ইরানের খ্যাতিমান পরিচালক জাফর পানাহি স্বর্ণপাম জিতলেন। ৭৮তম কান চলচ্চিত্র উৎসবের সর্বোচ্চ পুরস্কার উঠলো তার হাতে। ‘ইট ওয়াজ জাস্ট অ্যান অ্যাক্সিডেন্ট’ ছবির সুবাদে এটি পেলেন ৬৪ বছর বয়সী এই নির্মাতা। শনিবার (২৪ মে) স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় উৎসবের প্রাণকেন্দ্র পালে দে ফেস্টিভ্যাল ভবনের গ্র্যান্ড থিয়েটার লুমিয়েরে সমাপনী অনুষ্ঠানে তার হাতে স্বর্ণপাম তুলে দেন অস্ট্রেলিয়ান অভিনেত্রী কেট ব্ল্যানচেট। তখন মঞ্চে ছিলেন মূল প্রতিযোগিতা বিভাগের প্রধান বিচারক ফরাসি অভিনেত্রী জুলিয়েট বিনোশ।
২২ বছর পর কান চলচ্চিত্র উৎসবে সশরীরে অংশ নিতে পারলেন জাফর পানাহি। কারণ তার ওপর ১৫ বছর ধরে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছিল ইরান সরকার। চলচ্চিত্র নির্মাণের কারণে বেশ কয়েকবার গ্রেপ্তার হওয়া এই গুণী নির্মাতা সর্বশেষ ২০০৩ সালে উৎসবটিতে সশরীরে উপস্থিত হয়েছিলেন। সেই আসরে আঁ সাঁর্তে রিগা বিভাগে প্রদর্শিত তার ‘ক্রিমসন গোল্ড’ ছবিটি জুরি অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে। ১৯৯৫ সালে কান উৎসবে জাফর পানাহির ‘হোয়াইট বেলুন’ ক্যামেরা দ’র পুরস্কার জিতেছে। ২০১৮ সালে তার পরিচালিত ‘থ্রি ফেসেস’ সেরা চিত্রনাট্যের পুরস্কার পেয়েছে কানে। এবার স্বর্ণপাম জিতলেন তিনি।

গত ২০ মে গ্র্যান্ড থিয়েটার লুমিয়েরে ‘ইট ওয়াজ জাস্ট অ্যান অ্যাক্সিডেন্ট’-এর প্রদর্শনী শেষে আমন্ত্রিত অতিথি ও দর্শকরা টানা ১০ মিনিট দাঁড়িয়ে অভিবাদন জানান। তখন জাফর পানাহির সঙ্গে ছিলেন তার স্ত্রী ও কন্যা, ছবিটির অভিনয়শিল্পী বাহিদ মোবাশ্বেরী, মরিয়ম আফসারী, ইব্রাহিম আজিজি, হাদিস পাকবাতেন, দেলনাজ নাজাফি।
‘ইট ওয়াজ জাস্ট অ্যান অ্যাক্সিডেন্ট’ ছবির গল্প বাহিদকে কেন্দ্র করে। সে নকল পাওয়ালা এক ব্যক্তিকে অপহরণ করে, যিনি দেখতে ঠিক সেই ব্যক্তির মতো যে বাহিদকে কারাগারে নির্যাতন করতো। সেসব দিন তার জীবনের সর্বনাশ ডেকে এনেছিল। বাহিদ অন্য কারাবন্দিদের সঙ্গে যাচাই করতে বেরিয়ে পড়ে যে, লোকটি সত্যিই তাদের নির্যাতনকারী কিনা।

এবারের আসরে মূল প্রতিযোগিতা বিভাগে স্বর্ণপামের জন্য ‘ইট ওয়াজ জাস্ট অ্যান অ্যাক্সিডেন্ট’সহ মনোনীত হয় মোট ২২টি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। গ্রাঁ প্রিঁ জিতেছে ডেনিশ-নরওয়েজিয়ান পরিচালক ইয়োয়াকিম ত্রিয়েরের ‘সেন্টিমেন্টাল ভ্যালু’।
জুরি প্রাইজ পেয়েছে যৌথভাবে স্পেনের অলিভের লাক্স পরিচালিত ‘সিরাত’ ও জার্মানির মাশা শিলিনস্কি পরিচালিত ‘সাউন্ড অব ফলিং’। স্পেশাল প্রাইজ পেয়েছে চীনের বাই গান পরিচালিত ‘রেজারেকশন’।
ব্রাজিলিয়ান ছবি ‘দ্য সিক্রেট এজেন্ট’-এর সুবাদে ওয়াগনার মোরা সেরা অভিনেতা ও ক্লেবার মেনদোঙ্কা ফিলো সেরা পরিচালক হয়েছেন।
‘দ্য লিটল সিস্টার’ ছবির সুবাদে সেরা অভিনেত্রী হয়েছেন ফরাসি তরুণী নাদিয়া মেলিতি। দু’বার স্বর্ণপাম জয়ী বেলজিয়ামের ভ্রাতৃদ্বয় জ্যঁ-পিয়ের ও লুক দারদেন “ইয়াং মাদার’স” ছবির জন্য পেয়েছেন সেরা চিত্রনাট্যকার পুরস্কার।
মূল প্রতিযোগিতা বিভাগে জুলিয়েট বিনোশের নেতৃত্বে বিচারক হিসেবে কাজ করেছেন ভারতীয় পরিচালক পায়েল কাপাডিয়া, অস্কারজয়ী আমেরিকান অভিনেত্রী হ্যালি বেরি, অভিনেতা জেরেমি স্ট্রং, ইতালিয়ান অভিনেত্রী আলবা ররওয়াকার, ফরাসি-মরোক্কান লেখক লেইলা স্লিমানি, কঙ্গোর পরিচালক দিয়ুদো আমাদি, কোরিয়ান পরিচালক হং সাং সু, মেক্সিকান পরিচালক কার্লোস রেগাদাস।
এদিকে নবাগত পরিচালক হিসেবে ক্যামেরা দ’র পুরস্কার জিতেছেন ইরাকের হাসান হাদি। তার পরিচালিত “দ্য প্রেসিডেন্ট’স কেক” ছবিটি এর আগে ৫৭তম ডিরেক্টরস’ ফোর্টনাইটে অডিয়েন্স চয়েস অ্যাওয়ার্ড হিসেবে ৭ হাজার ৫০০ ইউরো জিতেছে। কানের সমান্তরাল বিভাগে এটাই ইরাকের প্রথম ছবি। ক্যামেরা দ’র বিভাগে প্রধান বিচারক ছিলেন ইতালিয়ান পরিচালক আলিস ররওয়াকার। তার নেতৃত্বে বিচারক প্যানেলে ছিলেন আলজেরিয়ান-ফরাসি নির্মাতা ও অভিনেতা রাশিদ হামি, ফরাসি চলচ্চিত্র সমালোচক ফ্রেদেরিক মেরসিয়ের, ফরাসি নির্মাতা ও অভিনেত্রী জেরাল্ডিন নাকাশ, নয়্যার লুমিয়েরের সিইও তমাসো ভেরগাল্লো।