সোনার সুদিনে কারিগরদের দুর্দিন

টাইমস ন্যাশনাল
3 Min Read
সোনার অলংকারে কারুকার্য করছেন কারিগর। ছবি: টাইমস
Highlights
  • ‘নিত্যপণ্যের দাম বাড়লেও জীবন ধারণের জন্য সেগুলো কিনতে মানুষ বাধ্য হয়। স্বর্ণ মানুষের কাছে বিলাসী পণ্য। অনেকে আবার ভবিষ্যতের সঞ্চয় হিসেবে স্বর্ণ কেনেন। কিন্তু সোনার দাম এতোই বেড়েছে যে, মধ্য ও নিম্নবিত্তদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে।’

যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত শুল্ক আরোপে অস্থির বিশ্বের সোনার বাজার। প্রভাব পড়েছে দেশের বাজারেও। দিন দিন ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাচ্ছে সোনালী ধাতু। সেই সঙ্গে ক্রেতার অভাবে পথে বসতে চলেছেন অনেক স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা। আর কাজের অভাবে প্রথম আঘাত এসেছে স্বর্ণকারদের ওপর।

বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) বলছে, চলতি বছর জুলাই মাস পর্যন্ত দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম সমন্বয় হয়েছে মোট ৪৫ বার। যার মধ্যে দাম বেড়েছে ২৯ বার, আর কমেছে কেবল ১৬ বার।

বর্তমানে দেশের বাজারে প্রতি ভরি (১১.৬৬৪ গ্রাম) ২২ ক্যারেটের স্বর্ণ বিক্রি হচ্ছে এক লাখ ৭১ হাজার ৬০১ টাকায়। এ ছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি এক লাখ ৬৩ হাজার ৭৯৮ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি এক লাখ ৪০ হাজার ৪০০ টাকা এবং সনাতন প্রতি ভরি স্বর্ণ এক লাখ ১৬ হাজার ১২৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

স্বর্ণের এমন আকাশ্চুম্বি দামের পেছনে কারণ জানালেন যশোর জুয়েলারি সমিতির সভাপতি রকিবুল ইসলাম চৌধুরী সঞ্জয়। তিনি বলেন, ‘সোনার দাম বিশ্ববাজারের সাথে গভীরভাবে সম্পর্কিত। বিশ্ববাজারে সোনার দামে প্রভাব ফেলে বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কারণ। দেশের বাজারও এতে প্রভাবিত হয়।’

‘এছাড়াও, স্থানীয় চাহিদা, ডলারের মূল্য, মুদ্রাস্ফীতি, এবং অন্যান্য কারণও সোনার দাম নির্ধারণে ভূমিকা রাখে। তবে মূল খেলোয়াড় যুক্তরাষ্ট্র। তাদের মোড়লিপনায় সকালে সোনার এক দাম বিকালে আরেক দাম। একারণে আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।’

যশোর জেলা জুয়েলারি সমিতি ও কারিগর শ্রমিক ইউনিয়ন সূত্রে জানা যায়, জেলা শহরে ২৬৫টি সোনার দোকান রয়েছে। এসব দোকানে কাজ করেন হাজারের বেশি কারিগর।

তারা বলেন, ‘গত বছরও প্রতি মাসে অন্তত ১০ কোটি টাকার সোনা বিক্রি হতো। মাস ছয়েক ধরে দুই কোটি টাকার জিনিসপত্রও বিক্রি হচ্ছে না। মূলত দাম বাড়ায় ক্রেতারা আগ্রহ হারিয়েছেন।’

যশোর শহরের কাপুড়িয়াপট্টির পিসি চন্দ্র জুয়েলার্সের সত্ত্বাধিকারী কমল দাস বলেন, ‘নিত্যপণ্যের দাম বাড়লেও জীবন ধারণের জন্য সেগুলো কিনতে মানুষ বাধ্য হয়। স্বর্ণ মানুষের কাছে বিলাসী পণ্য। অনেকে আবার ভবিষ্যতের সঞ্চয় হিসেবে স্বর্ণ কেনেন। কিন্তু সোনার দাম এতোই বেড়েছে যে, মধ্য ও নিম্নবিত্তদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। সাধ থাকলেও অনেকের সাধ্য নেই। এখন ব্যবসাও অনেক কমে গেছে।’

‘ক্রেতা না থাকায় কাজ নেই, মজুরিও নেই’ বলে জানান নিউ বাণী জুয়েলার্সের কারিগর কাজল। তিনি বলেন, ‘আগে ১০ হাজার টাকায় অন্তত কানের দুল, আংটি বানানো যেত। এখন সেগুলোও সোনার হরিণ। ক্রেতারা জুয়েলার্সে আসবে কিভাবে। ব্যবসার অবস্থা খুব খারাপ। চরম দুর্দিনে কারিগরদের দিন কাটছে।’

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *