সহজ ম্যাচ কঠিন করে জিতে সমতায় বাংলাদেশ

টাইমস স্পোর্টস
5 Min Read
উদযাপনের মধ্যমণি তানভীর ইসলাম। ছবি: শ্রীলংকা ক্রিকেট

লক্ষ্য ২৪৯ রান। ১৫৬ রানে পড়ে গিয়েছে প্রতিপক্ষের ৭ উইকেট। একজন স্বীকৃত ব্যাটারের সাথে উইকেটে এরপর যারা আসবেন সবাই টেইলএন্ডার। জয়ের পাল্লা ভারী থাকবে বোলিং করা দলের বিপক্ষেই। কিন্তু এমন সহজ হিসেবের ম্যাচও কঠিন করে জিতল বাংলাদেশ। কলম্বোতে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৮৫ বলে ৭৮ রানের ইনিংস খেলে বাংলাদেশের জয়ের পথ কঠিন করে তুলেছিলেন জানিথ লিয়ানাগে। কারণ বাংলাদেশের সিরিজ হারা আর টিকে থাকার সমীকরণে একমাত্র বাধা ছিলেন এই ডানহাতি ব্যাটারই। সেই বাধা বাংলাদেশ টপকে গেছে মোস্তাফিজুর রহমানের এক স্লো বাউন্সারে। এর আগে স্পিনার তানভীর ইসলামের ‘ওয়ান ম্যান শো’-তে নেয়া পাঁচ উইকেটে জয়ের ভিত পায় বাংলাদেশ। সেই ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে ইনিংসের ৭ বল বাকি থাকতে ১৬ রানের জয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে ১-১ সমতায় ফিরল বাংলাদেশ।

লিয়ানাগে উইকেটে এসেছিলেন দল ৯৯ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর। এরপর তার অপর প্রান্তে একে একে ফিরে গেছেন কামিন্দু মেন্ডিস, দুনিথ ভেল্লালাগে, ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গারা। কিন্তু অষ্টম ফিফটি ছোঁয়া এই ডানহাতি ব্যাটার উইকেট আঁকড়ে ছিলেন প্রায় শেষ পর্যন্ত। পেন্ডুলামের মতো দুলতে থাকা ম্যাচটাও প্রায় ছিনিয়েই নিচ্ছিলেন বাংলাদেশের হাত থেকে। এর আগে মিডল ওভারে মোস্তাফিজকে দারুন এক আপার কাটে চার মেরে ৫২ বল পর খেট্টারামার দর্শকদের ভাসান আনন্দে। হাসান মাহমুদকে পরপর ছক্কা আর চার মেরে জমিয়ে তোলেন লড়াই, ৪৭তম ওভারে তানজিম হাসান সাকিবকে মারেন টানা দুই ছয়। আউট হওয়ার আগে মোস্তাফিজের স্লট বলকে ফেলেছেন সাইটস্ক্রিনের কাছে। মোস্তাফিজ পুরো ম্যাচে খরুচে হলেও শেষের দুই ওভারে সেটা পুষিয়ে দিয়েছেন।

অবশ্য মাঠে এসে লিয়ানাগে নন স্ট্রাইকিং এন্ডে দাঁড়িয়ে দেখেছেন মাত্র দ্বিতীয় ওয়ানডে খেলতে নামা তানভীরের স্পিন শো। এর আগে লক্ষ্য তাড়ায় নেমে কলম্বোতে তখন উড়তে উড়তে খানিকটা মাটিতে নেমেছে শ্রীলংকা। কারণ এক ওভারে আগেই তানভীরের ফ্লাইট আর টার্নে বিভ্রান্ত হয়ে পয়েন্টে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন ওপেনার দিলশান মাদুশকা। সেই ধাক্কার পর খোলসে ঢুকে পড়েন মাত্র ২০ বলে ফিফটি ছোঁয়া কুশাল মেন্ডিসও। পরের ১০ বল খেলেও পাননি কোনো রান। চেপে ধরলেন তানভীর, ফ্লাইটেড ডেলিভারিতে মেন্ডিসকে টেনে এনে পরাস্ত করলেন টার্নে। প্যাডে লাগার পর জোরালো আবেদনে সাড়া দেননি আম্পায়ার, রিভিউ নিয়ে বাংলাদেশের বাজিমাৎ। তখনই ঘুরল ম্যাচের মোড়। মাত্র দ্বিতীয় ওয়ানডে খেলতে নামা তানভীর এরপর নিয়েছেন আরো তিন উইকেট। সিরিজ বাঁচানোর ম্যাচে এই বাঁহাতির বোলিং ফিগার ১০-২৩৯-৫।

পাথুম নিসাঙ্কা ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে ফিরলেও কুশাল শুরু থেকেই ছিলেন বিধ্বংসী মুডে। হাসান মাহমুদকে মেরেছেন এক ওভারে তিন চার, মোস্তাফিজুর রহমান নিজের প্রথম ওভার করতে এসে প্রথম চার বলেই হজম করলেন টানা চার বাউন্ডারি। ছুটতে থাকা মেন্ডিসকে থামানোই মনে হচ্ছিল দুঃসাধ্য। কারণ নিসাঙ্কার বিদায়ের পর মাদুশকাকে নিয়ে ৪৫ বলে ৬৯ রানের জুটিতে ৫৩ রানই ছিল এই ডানহাতি ব্যাটারের। তানভীরই ভাঙেন সেই জুটি, ফেরান ম্যাচ শ্রীলংকার দিকে টেনে নিয়ে যাওয়া দুই ব্যাটারকে।

কামিন্দু মেন্ডিস, শ্রীলংকার ব্যাটিং অর্ডারের ভরসার প্রতীক। ৫০ বল খেলে ততক্ষণে উইকেটে সেট হয়ে গেছেন এই বাঁহাতি ব্যাটার। কিন্তু তানভীরের স্পিন জাদু তখনও বাকি। লেংথে থেকে লাফিয়ে ওঠা বল লেগ সাইডে আলতো হাতে খেলতে গিয়ে শর্ট মিড উইকেটে ক্যাচ তুলে দেন মিরাজের হাতে। তার ব্যাট থেকে আসে ৩৩ রান। তানভীরের চার নম্বর শিকার ভেল্লালাগে। টার্নের সাথে মানিয়ে নিতে বেরিয়ে এসেছিলেন উইকেট ছেড়ে। শেষ রক্ষা হয়নি, ব্যাট আর প্যাড ছুঁয়ে টপ এজে বল জমা পড়ে উইকেটকিপার জাকের আলীর হাতে। পঞ্চম উইকেট মাহিশ থিকশানা। ফুল লেংথ বলে শর্ট মিড উইকেটে রিশাদের হাতে সহজ ক্যাচ।

তানভীর শো’র দিনে ভেলকি দেখিয়েছেন আরো দুই স্পিনার অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ ও শামীম হোসেন পাটোয়ারী। ১০ ওভার বল করে ৩৭ রানে নিয়েছেন ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার উইকেট। পাঁচ ম্যাচ পর ওয়ানডেতে উইকেট খরা কাটল এই অফস্পিনারের। ব্যাট হাতে সুবিধা করতে না পারলেও বোলিংয়ে শামীম ছিলেন আজ দুর্দান্ত। আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান লংকান অধিনায়ক চারিথ আসালাঙ্কাকে শট খেলতে বাধ্য করেছেন আজ। মিড অনে তানভীরের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন এই বাঁহাতি ব্যাটার। ৯ ওভার বল করে শামীম নিয়েছেন এক মেইডেন, ২২ রান খরচ করলেও ডট দিয়েছেন ৩৫টি। তানজিম নেন ২ উইকেট।

এর আগে টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে ইনিংসের তৃতীয় ওভারেই তানজিদ হাসানের উইকেট হারায় বাংলাদেশ। দ্বিতীয় উইকেট পারভেজ হোসেন ইমন-নাজমুল হোসেন শান্তর ৬৩ রানের জুটিতে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। শান্ত ফিরলেও নিজের প্রথম ওয়ানডে ফিফটি পান পারভেজ। হাসারাঙ্গার গুগলিতে বোল্ড হওয়ার আগে  ৬টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৬৯ বলে করেন ৬৭ রান। চারে নেমে ৫১ রান করে তানজিম সাকিবের সাথে ভুল বুঝাবুঝিতে রান আউট হন তাওহিদ হৃদয়। শেষদিকে সেই তানজিমের ২১ বলে ৩৩* রানের ইনিংসে ২৪৮ রানের পুজি পায় বাংলাদেশ। বাংলাদেশকে অল আউট করার ইনিংসে চার উইকেট নেন পেসার আসিথা ফার্নান্দো।

 

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *