সিনে ইন্ডাস্ট্রিতে নারী প্রযোজকদের রাজত্ব

4 Min Read
ফাইল ছবি
Highlights
  • ‘আমি নিজেকে একজন প্রযোজক হিসেবেই দেখি। নারী কিংবা পুরুষ, এভাবে ভাগ করি না। আর আমরা এখানে এসেছি দীর্ঘ সময় ব্যবসা করতে। আমাদের ইচ্ছে বছরে ২-৩টি ছবি প্রযোজনা করার। সবগুলোই হবে বড় বাজেটের।’

বিখ্যাত ছবি ‘ছুটির ঘণ্টা’, ‘অশিক্ষিত’, ‘রাম রহিম জন’, ‘উজান ভাটি’, ‘পুরস্কার’, ‘চরমপত্র’—এর পরিচালক কিংবা অভিনয়শিল্পীর নাম বললে আপনি হয়ত খুব সহজেই বলে দিতে পারবেন। কিন্তু যদি প্রশ্ন করা হয় এ ছবিগুলোর প্রযোজক কে? চলচ্চিত্র নিয়ে ভালো জ্ঞান রাখেন এরকম অনেকেও নামটি বলতে পারবেন না। বিখ্যাত সংগীত পরিচালক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা সত্য সাহার স্ত্রী রমলা সাহা এ ছবিগুলোর প্রযোজক। স্বরলিপি বাণীচিত্রের ব্যানারে তিনি প্রায় এক ডজন ছবি প্রযোজনা করেছেন।

কিংবদন্তি চিত্রনায়িকা শাবানার এসএস প্রোডাকশন তো একটানা ১৯টির মতো ছবি প্রযোজনা করেছে। ১৯৭৯ সালে ‘মাটির ঘর’ দিয়ে শুরু করা প্রতিষ্ঠানটি এমন অবস্থায় পৌঁছেছিল ঈদসহ বড় উৎসবের ছবি মানে তাদের ছবি। ইন্ডাস্ট্রিতে ‘নাজমা’, ‘লাল কাজল’, ‘অশান্তি’, ‘বিশ্বাসঘাতক’, ‘স্বামী স্ত্রী’, ‘রাঙাভাবী’, ‘গরীবের বউ’, ‘অন্ধ বিশ্বাস’, ‘ঘাত প্রতিঘাত’, ‘স্বামী কেন আসামী’, ‘মেয়েরাও মানুষ’, ‘অগ্নিসাক্ষর’-এর মতো আরও অসংখ্য দর্শকপ্রিয় ও ব্যবসা সফল চলচ্চিত্রগুলো উপহার দিয়েছেন।

১৯৯৭ সালে শাবানা ছবি ছাড়ার পর থেকে একটা গ্যাপ তৈরি হয়। তবে এ গ্যাপ পূরণ করেন তাপসী ফারুক। তিনি ২০০০ সালের পর ফারুক হার্টবিট প্রডাকশনের ব্যানারে ৩০টির মতো ছবি প্রযোজনা করেন। যার অধিকাংশের নায়ক ছিলেন শাকিব খান। ২০১৫-১৬ সাল পর্যন্ত ঈদ মানে তার প্রযোজিত কোনো না কোনো ছবি থাকবে ব্যাপারটা এমন হয়ে গিয়েছিল। এরপর এক সময় শাকিবের সঙ্গে তার দূরত্ব তৈরি হলে তিনি প্রযোজনা থেকে দূরে সরে যান। তার প্রযোজিত ব্যবসা সফল ছবির মধ্যে রয়েছে—‘আমার প্রাণের প্রিয়া’, ‘সুপার হিরো’, ‘মনে রেখো’, ‘মনে প্রাণে আছো তুমি’, ‘ফুল অ্যান্ড ফাইনাল’, ‘মনের জ্বালা’ ইত্যাদি।

