রাজধানীর মগবাজারের আবাসিক হোটেলে সৌদি প্রবাসী মনির হোসেন, তার স্ত্রী ও সন্তানের অস্বাভাবিক মৃত্যুর তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। প্রাথমিক ধারণার বাইরেও নানা কারণ যাচাই করা হচ্ছে।
পুলিশ জানায়, ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকের পর্যবেক্ষণের সূত্রে বিষক্রিয়ায় তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তারপরও মৃত্যুর কারণ পুরোপুরি নিশ্চিত হতে সংগ্রহ করা হয়েছে ভিসেরা ও রক্ত।
রোববার লক্ষ্মীপুরের বাসিন্দা মনির হোসেন (৪৮), তার স্ত্রী নাসরিন আক্তার স্বপ্না (৩৮) ও তাদের ছেলে নাইম হোসেনের (১৮) রহস্যজনক মৃত্যু হয় রাজধানীর মগবাজারের সুইট স্লিপ হোটেলে।
রহস্যজনক তিন মৃত্যুর এ ঘটনায় পুলিশ রফিক নামে একজনকে আটক করেছে। রফিক এ ঘটনায় মারা যাওয়া প্রবাসী মনিরের চাচা এবং তার দেশে থাকা সম্পদের তত্ত্বাবধায়ক। মনিরের পরিবহন ব্যবসা রয়েছে, তাও দেখাশোনা করেন রফিক। ব্যবসা ও লেনদেন নিয়ে মনিরের কারো সঙ্গে দ্বন্দ্ব ছিল কিনা, সেটিও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
ডিএমপির রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার মো. মাসুদ আলম বলেন, ‘অসুস্থ তিনজনকে হাসপাতালে নিতে রফিকের গতিবিধি সন্দেহজনক মনে হওয়ায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ। এ ঘটনা পরিকল্পিত কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
মগবাজারের হোটেল সুইট স্লিপের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, শনিবার বিকেল ৩টা ৫৭ মিনিটে সৌদি প্রবাসী মনির ও তার চাচা রফিক হোটেলে আসেন রুম ভাড়া নিতে। রুম ভাড়া করে তারা চলে যান তারা। এর ১৫ মিনিট পর স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে হোটেলে প্রবেশ করেন মনির। তখন সঙ্গে ছিল রফিকও। এরপর রফিক পাশের একটি হোটেল থেকে খাবার কিনে মনিরের কক্ষে দিয়ে চলে যান।
পরদিন সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে মনিরের স্ত্রীকে হোটেলের কক্ষ থেকে রফিক বের করে নিয়ে যান হাসপাতালে। এরপর সাড়ে ১১টার দিকে রফিক তার মেয়ে ও মেয়ের জামাইকে নিয়ে আবার হোটেলে আসেন। তখন অসুস্থ মনিরকেও নেওয়া হয় হাসপাতালে। এর ঘণ্টা খানেক পর মনিরের ছেলেকেও নেওয়া হয় হাসপাতালে। একসঙ্গে তিনজন অসুস্থ হলেও রফিক কেন আলাদাভাবে তাদের হাসপাতালে নিলেন, আবার ঘটনার ব্যাপারে কেন তিনি হোটেল কর্তৃপক্ষকে কিছু জানাননি, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে রহস্য। মূলত ঘটনার অনেক পরে তিনজনের মৃত্যুর সংবাদ জানতে পারে হোটেল কর্তৃপক্ষ। সব মিলিয়ে রফিককে ঘিরে সন্দেহ তৈরি হওয়ায় তাকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
রমনা মডেল থানা পুলিশ জানায়, মনির সৌদিতে থাকলেও ঢাকায় তার একাধিক বাড়ি এবং লক্ষ্মীপুরে পরিবহন ব্যবসা আছে। এসব কিছু দেখাশোনার দায়িত্বে ছিলেন রফিক। তদন্তে তিন মৃত্যুর সম্ভাব্য সব কারণ যাচাই করা হচ্ছে বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তারা।
সোমবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে তিন মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। চিকিৎসকরা তাদের মৃত্যু বিষক্রিয়ায় হয়েছে বলে প্রাথমিক মত দিয়েছেন। পুলিশের সুরতাহাল রিপোর্টেও সম্ভাব্য এ কারণের উল্লেখ আছে।
এদিকে মনিরের দুই ভাই বিদেশে থাকেন। তারা দেশে ফিরলে এ ঘটনায় মামলা দায়ের হবে বলে পরিবারের সদস্যরা পুলিশকে জানিয়েছে।
মনির ঈদুল আজহার আগে সৌদি আরব থেকে দেশে ফেরেন। ছেলে নাইম হোসেন শারীরিক প্রতিবন্ধী, তাকে চিকিৎসক দেখাতে শনিবার স্ত্রী-সন্তান নিয়ে মনির ঢাকায় আসেন। সেদিন চিকিৎসকের অ্যাপোয়েন্টমেন্ট না পাওয়ায় তারা মগবাজারের সুইট স্লিপ হোটেলে ওঠেন এবং পরদিন সকালে তাদের মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।