সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে ২০২৪ সালের জুলাইয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে নতুন করে গড়ে ওঠে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। ২ জুলাই রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা।
এদিন প্রায় এক ঘণ্টা শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন তারা। এর আগে মিছিল করেন। এতে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী অংশ নেন।
বেলা পৌনে তিনটার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে মিছিল করে নীলক্ষেত, সায়েন্স ল্যাব ও বাটা সিগন্যাল মোড় ঘুরে শাহবাগে গিয়ে থামে। মিছিলে আন্দোলনকারীরা ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘কোটাপ্রথা নিপাত যাক’ ইত্যাদি স্লোগান দেন। বিকেল পৌনে চারটার দিকে মিছিলটি শাহবাগ মোড়ে পৌঁছায়।
শাহবাগ মোড়ে আগেই অবস্থান নেন পুলিশের বিপুলসংখ্যক সদস্য। মুখোমুখি অবস্থানে এলে শিক্ষার্থীরা পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে ‘ভুয়া ভুয়া’ বলে স্লোগান দেন। একপর্যায়ে পুলিশ সদস্যরা সরে যান। শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে আন্দোলনকারীরা সড়ক ছেড়ে দেন। পরে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের’ সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘এটা শুধু শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীদের আন্দোলন নয়। এটা একটা রাষ্ট্রের বিষয়। মুক্তিযোদ্ধা কোটা আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এক জিনিস নয়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কোনো বংশগত পরম্পরার বিষয় নয়, এটা একটা রাষ্ট্রীয় আদর্শ। এই আদর্শকে আমরা তরুণেরা ধারণ করি। সে জন্যই আমরা বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলেছি।’
দাবি আদায়ে পরদিন ৩ জুলাই বুধবার বেলা আড়াইটায় আন্দোলনকারীরা আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারের সামনে অবস্থান নেবেন বলে জানান নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, আজও অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন তারা। দেশের সব কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একই ব্যানারে একই সময়ে কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানান তিনি।
২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা ছিল। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা, ১০ শতাংশ নারী, অনগ্রসর জেলার বাসিন্দাদের জন্য ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের জন্য ৫ শতাংশ আর প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ শতাংশ আসন সংরক্ষিত ছিল। ওই বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোটা সংস্কারের দাবিতে বড় বিক্ষোভ হয়। কোটাব্যবস্থার সংস্কার করে ৫৬ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবি জানিয়েছিলেন আন্দোলনকারীরা। পরে সরকারি চাকরিতে (প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে) কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। তবে ২০২১ সালে সেই পরিপত্রের মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের অংশটিকে চ্যালেঞ্জ করে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান উচ্চ আদালতে রিট করেন। সেই রিটের রায়ে গত ৫ জুন পরিপত্রের ওই অংশ অবৈধ ঘোষণা করেন আদালত। এর পর থেকে চাকরিপ্রত্যাশী ও শিক্ষার্থীরা সরকারের জারি করা সেই পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে মাঠে নামেন।
‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ব্যানারে আন্দোলনকারীরা সেই পরিপত্র পুনর্বহালের পাশাপাশি আরও কিছু দাবি জানান।
২০২৪ সালের ৫ জুন বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের এবং বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ কোটা ব্যবস্থা বাতিলের সিদ্ধান্তকে অবৈধ ঘোষণা করে। রায় ঘোষণার পরপরই দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা এই রায়ের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু করেন। ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ব্যানারে এ আন্দোলন দিন দিন তীব্র থেকে তীব্রতর হয়।
মহাসড়ক অবরোধ
এদিন সরকারি চাকরিতে কোটাপদ্ধতি বাতিলসংক্রান্ত পরিপত্র বহাল রাখাসহ চার দাবিতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী। আগের দিন ১ জুলাই বিকেল ৪টা থেকে ২০ মিনিটের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় সড়কের দুই পাশে প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজট সৃষ্টি হয়।
এর আগে বেলা সাড়ে তিনটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে সংশপ্তক ভাস্কর্যের পাদদেশ থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।