এ তিনজন ইন্ডাস্ট্রির প্রায় সব বিখ্যাত নায়িকাই ছবি প্রযোজনা করেছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন ববিতা, রোজিনা, মৌসুমী, কিংবা হালের ববি। কিন্তু তারা কেউই নিয়মিত প্রযোজক ছিলেন না। তাপসী ফারুক প্রযোজনা বন্ধ করার পর সবাই ভেবেছিল ইন্ডাস্ট্রিতে বুঝি শক্তিশালী নারী প্রযোজক আর আসবে না। কারণ, এরপর রাজত্ব করা জাজ মাল্টিমিডিয়া কিংবা আলফা আই দুটি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার পুরুষ। এ বছর ঢালিউড ইন্ডাস্ট্রির সবচেয়ে বেশি ব্যবসাসফল ছবির একটি ‘বরবাদ’। যার প্রযোজক শাহরিন আক্তার সুমি।

অন্যদিকে, আগামী ঈদুল ফিতরের জন্য ঘোষিত ‘ওয়ান্স আপন অ্যা টাইম ইন ঢাকা’ ছবির প্রযোজকও একজন নারী—শিরিন সুলতানা। ঢালিউডের সামনে মুক্তি পেতে যাওয়া অধিকাংশ ছবির প্রযোজকও নারীরা। বলা যায়, ইন্ডাস্ট্রিতে নারী প্রযোজকদের রাজত্ব শুরু হতে যাচ্ছে। সুমি কিংবা শিরিন দুজনেই বলছেন তারা শখে একটি ছবি প্রযোজনা করে চলে যেতে আসেননি। তারা এসেছেন ইন্ডাস্ট্রিতে রাজত্ব করতে।

টাইমস অব বাংলাদেশকে শাহরিন আক্তার সুমি বলেন, ‘আমি নিজেকে একজন প্রযোজক হিসেবেই দেখি। নারী কিংবা পুরুষ, এভাবে ভাগ করি না। আর আমরা এখানে এসেছি দীর্ঘ সময় ব্যবসা করতে। আমাদের ইচ্ছে বছরে ২-৩টি ছবি প্রযোজনা করার। সবগুলোই হবে বড় বাজেটের।’

তিনি আরও বলেন, ‘একটা ছবি নির্মাণ থেকে শুরু করে সিনেমা হলে মুক্তি পর্যন্ত ৪ থেকে ৫ মাস সময় লাগে। আমরা চাই একটা ছবি ঠিকঠাক বানিয়ে দর্শকদের সামনে আনতে। এর মধ্যে যদি সুযোগ পাই তাহলে হয়ত আরও কিছু ছবি প্রতি বছর নির্মাণ করব। তবে আপাতত দুই ঈদকে টার্গেট করেই নির্মাণ করব।’

সুমি জানান, ‘বরবাদ’-এর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতিটা কাজে তিনি পরিচালক মেহেদী হাসান হৃদয়ের সঙ্গে ছিলেন। নিজে নানাভাবে মত দিয়েছেন।

নারী প্রযোজক হিসেবে হিসেবে প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়েছে কি না? এমন প্রশ্নে সুমি বলেন, ‘ছবি বানানো থেকে শুরু করে মুক্তি পর্যন্ত নানা বাধা তো পেরোতে হয়েছে। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে এ বাধা একজন নারী প্রযোজক হিসেবে পাইনি। আমার জায়গায় একজন পুরুষ হলেও একই বাধার সম্মুখীন হতেন।’

শিরিন সুলতানা ছবি নির্মাণ করছেন ক্রিয়েটিভ ল্যান্ডের ব্যানারে। তিনিও বছরে ৩-৪টি ছবি প্রযোজনার উদ্দেশে ইন্ডাস্ট্রিতে এসেছেন বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা নতুন হলেও চাই নিয়মিত প্রযোজনা করতে। আর আমাকে একজন নারী হিসেবে নয়, শুধু প্রযোজক হিসেবে চিনুক এটাই চাওয়া।’

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *