প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ নির্ধারণের প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে স্পষ্ট মতভেদ দেখা দিয়েছে। রোববার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অনুষ্ঠিত ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের পঞ্চম দিনের বৈঠকে এ ইস্যুতে পূর্ণাঙ্গ ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়নি।
কমিশনের প্রস্তাব ছিল—এক ব্যক্তি জীবদ্দশায় দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না। কিন্তু আলোচনায় অংশ নেওয়া দলগুলোর মধ্যে একাধিক পক্ষ এর বিরোধিতা করে ভিন্নমত দেয়।
বিএনপি, ১২ দলীয় জোট এবং সিপিবি এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে। তবে জামায়াতে ইসলামী, গণ-সংহতি আন্দোলন, গণ-অধিকার পরিষদ, এবি পার্টিসহ বেশিরভাগ দল প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ সর্বোচ্চ ১০ বছর নির্ধারণের পক্ষে মত দিয়েছেন।
জামায়াতে ইসলামী নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের বলেন, ‘এক ব্যক্তি জীবদ্দশায় সর্বোচ্চ ১০ বছর প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন—আমরা এই মত দিয়েছি। পৃথিবীর অনেক দেশেই এমন সীমাবদ্ধতা রয়েছে। দেশের গণতন্ত্র সুরক্ষায় এটি এখন অত্যন্ত জরুরি।’
গণ-সংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, গণ-অধিকার পরিষদের নুরুল হক নূর ও এবি পার্টির সানি আবদুল হকও প্রধানমন্ত্রী পদে মেয়াদসীমা নির্ধারণের পক্ষে জোরালো অবস্থান জানান।
অন্যদিকে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এক ব্যক্তি একাধিক পদে থাকতে পারবেন না—এমন নিয়ম গণতান্ত্রিক চর্চার পরিপন্থী। যদি বলা হয়, দলীয় প্রধান প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না, তাহলে রাজনৈতিক দলের অধিকার খর্ব হয়।’
কেউ দলীয় প্রধান হয়ে প্রধানমন্ত্রী হলে সেটা কোনো অপরাধ নয়। প্রধানমন্ত্রীকে সীমাবদ্ধ করতে গিয়ে যদি রাষ্ট্রীয় ভারসাম্য নষ্ট হয়, তাহলে তা দেশের জন্য ক্ষতিকর হবে, যোগ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘দুই মেয়াদ বা ৫ বছরের সময়সীমা নিয়ে আলাপ হতে পারে, কিন্তু সেটি অবশ্যই খোলামেলা আলোচনা হতে হবে। রাষ্ট্রের ভারসাম্য যেন রক্ষা পায়, সেদিকে লক্ষ্য রাখা জরুরি।’
এদিকে কমিশনের সদস্যরা জানান, বৈঠকে মৌলিক বিষয়ে মতবিরোধ থাকলেও আলোচনার অগ্রগতি হয়েছে। তবে এই ইস্যুতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে আরও সময় ও আলোচনা প্রয়োজন।
কমিশনের পরবর্তী বৈঠকে এ নিয়ে নতুন প্রস্তাবনা আনার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।