দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন বলেছেন, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি ও ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিক কখনো ব্রিটিশ, কখনো বাংলাদেশি পরিচয় দেন।
তিনি বলেন, ‘টিউলিপের আয়কর রিটার্নে এসব উল্লেখ রয়েছে। তাই তিনি যতই বলুন না কেন-তিনি ব্রিটিশ নাগরিক, কাগজপত্র অনুযায়ী তাকে বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবেই বিবেচনা করা হবে। কখনো ব্রিটিশ, কখনো বাংলাদেশি পরিচয় নেওয়া-এটা প্রশ্নবিদ্ধ।’
সোমবার বিকালে ঢাকায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, বাংলাদেশে টিউলিপের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা চলছে।
টিউলিপ সিদ্দিক নির্দোষ হলে তিনি কেন মন্ত্রিত্ব ছেড়েছেন, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন দুদক চেয়ারম্যান।
তিনি বলেন, ‘টিউলিপ নিজেকে নির্দোষ দাবি করলে, তার আইনজীবী আমাদের কাছে চিঠি লিখলেন কেন? আর যদি কিছুই না জানেন, তাহলে মন্ত্রিত্ব ছাড়লেন কেন?’
দুদক তাকে (টিউলিপ) বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবেই বিবেচনা করছে বলে আবদুল মোমেন বলেন, সে অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘টিউলিপ আমাদের তিনটি মামলায় অভিযুক্ত এবং আরও একটি মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে। আজকে একটি পত্রিকায় এসেছে-২০১৩ সালে তিনি বাংলাদেশে একটি মাছের খামার থেকে ৯ লাখ টাকা আয় করেছিলেন।’
মোমেন বলেন, ‘যদিও তিনি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু প্রধান উপদেষ্টা তাকে সাক্ষাৎ দেননি এবং প্রধান উপদেষ্টা যথাযথ ব্যাখ্যা দিয়েছেন, কেন সেটা হয়নি। আমাদের দেশের আইন অনুযায়ী, একজন অভিযুক্ত ব্যক্তির এমন সাক্ষাতের সুযোগ নেই।’
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘সঠিক ঠিকানায় টিউলিপের নামে তলবি নোটিশ পাঠানো হচ্ছে। রাজউকের প্লট, গুলশানে প্লট বরাদ্দে অনিয়মসহ আরও কয়েকটি অভিযোগ রয়েছে।’
তার আয়কর রিটার্ন ঘেঁটে দেখা গেছে, হঠাৎ করে তার স্বর্ণের পরিমাণ ১০ ভরি থেকে বেড়ে ৩০ ভরি হয়ে গেছে, অথচ এর দামে কোনো পরিবর্তন হয়নি, যোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘টিউলিপ যতই বলুন ‘আমি কিছুই জানি না’, তাহলে মন্ত্রিত্ব গেল কেন? আইনজীবী আমাদের কাছে চিঠি লিখবেন কেন? যদি তিনি দেশে আসেন এবং আইনি সহায়তা প্রয়োজন হয়, আমরা প্রস্তুত আছি।’
দুদক চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘তাকে আমাদের আইনের আওতায় আদালতে মোকাবেলা করতে হবে-এই বার্তাই আমরা তার আইনজীবীকে জানিয়েছি। আমরা পদ্ধতিগতভাবে তার কাছে চিঠি, সমন, ওয়ারেন্ট পাঠাচ্ছি। প্রয়োজনে পত্রিকাতেও বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে।’
বাংলাদেশে দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত নিয়ে ‘ভুল বোঝাবুঝি’ দূর করার আশায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের লন্ডন সফরে তার সাক্ষাৎ চেয়েছিলেন টিউলিপ।
সেজন্য ইউনূসকে হাউস অব কমন্সে মধ্যাহ্নভোজ বা বিকেলের চা পানের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন যুক্তরাজ্যের সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী। টিউলিপের চায়ের আমন্ত্রণে সাড়া দেননি মুহাম্মদ ইউনূস।
সাবেক কূটনীতিক তাসনিম, তার স্বামীর অর্থ পাচারের তদন্ত শুরু
যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম ও তার স্বামী জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশনস লিমিটেডের চেয়ারম্যান তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে প্রায় ২০০০ কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগে তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদক জানায়, এই দম্পতি বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ১২টি ভুয়া কোম্পানি ব্যবহার করে অর্থ আত্মসাৎ ও পাচার করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে ঋণ বিতরণে জড়িত ব্যাংক এবং নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি), ব্যাংক এশিয়া, ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড (ইবিএল), দ্য সিটি ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড (এনবিএল), ট্রাস্ট ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক ও এবি ব্যাংক।
প্রাথমিক প্রমাণে বড় আকারের আর্থিক অনিয়মের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে এবং অর্থের সম্পূর্ণ পরিমাণ এবং সম্ভাব্য বিদেশি সম্পদ শনাক্ত করার জন্য আরও তদন্ত চলছে বলেও জানায় দুদক।