৩৫ শতাংশ শুল্কের কথা জানিয়ে ইউনূসকে ট্রাম্পের চিঠি

টাইমস রিপোর্ট
4 Min Read
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফাইল ছবি
Highlights
  • বাংলাদেশের পাশাপাশি দক্ষিণ কোরিয়া, জাপানসহ মোট ১৪টি দেশের ওপর নতুন করে শুল্কহার নির্ধারণের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে

বাংলাদেশের তৈরি পোশাকসহ সব ধরনের রপ্তানি পণ্যের ওপর ১ আগস্ট থেকে ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে চিঠি পাঠিয়েছেন তিনি।

হোয়াইট হাউস থেকে পাঠানো ওই চিঠিতে ট্রাম্প জানান, বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি সৃষ্টি করে চলেছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি ও জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই ঘাটতি দূর করতে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের ওপর উচ্চ হারে শুল্ক আরোপ করা হবে বলে তিনি জানান।

চিঠিতে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘২০২৫ সালের ১ আগস্ট থেকে বাংলাদেশের যেকোনো পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে, যা অন্যান্য ক্ষেত্রভিত্তিক শুল্কের অতিরিক্ত হিসেবে প্রযোজ্য হবে। উচ্চ শুল্ক এড়ানোর উদ্দেশ্যে ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে পণ্য পাঠানো হলে সেগুলোর ওপরও সেই উচ্চ শুল্ক আরোপ হবে। ’

তিনি আরও জানান, ‘বাংলাদেশের শুল্ক ও অশুল্ক নীতিমালাসমূহ এবং বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা দীর্ঘমেয়াদি বাণিজ্য বৈষম্য তৈরি করেছে। এই বৈষম্য আর গ্রহণযোগ্য নয়।’

গত এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পণ্যের ওপর এই বাড়তি শুল্কের ঘোষণা দেয়। এরপর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে চিঠি দিয়ে সময় চেয়ে অনুরোধ করেন। ট্রাম্প সেই অনুরোধে সাড়া দিয়ে শুল্ক কার্যকরের সময়সীমা তিন মাস পিছিয়ে দেন এবং ওই সময়ের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ভারসাম্য আনার আহ্বান জানান।

কিন্তু ঘোষিত সময়সীমা শেষ হওয়ার প্রাক্কালে ট্রাম্প আরও সময় দিয়ে ১ আগস্ট পর্যন্ত নতুন সময়সীমা নির্ধারণ করেছেন। এদিন তিনি বিশ্বের ১৪টি দেশের সরকারপ্রধানের কাছে আলাদা চিঠিও পাঠিয়েছেন। ট্রাম্প তার নিজের সোশ্যাল মিডিয়া ‘ট্রুথ সোশ্যালে’ এসব চিঠি প্রকাশ করেছেন।

বাংলাদেশকে পাঠানো চিঠিতে ট্রাম্প একদিকে বাংলাদেশের প্রতি শ্রদ্ধা জানালেও অন্যদিকে কঠোর উচ্চারণও ছিল। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ যদি চায়, তাদের জন্য মার্কিন বাজার উন্মুক্ত থাকবে, তবে শুল্ক ও অশুল্ক প্রতিবন্ধকতা দূর করে একটি ভারসাম্যপূর্ণ বাণিজ্য কাঠামো তৈরি করতে হবে।’

চিঠিতে ট্রাম্প আরও উল্লেখ করেন, যদি বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করে, তাহলে শুল্ক আরোপ করা হবে না এবং সেই বিনিয়োগের অনুমোদন প্রক্রিয়াও দ্রুত সম্পন্ন করা হবে।

এদিকে চিঠিতে ট্রাম্প স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, যদি বাংলাদেশ পাল্টা শুল্ক আরোপের পথে যায়, তাহলে তা যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত ৩৫ শতাংশ শুল্কের ওপর অতিরিক্ত হিসেবে গণ্য হবে।

বাণিজ্য বিশ্লেষকদের মতে, এই শুল্কের প্রভাব বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক শিল্পের ওপর গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে। রপ্তানিমুখী খাতগুলোতে অনিশ্চয়তা এবং অস্থিরতা বাড়তে পারে যদি দ্রুত কোনো কূটনৈতিক বা বাণিজ্যিক সমঝোতায় পৌঁছানো না যায়।

সরকারের তরফে এখনও পর্যন্ত এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। তবে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চিঠির বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে পর্যালোচনা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশের পাশাপাশি দক্ষিণ কোরিয়া, জাপানসহ মোট ১৪টি দেশের ওপর নতুন করে শুল্কহার নির্ধারণের ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প।

অন্যদেশ গুলোর মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর নতুন করে ২৫ শতাংশ, মিয়ানমার ও লাওসের পণ্যের ওপর ৪০ শতাংশ, দক্ষিণ আফ্রিকার ওপর ৩০ শতাংশ, মালয়েশিয়ার ওপর ২৫ শতাংশ, তিউনিসিয়ার ওপর ২৫ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ার ওপর ৩২ শতাংশ, বসনিয়ার ওপর ৩০ শতাংশ, সার্বিয়ার ওপর ৩৫ শতাংশ, কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডের ওপর ৩৬ শতাংশ এবং কাজাখস্তানের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্কহার নির্ধারণ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *