টার দিকে ক্যাম্পাস থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। তারা মিছিল নিয়ে পুরান ঢাকার তাঁতীবাজার মোড় পর্যন্ত গিয়ে আবার ক্যাম্পাসে ফিরে আসেন।

কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম রাতে বলেন, এটি তাদের ব্যানারের কোনো কর্মসূচি নয়। শিক্ষার্থীরা নিজেদের জায়গা থেকেই প্রতিবাদ জানাচ্ছেন।

অবশ্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের রাজু ভাস্কর্যের কর্মসূচিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ করতে দেখা গেছে।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *