টেস্ট ক্রিকেটের ২৫ বছর, ইতিহাস ও আবেগের মিশ্রণ

টাইমস স্পোর্টস
3 Min Read
বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেটের ২৫ বছর পূর্তিতে মিরপুরের হোম অব ক্রিকেটে কিংবদন্তিরা একত্রে। ছবি: বিসিবি

২০০০ সালের ২৬ জুন, বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে এক ঐতিহাসিক দিন—টেস্ট ক্রিকেটে প্রথম পদার্পণ। সেই দিনটি আজও মনে রেখেছে দেশের ক্রিকেট প্রেমীরা, যখন বাংলাদেশ দশম সদস্য হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) থেকে টেস্ট স্ট্যাটাস পেয়েছিল। আজ, ২৫ বছর পর সেই স্মৃতি ফিরে আসল মিরপুরের শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে, যেখানে এক সাগর মনে জড়ো হয়েছিল ক্রিকেটের প্রথম অধ্যায়ের নায়করা।

বিজয়ের এই রজতজয়ন্তী

শুক্রবার ছিল সেই দিন, যা বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটের যাত্রার রজতজয়ন্তী উদযাপন করল। এই বিশেষ দিনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট ক্রিকেটাররা, কোচিং স্টাফ ও বিসিবি কর্তৃপক্ষ। সেই ঐতিহাসিক টেস্ট ম্যাচের স্কোয়াডের ক্রিকেটারদের মধ্যে ছিলেন আকরাম খান, খালেদ মাসুদ পাইলট, নাইমুর রহমান দুর্জয় ও আল শাহরিয়ার রোকন। যদিও সবাই উপস্থিত ছিলেন না, তবে সেই দিনটির আবেগ অনুভব করেছেন সবাই।

আবেগী মুহূর্তের সূচনা করেন বিসিবির সভাপতি এবং বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান আমিনুল ইসলাম বুলবুল। তিনি সংক্ষিপ্ত কিন্তু আবেগপূর্ণ বক্তব্যে দেশের টেস্ট ক্রিকেটের অগ্রগতি ও ভবিষ্যত নিয়ে কিছু চমকপ্রদ পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন। পরবর্তী বক্তব্য রাখেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূইয়া। তিনি বলেন, “দেশের স্কুল ক্রিকেটের উন্নয়ন সাধনে ১০০টি স্কুলে সিনথেটিক উইকেট বসানোর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।”

একটা স্মৃতি, এক মহামানব

টেস্ট ক্রিকেটের প্রথম যাত্রার দিনে সেই স্কোয়াডে থাকা প্রত্যেক ক্রিকেটারকে সম্মান জানাতে আয়োজিত হয় একটি বিশেষ আনুষ্ঠানিকতা। বিসিবির পক্ষ থেকে প্রত্যেককে দেওয়া হয় ঐতিহাসিক টেস্ট ব্লেজারের আদলে নতুন ব্লেজার। এটি ছিল তাঁদের অতীতের স্বীকৃতি, এবং সেই মুহূর্তে মঞ্চে দাঁড়িয়ে তাঁরা একে একে স্মৃতিচারণ করেন—কীভাবে সেদিন ক্রিকেট ইতিহাসের অংশ হয়ে গিয়েছিলেন তাঁরা।

মঞ্চের পাশে ছিল এক বিশেষ স্মৃতিসৌধ—একটি টেস্ট জার্সি, যার ওপর স্বাক্ষর করেন বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটের তারকা খেলোয়াড়রা। বুলবুল, রাজিন সালেহ, জাভেদ ওমর বেলিম—সবাই হাতে কালি মাখিয়ে সই করেন সেই অমূল্য স্মৃতির উপর।

আবেগ ও উদযাপনের সন্ধিতে

এদিনের পর্বটি ছিল এক ধরনের ভ্রমণ—বাংলাদেশের ক্রিকেটের দীর্ঘ পথচলার এক অমূল্য অংশ। কেক কাটার সময় সেই পুরনো দিনের কষ্ট-স্মৃতি আর জয়ের আনন্দ একে অপরের মধ্যে মিশে গিয়েছিল। ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা, খেলা উপভোগ করার এক অন্যরকম অনুভূতি।

নতুন অধ্যায়ের সূচনা

এই রজতজয়ন্তী উপলক্ষে আরেকটি বিশেষ ঘোষণা শোনালেন বিসিবির কর্মকর্তারা। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) কার্যালয়ে প্লেয়ার্স এনক্লোজারের পাশে প্রথমবারের মতো বসানো হয়েছে এক অনার্স বোর্ড, যেখানে স্থান পেয়েছে বাংলাদেশের সব টেস্ট ক্রিকেটারের নাম। এটি আগামী প্রজন্মের জন্য একটি অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে—যে যেখানে থেকেও উঠে এসেছে, তার নাম ইতিহাসে থাকবে।
মির

বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটের এই ২৫ বছর পুর্তি এক মহাসমারোহে শেষ হলেও, এর প্রতিটি মুহূর্ত মনে থাকবে বহু বছর। স্মৃতির আলোকিত পথে কেবল সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য নতুন কোনো রকম পথচলার প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে।

এই রজতজয়ন্তী শুধু উদযাপন নয়—এটি ভবিষ্যতের সোপান তৈরি, যেখানে বাংলাদেশ আরো একধাপ এগিয়ে যাবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের মানচিত্রে।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *