দীর্ঘ ১৮ বছর পর মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার নালী ইউনিয়নের হেলাচিয়া গ্রামে ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচ অনুষ্ঠিত হয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, এটি প্রায় আড়াইশ বছরের পুরোনো ঐতিহ্য।
নৌকাবাইচ দেখতে রোববার দুপুর গড়িয়ে আসতেই নদীর দুই তীরে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজারো মানুষ ভিড় জমায়। অনেক বছর পর এই বাইচের আয়োজনে এলাকাবাসীর মাঝে সৃষ্টি হয় উৎসবমুখর পরিবেশ।
শুধু নৌকাবাইচ নয়, উৎসবকে ঘিরে বসে শতাধিক খাবার, খেলনা ও প্রসাধনীর দোকান। শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে সব বয়সী মানুষ মেতে ওঠে আনন্দ-উচ্ছ্বাসে। রাস্তার দুপাশে বিভিন্ন গ্রামীণ খেলনা ও মনোহরি দোকান যেন শিশুদের বাড়তি আনন্দে ভরিয়ে তোলে।
হেলাচিয়া বাজার বণিক সমিতির উদ্যোগে আয়োজিত ইছামতি নদীতে এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় মানিকগঞ্জ ও পাশ্ববর্তী টাঙ্গাইল জেলার ১০টি নৌকা। প্রতিযোগিতা শেষে প্রতিটি দলকেই একটি করে ৩২ ইঞ্চি রঙিন এলইডি টেলিভিশন উপহার দেওয়া হয়।
শিশু দর্শনার্থী মিথিলা আক্তার (১০) উচ্ছ্বাস ভরা কণ্ঠে বলে, ‘আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছে নৌকার দৌড় দেখা। আমি মেলায় বেলুন কিনেছি, খুব মজা হয়েছে।’
নৌকাবাইচে অংশ নিতে আসা মানুষের মুখেই ফুটে উঠেছে আনন্দের ঝলক। মহিলা দর্শনার্থী রাবেয়া খাতুন বলেন, ‘অনেকদিন পর এমন আয়োজন দেখে মন ভরে গেছে।’
‘আমরা ছোটবেলায় এমন নৌকাবাইচ দেখতাম, এখন আমাদের সন্তানদেরও তা দেখাতে পারছি। খুব ভালো লাগছ,’ যোগ করেন তিনি।
স্থানীয় কৃষক আজিজুল হক বলেন, ‘আমরা প্রতিবছর এমন আয়োজন চাই। এর মাধ্যমে আমরা সবাই একত্রিত হয়, আনন্দ ভাগাভাগি হয়। অনেক বছর পর আমাদের গ্রামের ঐতিহ্য আবার জেগে উঠল।’
টাঙ্গাইল থেকে প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া নৌকা দলের মাঝি সেলিম মিয়া বলেন, ‘আমরা খুব উৎসাহ নিয়ে এসেছি। দীর্ঘদিন পর এত মানুষের সামনে নৌকাবাইচ করতে পেরে গর্ব লাগছে। জেতা-হারা বড় কথা নয়, মানুষকে আনন্দ দিতে পারাই আমাদের সার্থকতা।’
খাবারের দোকানদার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এত বছর পর নৌকাবাইচ হচ্ছে। আজকে বিক্রি খুব ভালো হচ্ছে। সকাল থেকে দোকানে ভিড় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছি। আমাদের মতো ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য এমন আয়োজন আশীর্বাদ।’
প্রসাধনীর দোকানি শাহিনা বেগম জানান, মেলায় নারী-শিশুর ভিড় বেশি রয়েছে। তারা সাজগোজের জিনিস কিনছেন। এমন আয়োজন হলে ব্যবসায় লাভ হয়, আবার গ্রামও আনন্দে ভরে ওঠে।
নৌকাবাইচ আয়োজক কমিটির সভাপতি গাজী হাবিব হাসান রিন্টু বলেন, ‘দীর্ঘ ১৮ বছর পর আবারো নৌকাবাইচ গ্রামীণ জনপদকে ফিরিয়ে দিয়েছে হারানো প্রাণচাঞ্চল্য। অনেক বছর পর আবারও বাইচের আয়োজন করতে পেরে আমরা আনন্দিত।’
তিনি জানান, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে অব্যাহত থাকবে এমন আয়োজন, এমনটাই সকলের প্রত্যাশা।