হিরোশিমায় পারমাণবিক বোমা হামলার ৮০তম বার্ষিকী পালন করছে জাপান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞের শেষের দিকে ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট মার্কিন পারমাণবিক বোমা হামলার প্রথম শিকার হয় শহরটি।
মার্কিন বিমান এনোলা গে হিরোশিমার ওপর ফেলে প্রায় চার হাজার ৪০০ কেজি ওজনের বোমা- ‘লিটল বয়’। মুহূর্তেই ভস্ম হয়ে যায় গোটা শহর। প্রাণ হারান এক লাখ ৪০ হাজার মানুষ। ঠিক তার তিনদিন পর জাপানের আরেক শহর নাগাসাকিতে দ্বিতীয় পারমাণবিক বোমা ফেলে যুক্তরাষ্ট্র। প্রাণ যায় আরও ৭৪ হাজার মানুষের।
বুধবার ভয়াবহ গরমের মধ্যে কালো পোশাকে সরকারি কর্মকর্তা, শিক্ষার্থী ও হামলা থেকে বেঁচে যাওয়া নাগরিকেরা হিরোশিমার স্মারক স্তম্ভে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন। হামলার বিভীষিকা বয়ে বেড়ানো গম্বুজাকৃতির ধ্বংসস্তূপের সামনে স্থানীয় সময় ঠিক সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে এক মিনিটের নীরবতা পালন করেন তারা। জাপানের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তো বটেই বিশ্বের নানা দেশ থেকে মানুষ এসে ভিড় করেন হিরোশিমা পিস মেমোরিয়াল পার্কে। যেখানে শান্তির ঘণ্টা বাজিয়ে স্মরণ করা হয় নিহতদের।

এবারের বার্ষিকীকে হিরোশিমা ও নাগাসাকির বোমা হামলা থেকে বেঁচে ফেরা ‘সৌভাগ্যজনদের’ জাপানি ভাষায় বলা হয় ‘হিবাকুশারা’। জাপান সরকারের তথ্যানুযায়ী, তাদের সকলের গড় বয়স ৮৬ বছরের ওপরে।
মিনোরু সুজুতো (৯৪) এমনই একজন ‘হিবাকুশারা’। তিনি বলেন, ‘আর হয়তো ১০ বা ২০ বছরের মধ্যে এই দুঃখজনক অভিজ্ঞতা জানানোর মতো কেউই বেঁচে থাকবে না। তাই আমি যতটা সম্ভব এই ভয়ানক অভিজ্ঞতা সবাইকে জানিয়ে যেতে চাই।’
তার দাবি, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে একটি সুস্থ পৃথিবী উপহার দিতে স্থায়ীভাবে পারমাণবিক অস্ত্র নিষিদ্ধ করা।
এদিকে, জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা বলেন, ‘পারমাণবিক অস্ত্র মুক্ত বিশ্বের পথে নেতৃত্ব দেওয়ার দায়িত্ব জাপানের।’
অবশ্য পরমাণু অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ চুক্তির বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি তিনি। জাপান সরকার এখনো যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক সুরক্ষা চুক্তিতে সই করেনি।
হিরোশিমার মেয়র কাজুমি মাতসুই বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে সামরিক শক্তি বৃদ্ধি ও পারমাণবিক অস্ত্রকে জাতীয় নিরাপত্তার অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের প্রবণতা বাড়ছে। রাশিয়ার ইউক্রেন আগ্রাসন ও মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতা তার জ্বলন্ত উদাহরণ।’
‘এই মনোভাব ইতিহাসের বেদনার শিক্ষা উপেক্ষা করছে এবং শান্তির ভিত্তিকে বিপর্যস্ত করছে’, যোগ করেন তিনি।
এবারের ৮০তম হিরোশিমা দিবসে প্রায় ৫৫ হাজার মানুষ অংশ নেন। তাদের সঙ্গে যোগ দেন অন্তত ১২০টি দেশ ও অঞ্চলের প্রতিনিধিরা। প্রথমবারের মতো অংশ নেয় তাইওয়ান ও ফিলিস্তিন। উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতও। তবে অনুপস্থিত ছিল রাশিয়া ও চীন।