সুদানের দারফুর অঞ্চলে চলমান সংঘাতের মধ্যে গত দুই দিনে সংঘটিত তীব্র লড়াইয়ে অন্তত ৩০০ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সংস্থা (ওসিএইচএ)। আফ্রিকার দেশটিতে দু’বছরব্যাপী গৃহযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে এসে সহিংসতা নতুন মাত্রা নিয়েছে। খবর এপি/ইউএনবি’র।
উত্তর দারফুরের দুটি দুর্ভিক্ষপীড়িত ও বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠীর ক্যাম্প জামজাম ও আবু শোরুক এবং এর পাশ্ববর্তী রাজধানী এল ফাশেরে গত শুক্রবার ও শনিবার (১১ ও ১২ এপ্রিল) সুদানের বিদ্রোহী গোষ্ঠী ‘র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স’ (আরএসএফ)-এর হামলায় প্রথমে ১০০ জন নিহত হওয়ার কথা জানা গিয়েছিল। নিহতদের মধ্যে ২০ শিশু ও ৯ জন ত্রাণকর্মী ছিলেন।
তবে সোমবার ওসিএইচএ জানায়, স্থানীয় সূত্রের বরাতে নিহতের সংখ্যা ৩০০ ছাড়িয়েছে। এ সংক্রান্ত তথ্য স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিল সুদানের সামরিক ও আধাসামরিক বাহিনীর মধ্যে বিরোধ থেকেই গৃহযুদ্ধের সূচনা। এরপর থেকে দারফুরসহ বিভিন্ন অঞ্চলে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে। জাতিসংঘ বলছে, এই সংঘাতে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ২৪ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন, যদিও প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে বলে ধারণা।
সম্প্রতি সুদানের সেনাবাহিনী রাজধানী খার্তুম পুনর্দখল করলে আরএসএফ পাল্টা হামলা শুরু করে। এর জেরে দুনিয়ার সবচেয়ে ‘ভয়াবহ মানবিক সংকট ও বাস্তুচ্যুতি’ ঘটছে দেশটিতে। এটিই বিশ্বের একমাত্র দেশ, যেখানে এখন দুর্ভিক্ষ চলছে।
জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টেফান ডুজারিক জানান, জামজাম ক্যাম্পে অবস্থিত একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কাজ করার সময় ‘রিলিফ ইন্টারন্যাশনাল’-এর ১০ কর্মী নিহত হয়েছেন।
মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) লন্ডনে গৃহযুদ্ধের দু’বছর পূর্তিতে আয়োজিত সম্মেলনে ২০টিরও বেশি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নিচ্ছেন। এই সম্মেলন থেকে শান্তি প্রচেষ্টায় ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপের আহ্বান জানাবে জাতিসংঘ।
অন্যদিকে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ মঙ্গলবার সুদানের পরিস্থিতি নিয়ে জরুরি বৈঠক ডেকেছে।
জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থা জানায়, আরএসএফ’র হামলায় জামজাম ক্যাম্প থেকে গত দু’দিনে ৬০ থেকে ৮০ হাজার পরিবার বাস্তুচ্যুত হয়েছে। বেশিরভাগই এখনও সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন এল ফাশারে অবস্থান করছে, যা এক বছরেরও বেশি সময় ধরে আএসএফ-এর অবরোধে আছে।
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার আফ্রিকা অঞ্চলের পরিচালক মামাদু দিয়ান বালদে জানান, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় প্রায় এক কোটি ৩০ লাখ সুদানি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন, যার মধ্যে ৪০ লাখ অন্য দেশে আশ্রয় নিয়েছেন।
তিনি জানান, শরণার্থী ও আশ্রয়দাতা দেশগুলোর সহায়তায় জাতিসংঘের ১.৮ বিলিয়ন ডলারের অর্থ সহায়তার আবেদন এখনো মাত্র ১০ শতাংশ পূরণ হয়েছে। প্রয়োজনীয় অর্থ না পেলে বাস্তুচ্যুত জনগণ দক্ষিণ আফ্রিকা, পূর্ব আফ্রিকা, উপসাগরীয় দেশ এবং ইউরোপের দিকে সরে যেতে পারেন বলে সতর্ক করেন তিনি।